টক মিষ্টি স্বাদের ফল “বরই” কোষ্টকাঠিন্য দূর করে ও রক্ত পরিষ্কার করে।

খুবই জনপ্রিয় একটি মৌসুমী ফল বরই বা কুল। সবুজ, লাল-সবুজ-হলুদ রঙের ছোট ছোট ফলগুলো দেখলেই জিভে জল এসে যায়। বিশেষ করে বরই মাখার কথা মনে পড়লে অনেকের স্কুল দিনের কথা মনে পড়ে যায়।

Jujube বা বরই বা কুল গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার ফল। এটি ভারতে Jujube নামেও পরিচিত, বাংলাদেশে পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফলটি বরই নামে পরিচিত। Ziziphus mouritiana এর সাইন্টিফিক নাম। এটি ইংরেজিতে চাইনিজ ডেট বা চীনা খেজুর নামেও পরিচিত।

টক, মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। পরিপক্ব অবস্থায় হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং অতিরিক্ত পেকে গেলে গাঢ় বাদামি খেজুরের মতো বর্ণ ধারণ করে কুঁচকে নরম তুলতুলে ও রাবারের মতো হয়ে যায়।কাঁচা, পাকা ও শুকনো এই তিন অবস্থাতেই এটি খাওয়া যায়।

বরই রোদে শুকিয়ে সারা বছর খাওয়ার জন্য রেখে দেয়া হয়। বরই আঁচার বা বরই চাটনী ছোট্ট শিশু থেকে বুড়া সবাই খেতে খুব ভালোবাসে। শুকানো আস্ত বরই বা বরই গুঁড়ো করে খেজুরের গুড়ের সাথে মিশিয়ে আঁচার বানানো হয়। এটি দুধ ভাতের সাথে খেতে খুব ভালো লাগে।

রোদে শুকানো বরই দিয়ে চাটনি খেতেও খুব মজা লাগে। বরই বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। এটি গোল, ডিম্বাকৃতি, obovate, oblong ইত্যাদি আকারের হয়ে থাকে।

এগুলো দেখতেই সুন্দর না খেতেও অনেক সুস্বাদু। টক বরই, দেশি কুলবরই, বিদেশি কুলবরই, মিষ্টি বরই নানা ধরনের বরই। ছোট্ট গোলগাল এই ফলটির যে নানা ধরনের গুণ রয়েছে তা আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা। 

উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টক বরই খুবই উপকারী ফল।

শীতের অন্যান্য ফসলের চাষের পাশাপাশি বরই চাষ এখন চাষীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। কুলের রসকে ক্যান্সার বিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ফলের রয়েছে ক্যান্সার কোষ, টিউমার কোষ ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার অসাধারণ ক্ষমতা।

বরই এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

বরই এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো –

ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ:

বরইকে ভিটামিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস বলা হয়। বরইতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাই ভিটামিন “সি”। ১০০ গ্রামে ৬৯ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন “সি” পাওয়া যায়। ফলে এটি সংক্রামক রোগ দূর করতে সহায়তা করে। যেমন: টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্বায় ঘা, ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া ইত্যাদি দূর করে। মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে কুল।

এ ছাড়া হজমশক্তি বৃদ্ধি ও খাবারে রুচি বাড়িয়ে তোলে এ ফল।এটি ত্বকের উজ্বলতা বাড়ায়, ফ্রি রেডিক্যালস প্রতিহত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগকে দূরে রাখে।

কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি:

কোষ্টকাঠিন্য হলে মানুষ খোলাখুলি ভাবে অন্যকে বলতে চাই না। সে এটি প্রকাশ করতে বিব্রত বোধ করে। বর্তমান বাংলাদেশে ক্রনিক কোষ্টকাঠিন্য রোগীর সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে করে বরই তাদের জন্য হতে পারে একটি উত্তম পথ্য। বরইতে থাকা উচ্চ পরিমানে ফাইবার bowel মুভমেন্ট স্বাভাবিক করে।

টেনশন ও চাপ কমায়:

স্ট্রেস হরমোন আমাদের মনে অবসাদ আনে, দুঃখ-কষ্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। বরই স্ট্রেস হরমোন নিসরনের মাত্রা কমায়। ফলে মানসিক চাপ কমে।

ঘুম বৃদ্ধিকারক:

চীন দেশে বহু বছর আগে থেকে অনিদ্রাজনিত সমস্যায় বরই ব্যবহার হয়ে আসছে। বরই ফল এবং এর বীজ দুটোতেই স্যাপোনিন ও পলিস্যাকারাইড নামক flavonoids রয়েছে। saponin- প্রাকৃতিক ঘুম বৃদ্ধিকারক। পুরো স্নায়ু গুলোকে শীতল করে নিদ্রা আনায়নে সহায়তা করে।

রক্তচলাচল ভালো করে:

বরইতে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড অর্থাৎ লবন খুবই কম থাকে এবং পটাসিয়াম বেশি থাকে। এর ফলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। পটাশিয়াম ব্লাড vessels গুলোকে শিথিল ও আলগা করে। সুন্দর, smooth রক্ত চলাচল নিশ্চিত হয়।

ত্বক ভালো রাখে:

এর ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায় যা ত্বক উজ্জ্বল করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

হাড় শক্ত করে:

এই ফলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি সহ আরো অনেক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায় যা হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

রক্ত পরিষ্কারক:

বরই অত্যন্ত চমৎকার একটি রক্ত বিশুদ্ধকারক। বরই এর মধ্যে স্যাপোনিন, অ্যাল্কালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান থাকে যারা রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ:

বরইতে ফ্যাট নাই বললেই চলে। ২ আউন্স (প্রায় ৪টি) বরই খেলে শরীরে ৪৪ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু ফ্যাট প্রায় শূন্য। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও এরা সাহায্য করতে পারে।

শীত থেকে গরমের শুরু অবধি সময়টা দেশি ফলের অভাব মেটায় প্রধানত দেশি টক বরই ও মিষ্টি কুল।বর্তমানে বাজারে আপেল কুল ও বাউকুল নামে দুটো নতুন জাতের কুল পাওয়া যায়। লাল টুকটুকে আপেল কুল খুব মিষ্টি হয়ে থাকে এবং বাউকুল সাইজে অন্য কুলের থেকে বড়ো হয়ে থাকে।

সতর্কতা

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন বা চিকিৎসকের দেওয়া কোনো ওষুধ খাচ্ছেন তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: