কচু শাক রক্তসল্পতা দূর করতে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী।

আমাদের সবার অতি পরিচিত সুস্বাদু একটি শাক হলো কচু শাক। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় এই কচু শাক। বাড়ির উঠানে, বাগানে, রাস্তার পাশে, বিলের ধারে, জমিতে যেখানে সেখানে যত্ন ছাড়া বেড়ে ওঠে কচু শাক। কঁচু শাক রয়েছে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি”, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।

কচু শাককে ইংরেজিতে Arum Spinach বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে অধিক আঁশ সমৃদ্ধ ও আয়রনের উৎস এই শাকটিকে অবহেলা করা হয় না। এটি মানব দেহের ক্যালসিয়াম ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে রক্তের হিমোগ্লোবিন দ্রুত বৃদ্ধি করে।

গর্ভবতী মায়েরা থেকে শুরু করে সব বয়সী মায়েদের শরীরে আইরন-এর ঘাটতি একটি কমন সমস্যা। নিয়মিত কচুশাক খেয়ে আমরা সহজেই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি।

কচুশাকের গোড়া, ডগা, পাতা তিনটিই সবজি হিসাবে খাওয়া যায়। পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, কাঁচা-পাকা ঝাঁল, নারকেল কোরা আর নামানোর আগে সামান্য একটু চিনি। আর কিছু লাগবে না। শুধু কচু শাক দিয়ে কয়েক প্লেট ভাত খাওয়া শেষ হয়ে যাবে।

আর একটি কথা না বললে নয় ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচু শাক। খুবই সুস্বাদু একটি খাবার। এছাড়া কচু শাক চিংড়ি মাছ দিয়ে খেতেও খুব ভালো লাগে।

কচু শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা

কচু শাককে আয়রনের পাওয়ার হাউজ বলা যায়। নিচে কচুশাকের স্বাস্থ্য সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হল–

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য:

কচু শাকে থাকা নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক সহজলভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচুশাক খেতে পারেন। এছাড়া ডাক্তার গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় কচু শাক রাখার পরামর্শ দেন।

কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:

আমরা সবাই জানি, আঁশ বা ফাইবার যুক্ত খাবার মানে, কোষ্ঠকাঠিন্যের উন্নতি। পাচনতন্ত্রের শান্তি অর্থাৎ প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার পাচনতন্ত্রে আটকে থাকে না। সহজেই মল হয়ে বেরিয়ে যায়। কচুশাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে। তাই কচুশাক কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।

আয়রনের চাহিদা পূরণ করে:

মানব শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের চাহিদা পূরণ করার জন্য কচু শাকের কোন বিকল্প নেই। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে অর্থাৎ যারা রক্তসল্পতায় ভুগছেন তারা সহজলভ্য এই শাকটি বেছে নিতে পারে।

হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

আঁশযুক্ত খাবার হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কচু শাকে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার রয়েছে যা আমাদের অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই আমরা হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কচু শাক খেতে পারি।

হাড় শক্ত করে:

ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন, দাঁতের গঠনে কাজ করে এবং এদের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। কচু শাকে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

চোখের জন্য ভালো

কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে “ভিটামিন এ” রয়েছে। “ভিটামিন এ” আমাদের চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চোখের যেকোন সমস্যায় যেমন – রাতকানা রোগে, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে কচু শাক কার্যকরী।

সতর্কতা

মাঝে মাঝে সামান্য গলা চুলকানো ছাড়া কচু শাকের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে কচু শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।