লেবুর খোসা ত্বকের যত্নে, হার্ট ভালো রাখতে ও পিত্তথলির পাথর নিরাময়ে কার্যকরী।

লেবুর রস ব্যবহৃত হয় এবং লেবুর ছাল বা খোসা ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ফেলে দেওয়া অবহেলিত খোসা কতটা উপকারী সেটা কি আপনি জানেন?

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে লেবুর খোসা বায়োএকটিভ যৌগতে পূর্ণ যার অনেকগুলি স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।

লেবুর খোসা উচ্চ পরিমাণে ফাইবার এবং ৯% (DV) ভিটামিন “সি” সরবরাহ করে।

বিশ্বব্যাপী ভিটামিন “সি” এর সবচেয়ে ভালো উৎস হিসেবে ধরা হয় লেবুকে। লেবুতে এতটাই ভিটামিন “সি” থাকে যে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এবং ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

লেবু খেলে যতটা শারীরিক উপকার পাওয়া যায়, তার থেকে অনেক বেশি পাওয়া যায় লেবুর খোসা খেলে। এছাড়া স্বল্প পরিমানে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।

বেশ কিছু পরীক্ষার পর এ কথা পরিষ্কার যে লেবুতে যে পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে, তার থেকে প্রায় ৫-১০ গুণ বেশি রয়েছে লেবুর খোসায়।

সেই সঙ্গে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম যা নানাভাবে শরীরের উপকারে কাজে লেগে থাকে।

লেবুর খোসার স্বাস্থ্য উপকারিতা

আসুন জেনে নেওয়া যাক লেবুর খোসার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে –

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ:

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হল উদ্ভিদ যৌগ যা দেহে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেলুলার ক্ষতি রোধ করে।

ডি-লিমনেন (D-limonene) এবং ভিটামিন “সি” সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লেবুর খোসাতে বেশি পরিমানে থাকে।

ডি-লিমোনিনের মতো ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণের ফলে হার্টের রোগ এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিসের মতো কিছু রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

লেবুর খোসাতে থাকা ভিটামিন “সি” একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও উন্নত করে।

মৌখিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে:

দাঁতের গহ্বর এবং মাড়ির সংক্রমণ স্ট্রেপ্টোকোকাস মিউট্যান্স (Streptococcus mutans) এর মতো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট মৌখিক রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে লেবুর খোসা।

লেবুর খোসাতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা মাইক্রো অর্গানিজম বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।

একটি সমীক্ষায় গবেষকরা লেবু খোসার চারটি যৌগ চিহ্নিত করেছিলেন যার মধ্যে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ রয়েছে এবং কার্যকরভাবে মুখের খারাপ ব্যাকটেরিয়া এর সাথে লড়াই করতে পারে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

লেবুর খোসাতে বেশ কয়েকটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায়, এই খোসাটি উল্লেখযোগ্যভাবে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।

অন্য একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে লেবুর খোসার রস একটি ড্রাগ-প্রতিরোধী ছত্রাকের সাথে লড়াই করেছে যা ত্বকের সংক্রমণের কারণ হয়ে থাকে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে:

লেবুর খোসার ভিতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নিচে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে।

সেই সঙ্গে বলিরেখা কমে গিয়ে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। এই কারণেই তো বয়স ৩০ এর কোটা পরলেই প্রতিদিন লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে

লেবুর খোসাতে থাকা flavonoid এবং ভিটামিন “সি” রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারে।

৮২ টি সমীক্ষার পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১-২ গ্রাম ভিটামিন “সি” সাধারণ সর্দি কাশির তীব্রতা প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৮% এবং শিশুদের মধ্যে ১৪% হ্রাস করে।

হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে

উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্থূলত্ব হল হার্টের রোগের অন্যতম কারণ।

লেবুর খোসাতে ফ্ল্যাভোনয়েডস ভিটামিন “সি” এবং ফাইবার রয়েছে। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে ফ্ল্যাভোনয়েডস, লেবুর খোসাতে থাকা ভিটামিন “সি” এবং ফাইবার হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

৩৪৪,৪৮৮ জনের মধ্যে ১৪ টি সমীক্ষার পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে প্রতিদিন ১০ মিলিগ্রাম ফ্ল্যাভোনয়েডের বৃদ্ধি হার্ট রোগের ঝুঁকি ৫% হ্রাস করে।

এছাড়া ডি-লিমোনিন রক্তে শর্করার, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে, যখন HDL (ভাল) কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।

এন্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে

লেবু খোসায় বিভিন্ন ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

ফ্ল্যাভোনয়েড গ্রহণ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এবং ভিটামিন “সি” শ্বেত রক্ত কোষগুলি বৃদ্ধিকে সহায়তা করে, যা ক্যান্সারের কোষকে নির্মূল করতে সহায়তা করে।

একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ডি-লিমোনিন পেটের ক্যান্সারের কোষগুলিকে হত্যা করতে সহায়তা করেছিল।

পিত্তথলির পাথর নিরাময়ে:

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে লেবুর খোসাতে থাকা ডি-লিমোনিন পিত্তথলির চিকিৎসা করতে সহায়তা করে।

পিত্তথলির পাথর আক্রান্ত ২০০ জনকে ডি-লিমোনিন দেওয়ার ফলে তাদের মধ্যে ৪৮% সম্পূর্ণ পিত্তথলির পাথর নিরাময় হয়েছিল।

এটি পিত্তথলির পাথর অপেরেশনের একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে যদিও এবিষয়ে আরও অনেক গবেষনার প্রয়োজন রয়েছে।

লিভারে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে, লিভারের ভিতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে।

ফলে শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না।

পরিশেষে বলা যায়, লেবুতে যত পরিমাণ না ভিটামিন “সি” আছে তার থেকেও বেশি ভিটামিন আছে এর খোসায়।

লেবুর খোসাতে কীটনাশক থাকতে পারে। তাই লেবু কাটার আগে ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

রেফারেন্স:
এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: