যেসব বদভ্যাসগুলি আমাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর।

চোখ যা দিয়ে আমরা দুনিয়ার আলো দেখি, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দেখতে পারে। ভাবুন তো আমরা যদি এই সুন্দর পৃথিবীটাকে দেখতে না পেতাম। এই কষ্টটা একমাত্র তারাই বোঝে যারা দেখতে পাই না।

তাহলে বুঝতে পারছেন চোখ সুস্থ্য রাখা ও যত্ন নেওয়া আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেমন চুলের যত্ন নি, দাঁতের যত্ন নেই, ত্বকের যত্ন নেই ঠিক তেমনি আমাদের চোখেরও যত্ন নিতে হবে। চোখের যত্ন যেমন সব সময় চোখ পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখতে হবে, চোখে অতিরিক্ত মেকআপ করা যাবে না। চোখে মেকআপ করলেও অবশ্যই ভালো করে মেকআপ পরিষ্কার করতে হবে।

এসব কিছুর পাশাপাশি আমাদের কিছু বদভ্যাস রয়েছে যেগুলি আমাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর। সেগুলিকেও আমাদের ত্যাগ করতে হবে। আসুন জেনে নিন যে অভ্যাসগুলি আমাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর –

মোবাইল এবং কম্পিউটারের দিকে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে থাকা:

মোবাইল এবং কম্পিউটারের দিকে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে থাকা এটা চোখের ক্ষতির অন্যতম কারণ। বিশেষ করে আপনি যখন ঘন্টার পরে ঘন্টা এটি করেন। এর ফলে ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, শুকনো চোখ এবং বমি বমি ভাব দেখা দেয়। এর জন্য আপনার প্রতি ২০ মিনিট পর আপনার ২০ ফিট দূরে কি ঘটছে তা দেখার জন্য ২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করতে হবে। এতে আপনার চোখ ভালো থাকবে।

মেকআপ নিয়ে ঘুমানো:

বিছানায় যাওয়ার আগে সবসময় মেকআপ তুলে ফেলতে হবে। মেকআপ আপনার চোখের চারপাশে ব্যাকটিরিয়া তৈরি করতে পারে। চোখ সবসময় পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন। আর প্রয়োজন ছাড়া মেকআপ করবেন না।

পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করা:

আমাদের দেহের ৭৫% পানি দিয়ে গঠিত। তাই আমাদের দেহ সুস্থ্য স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন পানির। আপনি যদি পানিশূন্য হয়ে পারেন, তখন আপনার দেহের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু করবে। পানির এভাবে চোখ লুব্রিকেট করার জন্য এবং পরিষ্কার রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অশ্রু তৈরি করতে সক্ষম হবেন না এতে চোখ শুকিয়ে যাবে।

চোখ ঘষা:

চোখের যতগুলি ক্ষতিকর অভ্যাস আছে সেগুলির মধ্যে এটি একটি। চোখ চুলকানোর বা চোখ ঘষার অভ্যাস এমন যে এটি যেকোন জায়গায় যেকোন পরিস্তিতিতে এটি আপনি করতে পারেন। মনে করুন আপনার হাতে নোংরা রয়েছে তখন আপনি আপনার মনের অজান্তে চোখ স্পর্শ করলেন এতে চোখে ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া চোখ ঘষার ফলে ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলি ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

কম ঘুমানো:

কম ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চোখ আরক্ত হয়ে থাকে, চোখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যাও দেখা যেতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন সার্বিক সুস্থতা ও চোখের সুস্থতার জন্য।

ধূমপান করা:

ধূমপান করার ফলে চক্ষু রোগের ঝুঁকি যেমন গ্লুকোমা, ছানি পড়া এবং বয়সের সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। ধূমপান আপনার দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ধূমপানের সময় প্রশ্বাসের সাথে সাথে আপনি যে রাসায়নিক উপাদান গ্রহণ করছেন তা চোখের ছানি সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে ঘুমানো:

যারা নিয়মিত কন্ট্যাক্ট লেন্স পরেন তারা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই তা খুলে রাখবেন। লেন্স পরে ঘুমালে চোখের ‘কর্নিয়া’তে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারেনা, যা ডেকে আনতে পারে ‘নিওভাস্কুলারাইজেশন’ নামক চোখের রোগ। পাশাপাশি দেখা দিতে পারে প্রদাহ, যার কারণে ভবিষ্যতে লেন্স পরা নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।

অন্ধকারে টেলিভিশন দেখা:

অন্ধকারে টেলিভিশন, সেল ফোন এবং কম্পিউটার সহ যে কোনও ধরণের স্ক্রিন দেখা আপনার চোখের জন্য খারাপ। কারণ টেলিভিশন, সেল ফোন এবং কম্পিউটারের আলোর স্তরগুলি দ্রুত পরিবর্তিত হয়, এই পরিবর্তনগুলির প্রক্রিয়া করতে চোখের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে যার ফলে ব্যথা, আইস্ট্রেইন, মাথাব্যথা, লালচে ভাব, শুকনো চোখ প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারসাম্যহীন ডায়েট করা:

কিছু শাকসবজি এবং ফল চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত ভিটামিন “ই” এবং “সি”, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং জিংক সমৃদ্ধ ডায়েট। প্রতিদিনের ডায়েটে শাকসবজি, সিট্রাস ফল, বাদাম, আস্ত শস্যদানা এবং মাছ যোগ করুন।

সবুজ শাক কম খাওয়া:

সবুজ শাক যেমন: কচুশাক, পালংশাক, কলমি শাক, পুইশাক, লাউশাক ইত্যাদিকে অবহেলা করবেন না। সবুজ শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। সেই সাথে এটি ম্যাঙ্গানিজের খুব ভালো উৎস। এগুলো চোখের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখের রেটিনাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে সবুজ শাক। দৃষ্টিশক্তি ভালো করতেও সাহায্য করে সবুজ শাক।

রেফারেন্স: