করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে করণীয় কী?

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যখন আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক কোনও ভাইরাস – যেমন সর্দি বা ফ্লু বা করোনাভাইরাস (কোভিড – ১৯) প্রবেশ করে, তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এইসব ভাইরাসকে আক্রমণ করে ভাইরাসের প্রভাবকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করে।

এটা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে পরিচিত। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন ভাবে ঘটে এবং বিভিন্ন কোষ এতে জড়িত থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে এটি বোঝা যায়।

আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি শক্তিশালী থাকবে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আমরা তত বেশি নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবো। এজন্য যেকোনো ক্ষেত্রে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কোনো বিকল্প নাই।

সাধারণ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন খুবই জরুরী করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে।

করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কিছু উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।

অ্যালকোহোল গ্রহন ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন:

অতিরিক্ত অ্যালকোহোল কখনোই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। এতে হৃদরোগের ঝুকি রয়েছে। তাই অতিরিক্ত অ্যালকোহোল এড়িয়ে আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা উচিত।

অন্যদিকে প্রতিবছর শুধুমাত্র ধূমপানের কারণে প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। ধূমপান হচ্ছে- ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসসহ অন্তত ১৩ প্রকার ক্যান্সারের মূল কারণ।

করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমাদের অ্যালকোহোল গ্রহন ও ধূমপান এড়িয়ে চলা উচিৎ।

দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ও উদ্বেগ এড়িয়ে চলুন:

উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। যারা একটু রিলাক্স জীবন যাপন করে তাদের তুলনায় মানসিক চাপযুক্ত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে।

জীবনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানসিক চাপ হ্রাস করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

ফলমূল, শাকসবজি এবং আঁশ যুক্ত খাবার গ্রহণ:

এটা সত্য যে নিরামিষ ভোজীরা আমিষ ভোজীদের তুলনায় বেশি দিন বাচেঁন। বিজ্ঞানীদের মতে, অধিক ফ্যাট সমৃদ্ধ আমিষ গ্রহণের ফলে ধমনীতে জাঙ্ক তৈরি হয়।

অন্যদিকে যারা প্রচুর পরিমাণে সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস থাকে যা শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন:

অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস কমাতে হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা পরিমিত খায় তারা বেশি কর্মঠ এবং দীর্ঘায়ু হয়ে থাকে এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে।

অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হবে, যা করোনাভাইরাস সহ যেকোন ভাইরাস আক্রমণ প্রতিহত করা কষ্টকর।

মাল্টিভিটামিন গ্রহণ:

মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করুন যদি আপনার সন্দেহ হয় যে আপনি আপনার ডায়েটের মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি পাচ্ছেন না।

পর্যাপ্ত ঘুমান:

দৈনিক টানা কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। কোষের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্বি করার জন্য প্রযাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ।

শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন

শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা বা ব্যায়াম আমাদের সুস্থ রাখতে পারে। প্রতিদিন ১৫ মিনিটের ব্যায়াম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এজন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরী করোনাভাইরাস সহ যেকোন ভাইরাস আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য।

হাত দিয়ে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ নয়:

হাত দিয়ে আমরা কত কিছুই না স্পর্শ করে থাকি তাই এখন থেকে হাত দিয়ে যে কোন কিছু স্পর্শ করার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে বাইরে থেকে আসার পর হাত না ধুয়ে মুখমন্ডলে স্পর্শ করবেন না।

হাঁচি-কাশিতে সাবধানতা:

হাঁচি-কাশিতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন যেমন হাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই টিস্যু অথবা রুমাল ব্যবহার করুন এবং এটি নিরাপদ জায়গায় ফেলুন।

সূত্র:
করোনাভাইরাস হার্ভার্ড রিসার্চ সেন্টার