কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড় ওজন কমায়, ডায়াবেটিস কমায় ও হার্ট ভালো রাখে।

আর মাত্র কদিন পরেই পাকা কাঁঠালের মন ভোলানো গন্ধে চারিদিক ভরে যাবে। এখন পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড় যেটি আমরা সবজি হিসাবে খেয়ে থাকি। গ্রামবাংলায় কাঁচা কাঁঠালকে এঁচোড় বলা হয়।

নিরামিষ পদ হিসাবে এঁচোড়ের তরকারি বা মাছ, মাংস দিয়ে রান্না করা এঁচোড় দুটোই আমাদের বাঙালিদের কাছে খুবই প্রিয়। এঁচোড় আলুর তরকারি, এঁচোড়ের ডালনা, এঁচোড়ের কোপ্তাকারি, এঁচোড়ের কালিয়া, এঁচোড়ের বিরিয়ানি, চপ, কাটলেট কোনটা রেখে কোনটা বলি।

গরম ভাতের সাথে এঁচোড়ের যেকোনো একটি পদ দিয়ে আপনি এক থালা ভাত খেয়ে নিবেন। মাছ-মাংস লাগবে না।

কাঁঠালের ইংরেজি নাম jackfruit যা জ্যাক ট্রি নামেও পরিচিত। কচি বা কাঁচা কাঁঠালকে আমরা এঁচোড় বলি যেটা Raw jackfruit হিসাবে পরিচিত। কাঁঠাল এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus.

Moraceae পরিবারের artocarpus গোত্রের ফল এটি। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষত বাংলাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ কাঁঠালের উৎপত্তি স্থান হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়, এবং পাবর্ত্য এলাকায় কাঁঠালের চাষ বেশি হয়।

বসন্তকাল থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। এঁচোড়ের তরকারি যে একবার খেয়েছে সে নিশ্চিতভাবে বারবার খেতে চাইবে।

যদিও পাকা কাঁঠালের স্বাস্থ্যের সুবিধাগুলি বারবার বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে কিন্তু আমরা প্রায়শই কাঁচা কাঁঠালের যে স্বাস্থ্যসুবিধা রয়েছে তা অবমূল্যায়ন করি। ফলটি দেখতে খুব চটকদার না হলেও এর দারুন সব পুষ্টিকর প্রোফাইল একবার দেখে নেয়া যাক।

কাঁচা কাঁঠালের পুষ্টি উপাদান

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে:

  • দুই গ্রাম খাদ্য-আঁশ,
  • শর্করা ২৪ গ্রাম,
  • চর্বি দশমিক ৩ মিলিগ্রাম,
  • ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম,
  • ম্যাগনেশিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম,
  • পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম,
  • ভিটামিন এ ২৯৭ আইইউ ও
  • ভিটামিন-সি ৬.৭ মিলিগ্রাম।

বাংলাদেশে ও ভারতে ফলটি খুবই জনপ্রিয়। কাঁচা অবস্থায় ফলটি তরকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং বীজটি প্রায়শ সংরক্ষণের জন্য শুকানো হয় এবং পরে তরকারী হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কয়েকটি কারণে কাঁচা কাঁঠাল সুপার ফুডের মর্যাদা পেয়েছে।

কাঁঠাল একটি অতি পরিচিত সুপারফুড। ভারতের দক্ষিণের বেশিরভাগ লোক এটিকে একটি ফল এবং এর বীজ একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ বাদাম হিসাবে পছন্দ করে। উত্তরে, কোমল কাঁঠাল বা কাঠাল একটি  উদ্ভিজ্জ মাংস এবং বাংলায় এটি গাছ পাঠা (গাছ মাটন)।

কেরালায় এটি মূলত একটি স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট। কাঁচা কাঁঠালের চক্কা- পুরো খাবার হিসাবে খাওয়া হয়, ভাত, ছোলা এবং রুটির বিকল্প হিসাবে।

কাঁচা কাঁঠাল কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল?

কাঁচা কাঁঠাল স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা ভালো তা আর বেশি বর্ণনা করার দরকার নেই। কাঁঠাল হল ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার এবং কিছু অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির একটি স্বাস্থ্যকর উৎস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, এক কাপ কাঁচা কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে: ১৫৭ ক্যালোরি।

ডায়াবেটিস রোগী কি কাঁচা কাঁঠাল খেতে পারেন?

হাঁ, ডায়াবেটিস রোগী কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড় খেতে পারেন। কাঁঠাল একটি অনন্য ফল যা সাধারণত মাংসের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

যদিও এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে, এতে একটি মাঝারি জিআই (GI) এবং জিএল (GL) রয়েছে। এছাড়াও, কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা

পাকা কাঁঠালে যেমন উপকার রয়েছে, তেমনি কাঁচা কাঁঠালও কম উপকারী নয়। কাঁচা কাঁঠাল আমিষ, ভিটামিন ও আঁশ সমৃদ্ধ তরকরি। এ ফলটি আকারে বেশ বড় হয়ে থাকে। এর পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক।

উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ:

যদিও ডিম বা চর্বিযুক্ত মাংসের মতো নয় তবুও প্রতি এক কাপ কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড়ে ৩-গ্রাম প্রোটিন। অবাক করার  মতো একটি বিষয়। ফল হিসাবে যে কাঁঠালের এতো কদর সেই কাঁঠালকে সবজি বললে একটু অস্বাভাবিক মনে হলেও বিরলতম সবজির মধ্যে একটি হলো কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড়।

ক্যালোরি কম আঁশ বেশি:

যে সবজিতে ফাইবার যত বেশি সেই সবজি আপনাকে ততো বেশি সময় পেট ভরিয়ে রাখবে। সেক্ষেত্রে কাঁচা কাঁঠালের কোনো তুলনা হয় না। কাঁঠালের বীজ, রোয়া এবং স্কিনের পরবর্তী অংশ যা আমরা খেয়ে থাকি, একেবারে ফাইবারে পরিপূর্ণ। আলু, বীট, চাল, আটা ও অন্যান্য শস্যের তুলনায় এতে ক্যালোরি কম। আঁশ থাকার কারণে শরীরে কোলেস্টেরোল জমতে দেয় না। ফলে হার্ট ভালো থাকে।

এটি ডায়াবেটিসকে কমাতে সহায়তা করতে পারে:

পাকা কাঁঠালের বিপরীতে কাঁচা কাঁঠাল ডায়াবেটিসের জন্য দুর্দান্ত। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স গবেষণা পরিষেবা (এসইউজিআইআরএস) এ পরিচালিত ক্লিনিকাল পরীক্ষাগুলিতে দেখা গেছে যে, কাঁচা কাঁঠালে চাল এবং গমের চেয়ে গ্লাইসেমিক লোড কম (চিনি / রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি)-এর অর্থ, আপনি যখন এক কাপ চাল বা রুটির পরিবর্তে এক কাপ কাঁচা কাঁঠাল খাদ্যতালিকায় যুক্ত করবেন তখন আপনার রক্তের গ্লুকোজ তত বাড়বে না।

ওজন কমায়:

কাঁচা কাঁঠালে চর্বির পরিমান একেবারেই কম। তাই এঁচোড় খেলে ওজন বাড়ে না। যদি আপনি ওজন হ্রাস করার দিকে লক্ষ্য করে থাকেন তবে আপনার ডায়েটে আরও কাঁঠাল যুক্ত করুন কারণ এতে প্রচুর ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে যা হজম শক্তি বাড়ায়। প্রকৃতপক্ষে, কাঁঠাল একটি কম ক্যালোরি ফল যা আপনার ওজন হ্রাসের লড়াইয়ে সহায়তা করবে। আপনি ক্ষুধার্ত বোধ না করে ওজন হ্রাস করতে পারবেন।

ভিটামিনের ভান্ডার:

কাঁঠালের গুনের শেষ নেই। এতে অনেক প্রকারের ভিটামিন থাকে। কাঁঠালে থাকা ভিটামিন যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। চোখের জন্য ভীষণ উপকারী।  চোখ ভালো রাখতে ভিটামিন “এ” যে অপরিহার্য, তা কে না জানে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অ্যাজমা, কাশি, সর্দি ও ক্যানসারের মতো রোগ দূর করে। এতে থাকা ভিটামিন B6 রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। কাঁঠালে রয়েছে ভিটামিন B6 এবং প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি। তবে এতে কোনোরকম কোলেস্টেরল নেই। কাঁঠালে আয়রন থাকে যা রক্তে লোহিতকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। রক্তাল্পতায় যারা ভুগছেন তাদের কাঠাল খাওয়া উচিত। এই ফল নিয়মিত খেলে পাইলস এবং কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে।

এটি একটি দুর্দান্ত মাংসের বিকল্প:

কাঁচা কাঁঠাল মাংসের মতো করে রান্না করা যায়। মশলা ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে ঠিক যেভাবে মাংস রান্না করা হয় একদম সেরকম। স্কিনের পরবর্তী আঁশযুক্ত অংশটুকু দেখতে ও খেতে মাংসের মতো। এছাড়া আমরা জানি কাঁঠালের বীজও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। তাই কাঁচা কাঁঠালের তরকারি, বিরিয়ানি বা অন্য কোনো পদ নিরামিষ ভোজীদের জন্য দুর্দান্ত খাবার। কাঁঠালের বীজের আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে সেটি আর নাই বললাম। আপনি চাইলে কাঁঠালের বিচ খেতে পারবেন বাদাম হিসাবে হালকা নাশতায়, সালাদ, তরকারি, হালুয়া বা ভর্তা হিসেবে।

সতর্কতা

কাঁঠাল দিয়ে কী খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে?

কাঁঠাল এবং দই একসাথে বেশি পরিমাণে খেলে বদহজম হতে পারে। কাঁঠাল এবং দুগ্ধজাতের সংমিশ্রণ বদহজম এবং চর্মরোগের কারণ বলে বিবেচিত হয়। কোনো কিছু অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়।

যা খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যাই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: