গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকা।
একজন গর্ভবতী মাকে নিজের স্বাস্থ্য ও তার গর্ভস্থ ভ্রূণের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হয় বলে গর্ভবতী মাদের একটি আদর্শ খাবার রুটিন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে যেন পর্যাপ্ত শক্তি থাকে ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও যেন ঠিক থাকে এজন্য প্রথম থেকেই একটা আদর্শ খাবার রুটিন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
একটি আদর্শ খাবার তালিকা কেমন হবে তা বোঝার আগে জানা উচিত এই সময়ে মায়েদের কী কী খাওয়া উচিত এবং কী খাওয়া উচিত নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন তিনশো থেকে পাঁচশো অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন।
এই অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজনের সাথে এক হাজার দুইশো মিলিগ্রামের ক্যালসিয়াম, ছয়শো থেকে আটশো মাইক্রোগ্রাম ফোলেট প্রয়োজন। যা শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাদ্যের মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যের তালিকাটি সম্পর্কে-
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
শিশুর দাঁত ও হাড়ের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
গর্ভকালীন সময়ে মা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করে তবে শিশুর বিকাশে ব্যহত হবে।
এমনকি ক্যালসিয়ামের অভাবে মায়ের কোমর ও পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য দৈনিক ১২০০mg ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা প্রয়োজন।
দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন- দুধ, দই, পনির ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া মাছ ও মাছের কাটায় থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম।
মটরশুঁটি, ব্রোকলি, সরিষার শাক, মটরশুটি, বিভিন্ন ধরণের বাদামও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
এরপরও ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভবতী মাকে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে দেওয়া হয়।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:
হিমোগ্লোবিন আকারে আমাদের রক্তে অক্সিজেন বহন করার জন্য আয়রন অপরিহার্য।
গর্ভাবস্থায় দেহকে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের চাহিদা মেটাতে রক্তের পরিমাণ বাড়ানো দরকার, তাই ডায়েটে আরও বেশি আয়রন অপরিহার্য।
অনেক শিশুর জন্মের পর থেকেই হিমোগ্লোবিনের অভাব বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় আয়রনের ঘাটতির কারণে। তাই গর্ভাবস্থায় মাকে প্রচুর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
কচু শাক, লাল শাক, পালং শাক, কাঁচা কলা, ডিমের কুসুম, ডালিম, বিট, বাদাম, ছোলা, খেজুর, কলিজা, শিং মাছ, মাগুর মাছ ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
গর্ভাবস্থার পরে মা যদি রক্তাল্পতা হয় তবে প্রসবের সময় প্রচুর রক্ত হারানোর ঝুঁকি থাকে।
ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার:
ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড এক ধরণের ভিটামিন “বি” কমপ্লেক্স জাতীয় উপাদান।
গর্ভের সন্তানের হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক সুস্থ্য রাখতে ও অঙ্গহানি রোধ করতে ফলিক অ্যাসিড একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।
ফলিক অ্যাসিড গর্ভের শিশুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
বিশেষত, এটি স্বাস্থ্যকর কোষ বিভাজনকে সমর্থন করে এবং শিশুর জন্মগত ত্রূটিগুলোর ঝুঁকি হ্রাস ও ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশকে নিশ্চিত করে।
বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি, ডিম, সরিষা, তিল, সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম এবং বীজ ফোলেটের ভালো উৎস।
জিঙ্ক:
জিঙ্ক শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ, সেলুলার ক্ষতি এবং প্রোটিন সংশ্লেষ সহ বেশ কয়েকটি জৈবিক ক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করে।
গর্ভাবস্থায় জিঙ্কের পরিমাণ কম হলে কম ওজনের শিশু জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এছাড়া দেহের বৃদ্ধি রোধ বা বামনত্ব হতে পারে। এছাড়াও জিংকের অভাবে পরবর্তীতে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে।
মুরগী, চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য, মটরশুটি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, আদা, পেঁয়াজ, চাল, ডিম, ফুলকপি, সবুজ শিম, টমেটো ইত্যাদিতে জিঙ্ক রয়েছে।
আয়োডিন:
আয়োডিন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও শারীরবৃত্তীয় কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এর অভাবে শিশুর প্রতিবন্ধী হতে পারে।
তাই গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ, দুধ, দই, পনির, ডিম, কলা, চিংড়ি, শিমের বীজ ও কলার মোচা ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর আয়োডিন।
ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ ডায়েট:
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ভিটামিন “এ” প্রয়োজনীয়।
সকল প্রকার রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে ভিটামিন “এ”। এছাড়া মলা ও ঢেলা মাছ, ডিমের কুসুমেও এটি বিদ্যমান।
ভিটামিন “ডি” সমৃদ্ধ ডায়েট:
ভিটামিন “ডি” একটি ফ্যাট সলিউবল সিকুস্টারয়েড। যার কাজ হচ্ছে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করা। এই ভিটামিন এর অভাবে শিশুদের হাড় ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না এবং হাড় বাঁকা হয়ে যায়।
এই ভিটামিনের সবচাইতে বড় উৎস হল সূর্যালোক। এছাড়াও ভোজ্য উৎস যেমন- মাছ, মাশরুম, ডিমের কুসুম ও দুগ্ধজাত পণ্যেও এই ভিটামিন মেলে।
পানি:
গর্ভবতী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি কম পক্ষে ২-৩ লিটার পান করা খুবই প্রয়োজনীয়।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি মাতৃগর্ভের তরল (amniotic fluid) তৈরি করতে, অতিরিক্ত রক্ত উৎপাদন করতে, নতুন টিস্যু তৈরি করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
তাই গর্ভবতী মায়েদের অন্য লোকেদের তুলনায় বেশি পানি পান করতে হবে।