জ্বর হলে যেসব খাবার খাবেন।

স্বাভাবিকই জ্বর হলের আমাদের কিছু খেতে ইচ্ছা করে না। এ সময় মধুকেও যেন চিরতার রস বলে মনে হয়।

তখন স্বাভাবিক সব খাবার বন্ধ করে খেতে হয় পথ্য ধরণের সব খাবার। আর তা মুখে না রুচলেও এক প্রকার জোর করেই খেতে হয়।

তবে জ্বর হলে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি জ্বর সারাতেও সাহায্য করবে। এছাড়া এ সময় অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিত।

জ্বর হলেই যে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে বা ঔষধ খেয়ে জ্বর নামাতে হবে সে রকমতা নয়। বেশিরভাগ জ্বরই ভাইরাসজনিত।

তাই অনেক সময় ঔষধ না খেয়েও শুধু ঘরোয়া সেবার মাধ্যমেও জ্বর কমানো সম্ভব।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু খাবার সম্পর্কে যে খাবারগুলি জ্বরের রোগীর জন্য ভালো-

প্রচুর তরল পান করুন:


drinking-water
মৌসুমী জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে প্রথমেই উপদেশ দেবে প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করার জন্য। কারণ জ্বরে তাপমাত্রা বাড়লে শরীর দ্রুত পানিশূন্যতার দিকে যেতে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানির সরবারহ খুবই জরুরি।

কুসুম গরম পানি, ফলের জুস, শরবত, ডাবের পানি, চা যেকোন তরল খাবারেই বাধা নেই। জ্বর থাকলে প্রতিদিনের লক্ষ্য হবে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা।

বেশি তরল পান করলে শরীর থেকে জীবাণু ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যাওয়া সহজ হয়।

ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার:


orange-juice
ভিটামিন “সি” সাধারণ সর্দি-জ্বর প্রতিরোধ করে। তাই এ সময় সর্দি-জ্বর এড়াতে বেশি পরিমাণে বাতাবি লেবু, কমলালেবু, লটকন, কামরাঙ্গা, পেঁয়ারা, আনারস, আমলকী ও অন্যান্য মৌসুমী ফলসহ ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে।

তাই জ্বরের সময় যতবেশি সম্ভব ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

বিভিন্ন ফল খান:


kiwifruit
ফল ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারে। কিছু ফলের মধ্যে অ্যান্থোসায়ানিনস (anthocyanins) নামে উপকারী যৌগ থাকে যা ফলগুলিকে লাল, নীল এবং বেগুনি রঙ দেয়।

অ্যান্থোসায়ানিনস (স্ট্রবেরি, জাম, ডালিম) সমৃদ্ধ ফলের শক্তিশালী এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিভাইরাল এবং ইমিউন-বুস্টিং প্রভাব রয়েছে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যান্থোসায়ানিনস সাধারণ ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে বাধা দিতে পারে। এছাড়া শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে।

ভেষজ চা:



তুলসী, আদা, লেবু লবঙ্গ দিয়ে চা জ্বরের রোগীদের জন্য খুব উপকারী। ১ কাপ পানিতে ৮ থেকে ১০ মিনিট ধরে আদা ও লবঙ্গ সেদ্ধ করুন।

আবার কাপে তুলসী পাতা ও লেবুর রস দিন। তারপর আদা ও লবঙ্গ সেদ্ধ পানি কাপে ঢালুন। চাইলে মধু মেশাতে পারেন।

এই চা জ্বরের কারণে হওয়া গলা ব্যথা, খুশখুশি কাশি ও মাথাব্যথার ভেষজ ঔষধ হিসাবে কাজ করবে। এছাড়া শুধু তুলসী পাতা দিয়ে চা করে খেতে পারেন।

চিকেন স্যুপ:


soup
চিকেন স্যুপ কয়েকশ বছর ধরে সাধারণ সর্দি-জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ভিটামিন, খনিজ, ক্যালরি ও প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, যা অসুস্থ্য থাকাকালীন সময়ে আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণ প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবারহ করে।

পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জ্বর থেকে দ্রুত আরোগ্যলাভে চিকেন স্যুপ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ভাইরাল ফ্লুর বিরুদ্ধে।

চিকেন স্যুপ হল তরল এবং ইলেক্ট্রলাইটের একটি ভালো উৎস। এছাড়া মুরগিতে অ্যামিনো অ্যাসিড সিস্টাইন থাকে।

এটি এন-এসিটেল-সিস্টাইন, সিস্টিনের এক রূপ যা শ্লেষ্মা ভেঙ্গে দেয় এবং এতে এন্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এফেক্টসও রয়েছে।

সবজির স্যুপ:


অসুস্থ্য অবস্থায় দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ এর চাহিদা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। শাক সবজি ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারে পূর্ন। বিশেষত ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “কে” এবং ফোলেটের ভালো উৎস।

যেহেতু জ্বর হলে রুচি থাকে না, তাই অনেকেই ঠিকমতো খাবার খেতে পারে না। সবজি ভালো মতো সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে তার সঙ্গে যদি আদা যোগ করা হয় তবে সেই পানিও রোগীর জন্য অনেক উপকারী।

রসুন:


Garlic
রসুন বহু শতাব্দী ধরে ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এন্টি-ভাইরাল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের কারণে।

এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে পারে। কয়েকটি অধ্যায়ন দেখা গেছে যে রসুন সর্দি-জ্বর হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে সর্দি এবং জ্বরের তীব্রতা হ্রাস করতে পারে।

ডাবের পানি:


coconut_waater
অসুস্থ হলে সবার আগে করণীয় হলো হাইড্রেট থাকা। জ্বর হলে প্রচুর ঘাম হয় বমিভাব এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। তাই এই সময় হাইড্রেশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই সময় নিজেকে হাইড্রেট রাখতে ইলেক্ট্রোলাইট পানি বেছে নিন অর্থাৎ যে পানীয় পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে।

এমন একটা ইলেক্ট্রোলাইট পানি হচ্ছে ডাবের পানি। জ্বর হলে ডাবের পানি পান করুন এটি আপনার প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে পানিশূন্যতা দূর করে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

কিসমিস:

কিসমিস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর জন্য খুবই কার্যকরী। জ্বরের সময় মাঝেমধ্যেই একটি দুটি করে কিসমিস খাওয়া ভালো।

কারণ এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন “সি”। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরে এনার্জি সরবরাহ করে মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে এটি বেশ কার্যকরী।

দই:


জ্বর হলে দই একটি দুর্দান্ত খাবার। প্রতি কাপে ১৫০ ক্যালোরি এবং ৮ গ্রাম প্রোটিন সরবারহ করে। দইয়ে উপকারী প্রোবায়োটিকও থাকে।

দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে যেকোনো সংক্রামক রোগের আশংকা কিছুটা কমে। গরমের সময়ে সংক্রমণের হার বাড়ে তাই এই সময়ে দই খাওয়া বেশি জরুরি।

মধু:


Honey
মধুতে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব রয়েছে। এর শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাবের কারণে প্রাচীন মিশরীয়রা ড্রেসিংয়ের জন্য মধু ব্যবহার করতো।

মধু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ মধুতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম রয়েছে যা শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে।

জ্বর হলে এক গ্লাস দুধ বা পানি অথবা ১ কাপ চা এর সাথে আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। উপকার পাবেন।

আদা:


Ginger
আদা জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যথা ও সর্দি দূর করতে সাহায্য করে।

এছাড়া গলায় জমে থাকা কফ দূর করতেও সাহায্য করে। এক্ষেত্রে মুখে এক টুকরো আদা রেখে দিতে পারেন কিংবা আদা চা পান করতে পারেন।

গরম চা:


tulsi_tea
সর্দি এবং জ্বর এর সাথে জড়িত লক্ষণ গুলি কমানোর জন্য চা একটি জনপ্রিয় প্রতিকার। সেটা হতে পারে আদা চা কিংবা লাল চা বা গ্রিন টি এমন কি মসলা চাও হলে হবে।

চিকেন সুপের মত গরম চা প্রাকৃতিক ডিকনজেট্যান্ট (decogestant) হিসেবে কাজ করে। চাতে ট্যানিনস নামক এক ধরণের পনিফেলন থাকে যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি এন্টিভাইরাল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে চা জ্বরের উপসর্গগুলি কমিয়ে আনে পাশাপাশি কাশি গলাব্যথা উপশম করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মরিচ:


chili hot
মরিচের মত মসলাদার খাবারে ক্যাপসাইসিন (capsaicin) থাকে। কয়েকটি গবেষণায় পরীক্ষা করা হয়েছে ক্যাপসাইসিন শ্লেস্মাকে পাতলা করে বের করতে সাহায্য করে।

জ্বর হলে অনেক সময় শ্লেস্মার সমস্যা হয়। তাই এই সময় ঝাল জাতীয় খাবার শ্লেস্মার সমস্যা দূর করতে পারে। ক্যাপসাইসিনের বেশ কয়েক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

এছাড়াও মরিচের মধ্যে থাকা ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “সি” সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে আপনার অনাক্রম্যতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।