নারিকেল ওজন কমাতে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উপকারী।

নারিকেল খুবই সুস্বাদু একটি খাবার। শাক, ডাল, মাছভুনা, চাটনী রান্নাতে নারিকেল তো লাগেই। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার ও পিঠা তো রয়েছেই যেগুলো নারিকেল ছাড়া তো হবেই না।

যেমন – নারিকেল নাড়ু, খেজুর রসের পায়েস, কুলি পিঠা, পাটিসাপ্টা পিঠা, রসে ভিজানো পিঠা ইত্যাদি।

শীতকালে নারকেল ভেঙে রোদে শুকিয়ে নারকেলে তেল তৈরি করা হয়। নারকেলের তেল চুল ও ত্বকের পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। অন্যান্য অনেক ফলের তুলনায় নারকেলে বেশির ভাগই ফ্যাট।

এতে প্রোটিন, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং অল্প পরিমাণে ভিটামিন “বি” রয়েছে। নারকেলে ম্যাঙ্গানিজ বেশি, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও কোলেস্টেরল বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয়।

নারিকেল, নারকোল বা নারকেল ইরেজিতে: Coconut এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Cocos nucifera. এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে।

এই ফ্যাটের বেশির ভাগই মাঝারি-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড (MCT) রূপে থাকে। আমাদের শরীর MCT ফ্যাটসমূহকে সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত দ্বারা শোষণ করে এবং দ্রুত শক্তির জন্য ব্যবহার করে।

যাদের স্থূলত্বের সমস্যা আছে তাদের উপর এক পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে প্রাণীর খাবার থেকে লং-চেইন স্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলির পরিবর্তে MCT ফ্যাট খাওয়া হলে তা স্থূলত্বের সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে।

নারকেলের পুষ্টি উপাদান

নিচে নারকেলের কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি: ২৮৩
  • প্রোটিন: ৩ গ্রাম
  • কার্বহাইড্রেট: ১০ গ্রাম
  • ফ্যাট: ২৭ গ্রাম
  • ফাইবার: ৭ গ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ: ৬০% (DV)
  • কপার: ৪৪% (DV)
  • পটাশিয়াম: ৬% (DV)
  • আয়রন: ১১% (DV)
  • জিঙ্ক: ১০% (DV)

নারকেলের শাঁসের উপকারীতা

প্রাকৃতিকভাবে অতিসুরক্ষিত এই ফল টি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিচে এর স্বাস্থ্য উপকারীতা নিচে আলোচনা করা হলো –

হার্টের স্বাস্থ্য বাড়িয়ে তুলতে পারে:

নারিকেলের শাঁসে নারকেল তেল থাকে, যা HDL কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে এবং LDL(খারাপ) কোলেস্টেরল হ্রাস করতে পারে। যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

৩৫ জন প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৪ সপ্তাহের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১ চামচ নারকেল তেল প্রতিদিন দুই বার গ্রহণ করার ফলে HDL কোলেস্টেরল উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

ওজন কমাতে পারে:

নারকেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফলের এমসিটি (MCT) পেটভরিয়ে রাখতে, ক্যালোরি এবং ফ্যাট বার্ন করতে পারে।

এসব কিছুই ওজন কমাতে সাহায্য করে। নারকেলের শাসে থাকা উচ্চ ফাইবার পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমাতে পারে।

৮ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৯০ দিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম নারকেল খেয়েছিল তার উল্লেখযোগ্য হারে ওজন কমেছিল।

হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

নারকেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এতে হজম স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

নারকেলে থাকা MCT আপনার অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়াকে শক্তিশালী করতে পারে, যা প্রদাহ এবং বিপাকীয় সমস্যা দূর করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

নারকেলে ম্যাঙ্গানিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করতে পারে।

নারকেলে থাকা MCT এর অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং টিউমার-দমনকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

মস্তিষ্কের জন্য ভালো:

নারকেলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান MCT অ্যালঝাইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

সতর্কতা

কোন কিছু অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে। নারকেলে যথেষ্ট পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। ফলে অতিরিক্ত নারকেল খেলে আবার হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

১১,০০০-এরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণের ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি এর সাথে যুক্ত ছিল।

এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে নারকেল খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র: হেলথলাইন, মেডিকেলনিউজটুডে