রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যেসব খাবার।

সুস্থ্য থাকার জন্য ইম্যুনিটি বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অক্ষুন্য্ থাকাটা খুবই জরুরি। এটা ঠিক না থাকলে সহজেই যে কোনো রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। এমনকি প্রাণঘাতী কোনো রোগ সহজেই আপনাকে কাবু করে ফেলতে পারে।

মূলত ক্লান্তি, অবসাদ, দুশ্চিন্তা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাবার গ্রহণ না করা ইত্যাদি নানা কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে।

আমাদের শরীরে ভিটামিন “সি” কখনও জমা থাকে না। ফলে নিয়মিত ভিটামিন “সি” জাতীয় খাবার না খেলে ভিটামিন “সি” এর ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

দেখা দিতে পারে বার বার ঠাণ্ডা লাগা, হাঁচি (ধুলার কারণে অ্যালার্জি) কাশি, গলা ব্যথা, বারবার জ্বর হওয়া ঠান্ডা লাগা, মুখের ঘা, স্কিন রুক্ষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা।

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবিদের মতো জীবাণুর সাথে লড়াই করা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কাজ।

একটি স্বাস্থ্যকর দেহ গড়ে ওঠে মূলত একটি শক্তিশালি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জেনে নিন এমন কিছু খাবার সম্পর্কে –

সাইট্রাস ফল:
দেখা যায় যে ঠান্ডা লাগলে বেশির ভাগ মানুষ ভিটামিন “সি” খাই। কারণ ভিটামিন “সি” রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কয়েকটি সাইট্রাস ফলের নাম নিচে দেওয়া হলো- সকল প্রকারের লেবু যেমনঃ মালটা, জাম্বুরা, কমলা, লেবু, এছাড়া আগুর, আনারস, বরই ইত্যাদি। আমাদের শরীরে ভিটামিন “সি” কখনও জমা থাকে না। যখন দরকার হয় তখনই খেতে হয়।

সকল ধরনের সাইট্রাস ফলেই উচ্চ পরিমানের ভিটামিন “সি” থাকে।

লাল ক্যাপসিকাম বা মরিচ:
লাল ক্যাপসিকামে ভিটামিন “সি” এর পরিমান সাইট্রাস ফলের তুলনায় দ্বিগুন। বেটা-ক্যারোটিনের পরিমানও অনেক বেশি।

ভিটামিন “সি” রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্যও বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ব্রকলি:
ব্রকলি ভিটামিন ও মিনারেলে পূর্ণ। এছাড়াও ভিটামিন “এ”, “সি” এবং “ই” পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রয়েছে।

এই পুষ্টিকর উপাদানগুলি শরীরকে ভেতর থেকে এতটাই শক্তিশালী করে যে অসুস্থ্য হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যে এসে দাঁড়ায়। ব্রকলি ও ফুলকপি একই ধরণের সবজি। তাই যারা ব্রকলি খেতে চান না তারা ফুলকপি খেতে পারেন।

রসুন:
অনেক ধরনের রান্নাতে রসুন ব্যবহার করা হয়। যা রান্নাতে আলাদা একটি মাত্রা যোগ করে এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।

আগের সভ্যতার মানুষ রসুনের গুরুত্ব বুঝেছে বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে মুক্ত হয়ে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ হেলথ ট্রাস্টেড সোর্স মতে, রসুন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

রসুনের মধ্যে এলিসিন নামক যৌগিক উপাদান আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আদা:
অসুস্থ্যতা দূর করার জন্য আদা ভালো কাজ করে। গলায় ব্যাথা, সর্দি কাশি, মাথায় ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে আদা। বমি বমি ভাব দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আদা।

শাক সবজি:
শাকে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন “সি” রয়েছে। এতে আরো রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেণ্ট এবং বেটা-ক্যারোটিন যেটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

দই বা দুধ:
দইয়ে থাকা ‘ল্যাকটিক অ্যাসিড’ একটি ব্যাকটেরিয়া যেটা পেট পরিষ্কার রাখে। তাছাড়া এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ‘ইমিউন সিস্টেম’কে আরও শক্তিশালী করে।

তবে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি বা মিষ্টি দই না খেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি টক বা সাদা দই খাওয়াই উত্তম।

আমন্ড(almond):
ঠান্ডা কাটিয়ে উঠতে ভিটামিন “সি”এর থেকে ভিটামিন “ই” বেশি কার্যকরী। ভিটামিন “ই” আমাদের শরীরের রোগ প্রতি রোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আমন্ড ভিটামিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিতে পরিপূর্ন। প্রতিদিন আমাদের শরীরে যতটুকু ভিটামিন “ই” প্রয়োজন তা ১০০% পূরণ করতে পারে ৪টি আমন্ড।

গ্রীন-টি:
ব্ল্যাক টি এবং গ্রীন-টি দুটোই ফ্ল্যাভোনয়েডে পরিপূর্ণ, যেটা এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। গ্রীন টিতে ক্যাটেচিন রয়েছে যা, EGCG নামে পরিচিত।

এই EGCG একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। EGCG রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে- এটা প্রমাণিত। অ্যামিনো অ্যাসিড এল-থানাইনিনের (L-theanine) একটি ভাল উৎস হল গ্রীন-টি।

এল-থানাইনিন আমাদের শরীরের রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এমন যৌগ তৈরিতে অবদান রাখে।

আমলকী:
ভিটামিন “সি” তে পরিপূর্ণ আমলকী। আমলকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, সর্দি-কাশি সারাতে ও হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন এক চামচ আমলকীর রস মধু দিয়ে খেলে সর্দি-কাশির প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

মধু:
মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

সর্দি-জ্বরে বা কাশি হলে ১ গ্লাস উষ্ণ গরম পানির সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

পেঁপে:
পেঁপে আর একটি ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ ফল।

আমাদের প্রতিদিন যতটুকু ভিটামিন “সি” দরকার তা আমরা পেঁপে থেকে পেতে পারি। পেঁপেতে পাপাইন নামক একটি পাঁচক এনজাইম আছে যা আমাদের শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামারেটিক প্রভাব ফেলে।

এছাড়াও পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ভিটামিন “বি”এবং ফলেট রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

কিউই(Kiwi):
পেঁপের মতো Kiwi তে ফলেট, পটাসিয়াম, ভিটামিন “কে” এবং ভিটামিন “সি”তে পরিপূর্ণ।

ভিটামিন “সি” শ্বেত রক্ত ​​কণিকার পরিমান বাড়ায় যা, আমাদের শরীরের যে কোনো ক্ষত শুকাতে খুবই ভালো কাজ করে।

মাংস:
অসুস্থ্য অবস্থায় চিকেন সুপ খুবই উত্তম একটি খাবার। মুরগীর মাংস অথবা টার্কির মাংসতে ভিটামিন বি-৬ রয়েছে।

দেখা গেছে যে, ৩ আউন্স মুরগীর মাংস অথবা টার্কির মাংসতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০-৫০ ভিটামিন বি-৬ পাওয়া যায়।

ভিটামিন বি-৬ শরীরে নতুন রক্তের সেল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এতে সাহায্যকারী পুষ্টি উপাদান আছে যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

সূর্যমুখী বীজ:
সূর্যমুখী বীজ গুলি ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি-৬ সহ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। ভিটামিন “ই” রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই বীজে অবিশ্বাস্য রকমের ভিটামিন “ই” রয়েছে যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

এছাড়াও উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন “ই” সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারগুলির মধ্যে অ্যাভোকাডোস (avocados) এবং গাঢ় সবুজ শাক।

এছাড়া আরও কিছু উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বা শক্তিশালী করতে পারি:

  • ধূমপান এড়ানো
  • নিয়মিত ব্যায়াম
  • একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
  • মদ্যপান কমানো
  • যথেষ্ট ঘুম
  • মানসিক প্রেসার কমানো
  • খাবার আগে সঠিক ভাবে হাত ধোঁয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
রেফারেন্স:

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: