প্রোটিনের অভাব জনিত লক্ষণ কোনগুলি।

প্রোটিন হল একটি জটিল ম্যাক্রোনাট্রিয়েন্ট যা নির্দিষ্ট খাবারে পাওয়া যায়, যেমন প্রাণিজ খাবার, সবজি এবং ফলমূল। প্রোটিন পেশী, হাড়, ত্বক, চুল, নখ, এনজাইম এবং হরমোনগুলির বিল্ডিং ব্লক এবং এটি শরীরের সমস্ত টিস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রোটিনের ঘাটতি, যাকে হাইপোপ্রোটিনেমিয়াও বলা হয়, সাধারণত সামগ্রিকভাবে কম প্রোটিন গ্রহণের সাথে আবদ্ধ থাকে। হরমোন থেকে শুরু করে পেশী পর্যন্ত আমাদের শরীরের প্রতিটি উপাদানের জন্যই প্রোটিন প্রয়োজন।

আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোষের জন্ম হচ্ছে। এই কোষ তৈরিতে প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রোটিন ঘাটতি আপনার শারীরিক কর্মক্ষমতা হ্রাস করে যা বেশ কিছু উপসর্গ দেখে সহজেই বুঝতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সেগুলো কি কি-

ফ্যাটি লিভার:

প্রোটিনের অভাব জনিত লক্ষণগুলির মধ্যে সাধারণ একটি লক্ষণ হল ফ্যাটি লিভার, বা লিভারের কোষগুলিতে ফ্যাট জমা। যদি সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তবে ফ্যাটি লিভারের রোগে পরিণত হতে পারে।

দুর্বল ও ক্লান্ত লাগা:

প্রোটিন শরীরে এনার্জি দেয়। তাতে কাজ করার ইচ্ছে জাগে। কিন্তু যদি শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকে তা হলে সারা দিন ক্লান্ত লাগতে পারে। ঘুম-ঘুম ভাব থাকতে পারে। সাধারণত যেমন ক্লান্ত লাগে, তার থেকে বেশিই ক্লান্তি আসতে পারে।

পেশিতে জোর না পাওয়া:

পেশি গঠনে ও মজবুত করতে সাহায্য করে প্রোটিন। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকে, তা হলে পেশিতে জোর থাকবে না। টিস্যু এবং দেহের ক্রিয়াকলাপ সংরক্ষণের জন্য কঙ্কালের পেশী থেকে প্রোটিন গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ, প্রোটিনের অভাব সময়ের সাথে সাথে পেশীগুলি নষ্ট করে দেয়। প্রবীণ পুরুষ ও মহিলাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সবচেয়ে কম পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে পেশী ক্ষতি বেশি ছিল।

হাড় দুর্বল হয়ে যায়:

পর্যাপ্ত প্রোটিন সেবন না করলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। প্রোটিন হাড়ের শক্তি এবং ঘনত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে। পোস্টম্যানোপজাল (postmenopausal) মহিলাদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রোটিন গ্রহণ হাড় ফাটলের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

খিদে বেড়ে যাওয়া:

প্রোটিন শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। যদি শরীরে এর ঘাটতি থাকে তা হলে শরীর খিদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে তা মেটানোর চেষ্টা করে।
এবার এই খিদেটা যদি কোনো প্রসেসড ফুড বা জাঙ্ক ফুড দিয়ে মেটানো হয়, তা হলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অল্পেই ঠান্ডা লেগে যাওয়া:

প্রোটিন আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি অ্যান্টিবডি নির্মাণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।। সুতরাং যখন শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হয় তখন ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রোটিনের ঘাটতি সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি করে।

চোখ এবং হাত ফুলে যাওয়া:

প্রোটিনের অভাবে দেহে ফোলাভাব তৈরি হতে পারে। আর এই সমস্যা থেকেই লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। প্রোটিন শরীরে নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। আর তাই প্রোটিনের অভাবে শরীরে জল জমতে শুরু করে, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যেতে শুরু করে। বিশেষত চোখ এবং হাতে ফোলাভাব বেশি নজরে পড়ে।

বাচ্চাদের মধ্যে বৃদ্ধি কমে যায়:

প্রোটিন কেবল পেশী এবং হাড়ের ভর বজায় রাখতে সহায়তা করে না। এটি দেহের বৃদ্ধির জন্যও প্রয়োজনীয়। সুতরাং, প্রোটিনের ঘাটতি বিশেষত বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকারক।

শৈশব অপুষ্টির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। দেখা গেছে কম প্রোটিন গ্রহণ করার ফলে শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই শিশুদের শরীরের যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ।

ত্বক এবং নখের সমস্যা:

ত্বক, চুল এবং নখ মূলত প্রোটিন দিয়ে তৈরি। প্রোটিনের ঘাটতি প্রভাব প্রায়শই ত্বক, চুল এবং নখের উপরে পরে। বাচ্চাদের মধ্যে একটি গবেষণায় দেখা গেছে ত্বক, লালচেভাবের কারণ ছিল প্রোটিনের অভাব।

প্রোটিনের অভাবে ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ আর শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের মসৃণতা নষ্ট হয়ে যায়।

চুল পাতলা হয়ে যাওয়া:

চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন একটি সাহায্যকারী উপাদান। চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা অনেক সময়ে বংশগত কারণেও হতে পারে। কিন্তু তা যদি বেশি পরিমাণে হতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

প্রোটিনের ঘাটতি থেকে চুলের সমস্যা দেখা দেয়। চুল উঠতে থাকে ক্রমাগত। পাতলা হয়ে গিয়ে টাক পড়ার অবস্থা হয়।

আমাদের প্রতিদিন কতটুকু প্রোটিন দরকার?

প্রত্যেকের প্রোটিনের চাহিদা একই রকম থাকে না। এটি শরীরের ওজন, পেশী ভর, শারীরিক কার্যকলাপ এবং বয়স সহ অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

প্রতিদিন শরীরের ওজনের প্রতি কেজিতে ০.৪ গ্রাম প্রয়োজন। একজন প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য প্রতিদিন ৬৬ গ্রাম, অ্যাথলেটদের জন্য প্রতি কেজিতে প্রোটিনের ০.৯ গ্রাম। মাছ, মাংস, ডিম, দুগ্ধজাতীয় পণ্য এবং ফলমূল প্রোটিনের সেরা উৎস।

রেফারেন্স: