সুস্বাদু মাছ চিংড়ি আয়রনের অভাব দূর করে ও মস্তিষ্কের জন্য ভালো।

চিংড়ি খুবই সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি মাছ। এই সুস্বাদু মাছটির রয়েছে হাজারো মজাদার পদ যেমন -চিংড়ি মাছের কোর্মা, চিংড়ির বিরিয়ানি, লাউ দিয়ে চিংড়ি, কঁচুর মুখী দিয়ে চিংড়ি, পুঁই চিংড়ির পাকোড়া, দই চিংড়ি, ডাব চিংড়ি, চিংড়ি পিঁয়াজু, চিংড়ি চপ, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, চিংড়ি ভর্তা আরো কত কি।

এসব জিভে পানি আনা খাবার ছাড়াও যেকোন শাকে চিংড়ি দিয়ে রান্না করলে শুধু শাক দিয়েই পেলেট ভর্তি ভাত শেষ হবে নিমিষেই। চিংড়ি ইংরেজিতে shrimp এবং বৈজ্ঞানিক নাম Caridea.

চিংড়ি মাছ না পোকা?

পোকা বলতে আমরা যাদের চিনি তেলাপোকা, গুবরে পোকা, ঘাস ফড়িং বা বিচ্ছু হল আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী।

চিংড়ির অবস্থান এই পোকাদের সাথে নয়। চিংড়ি (গলদা, বাগদা, লবস্টার, কুচো চিংড়ি, কাঁকড়া) হল আর্থ্রোপোডা পর্বের ম্যালাকোস্ট্রাকা ক্লাসের অমেরুদণ্ডী প্রাণী।

চিংড়ি খাওয়া হয় কি শুধুই স্বাদের জন্য? এর কোন উপকারিতা নেই! আছে এর উপকারিতা আছে। চিংড়ির একটি চিত্তাকর্ষক পুষ্টি প্রোফাইল আছে।

চিংড়ি আয়োডিনের অন্যতম সেরা উৎস, আয়োডিন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ অনেকের শরীরে এর ঘাটতি থাকে। থাইরয়েড কার্যকারিতা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য আয়োডিনের প্রয়োজন হয়।

চিংড়িতে অস্ট্রাক্যানথিন (astaxanthin) অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ছাড়াও এটি ওমেগা-6 এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস, যার বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।

এতে ক্যালোরি যথেষ্ট কম এবং কোন কার্বসও থাকে না। চিংড়িতে থাকা প্রায় ৯০% ক্যালোরি প্রোটিন থেকে আসে এবং বাকিগুলি ফ্যাট থেকে আসে।

সকলের প্রিয় চিংড়ি প্রতিদিনের সেলেনিয়ামের চাহিদার ৫০% পূরণ করতে পারে যা প্রদাহ হ্রাস করতে এবং হার্টের রোগ কমাতে সহায়তা করে।

চিংড়ির পুষ্টি উপাদান

নিচে চিংড়ির পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি: ৮৪
  • প্রোটিন: ১৮ গ্রাম
  • সেলেনিয়াম: ৪৮%
  • ভিটামিন বি-12: ২১%
  • আয়রন: ১৫%
  • কপার: ৯%
  • ম্যাগনেসিয়াম: ৭%

চিংড়ির উপকারিতা

চিংড়িতে ১২% ফসফরাস এবং ১১% নায়াসিন আছে। নিচে চিংড়ির স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

কোলেস্টেরল উচ্চ:

চিংড়ি প্রায়শই উচ্চ কোলেস্টেরলের সামগ্রীর জন্য খারাপ বলে মনে করা হয়। ৮৫ গ্রাম চিংড়িতে ১৬৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। যা অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের তুলনায় ৮৫% বেশি।

চিংড়ি রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

তবে গবেষণা দেখায় যে এটি বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। কারণ রক্তের বেশিরভাগ কোলেস্টেরল আপনার লিভার দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং আপনি যখন বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার খান, তখন লিভার কম উৎপাদন করে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রাপ্তবয়স্করা যারা প্রতিদিন ৩০০ গ্রাম চিংড়ি খেয়ে থাকেন তাদের “ভাল” HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা ১২% বৃদ্ধি পেয়ে তাদের ট্রাইগ্লিসারাইড ১৩% কমেছে। এই দুটিই হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:

চিংড়িতে অস্ট্রাক্যানথিন (astaxanthin) নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। অ্যাস্টাক্সেথিন শৈবালের একটি উপাদান যা চিংড়ি খাই।

এই কারণে, চিংড়ি অস্ট্রাক্যানথিন এর প্রধান উৎস। অ্যাস্টাক্সাথিন কোষের ক্ষতি থেকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।

বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাস্টাক্সাথিন ধমনীগুলিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

এটি “ভাল” HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

মস্তিষ্কের জন্য ভালো:

চিংড়িতে থাকা অস্ট্রাক্যানথিন (astaxanthin) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মস্তিষ্কের কোষগুলির ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।

যা প্রায়শই স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং নিউরডিজেনারেটিভ রোগের দিকে পরিচালিত করে, যেমন আলঝাইমার।

আয়রনের অভাব দূর করে:

প্রতি ১০০ গ্রাম চিংড়িতে ১৫% আয়রন আছে। নিয়মিত চিংড়ি মাছ খেলে আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দূর হয়ে যায়। আয়রনের অভাবে অনেক সময় আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

এই চিংড়ি মাছ আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে পারে খুব সহজেই। এছাড়া চিংড়ি আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন বা রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে পারে।

থাইরয়েডের সমস্যা দূর করে:

স্বাস্থ্যকর হাড়, স্নায়ু স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কপার কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

চিংড়িতে ৯% কপার আছে। চিংড়ি থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে:

চিংড়িতে ৭% ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় ম্যাগনেসিয়াম টাইপ-২ ডায়বেটিসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

চিংড়ি থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়

চিংড়ি, চিনাবাদাম, গাছ বাদাম, গম, দুধ ইত্যাদি খাবারগুলি থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়।

অনেকের চিংড়ি খেলে অ্যালার্জি হয় কারণ এতে ট্রপোমোসিন আছে। ট্রপোমোসিন একটি প্রোটিন। তাই যাদের অ্যালার্জি তারা চিংড়ি খাবেন না।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: