প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের দুর্গন্ধ দূর করবেন কিভাবে?

মুখে দুর্গন্ধ খুবই অস্বস্তিকর একটা বিষয়। কারও সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে গেলে বিব্রত লাগে, হাসতে গেলেও প্রাণ খুলে হাসা যায় না। সবসময় শুধু চিন্তা হয় আমাকে নিয়ে কে, কি ভাবে। সবসময় মনে একটি চাপা ভয় যেন থেকেই যায়।

অনেক সময় ধরে চুপচাপ থাকার পর হটাৎ কথা বলতে গেলেই মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। হয়তো পাশে বসে থাকা লোকটি মনে করবে আপনি কি নোংরা ঠিক মতো ব্রাশও করেন না।

আপনি তো সকালে খুব ভালো করে ব্রাশ করেছেন। কিন্তু তারপরও কেন মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। অনেক কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। যেমন- হজম জনিত কারণে, অনেক সময় ধরে মুখ শুকনো থাকলে, মাড়ির সমস্যা কিংবা দাঁতে ক্যাভেটিসের সমস্যা থাকলে।

এছাড়া তামাকজাতীয় পণ্য মুখের গন্ধ সৃষ্টি করে, দাঁতে আটকে থাকা খাবারের কণা থেকে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। পেঁয়াজ এবং রসুনের কারণে দুর্গন্ধ হতে পারে। নানা ধরণের অসুস্থ্যতার কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে যেমন – ডায়াবেটিস থাকলে।

নিচে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় দেওয়া হলো –

ধনে পাতা:

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে ধনেপাতা। এছাড়া আস্ত ধনিয়াও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। মাঝে মাঝে ধনেপাতা বা আস্ত ধনিয়া চিবিয়ে খেতে পারেন, দেখবেন মুখে আর দুর্গন্ধ থাকবে না।

গ্রিন টি:

গ্রিন টি হল মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কার্যকর ঘরোয়া উপায়। রিসার্চট্রাস্টড সোর্স দেখায় যে গ্রিন টিতে জীবাণুনাশক এবং ডিওডোরাইজিং (deodorizing) বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অস্থায়ীভাবে নিঃশ্বাসকে সতেজ করতে পারে।

আপেল:

একটি সমীক্ষাযা দেখা গেছে যে আপেল মুখের দুর্গন্ধ এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। আপলে কয়েকটি প্রাকৃতিক যৌগ রয়েছে যা মুখের দুর্গন্ধ দূরতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আমরা পেঁয়ারা, গাজর খেতে পারি।

মৌরি:

প্রাচীন কাল থেকেই, মৌরি মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুখের দুর্গন্ধ অনেকেরই এ সমস্যা আছে। তাদের জন্য মৌরি খুবই কার্যকর। মৌরি মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হবে। এক্ষেত্রে সবসময় মৌরি সাথে রাখা যেতে পারে।

এলাচ:

এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে নিঃশ্বাসকে সতেজ করে তোলে।

খাওয়ার পর ব্রাশ করুন:

খাবার খাওয়ার পর আমাদের দাঁতের ফাঁকা জায়গায় খাবার আটকে থাকে, এর ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। যাদের মুখে দুর্গন্ধ বেশি হয় তারা খাবারে পরে ব্রাশ করতে পারেন। ব্রাশ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

পুদিনাপাতা:

পুদিনাপাতা বা পুদিনা চা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম। তাই একে প্রাকৃতিক মাউন্ট ফ্রেশনার বলা যেতে পারে।

দারুচিনি:

মুখের ভেতরে দুর্গন্ধ দূর করতে আপনার হাতের কাছে থাকা দারুচিনিই হতে পারে দুর্দান্ত উপাই। এক্ষেত্রে এক চামচ দারুচিনির পাউডার বা আস্ত দারুচিনি নিয়ে পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে গরম করে নিন। তার পর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে কুলকুচি করুণ। দেখবেন গন্ধ চলে যাবে। বা আস্ত দারুচিনি মুখে রেখে দিতে পারেন।

লবঙ্গ:

এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপাটিজ, যা মুখে গন্ধ তৈরি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। মুখে একটি লবঙ্গ মুখে ভিতরে রেখে দিন। দেখবেন গন্ধ একেবারে চলে গেছে।

লেবুর রস:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে লেবু মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে খারাপ গন্ধের প্রকোপ কমতে একেবারেই সময় লাগে না। এক্ষেত্রে এক কাপ পানিতে ২ চামুচ লেবুর রস দিয়ে পান করতে পারেন অথবা সেই পানি দিয়ে ভালো করে কুলকুচি করতে পারেন।

আনারসের জুস:

অনেকেই উপলব্ধি করে যে আনারসের জুস মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য দ্রুত এবং সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। খাবার খাওয়ার পরে এক গ্লাস আনারসের জুস পান করুন বা আনারসের টুকরো চিবান।

দিনে দুই বেলা ব্রাশ করুন:

দিনে দুই বেলা ব্রাশ করা দাঁতের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা জরুরি।

মুখের শুষ্কতা

রিসার্চ দেখায় যে মুখের শুষ্কতা প্রায়শই মুখের দুর্গন্ধের কারণ হয়। এক্ষেত্রে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লালা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘুমানোর সময় আপনার মুখ স্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে যায়, এ কারণেই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে সকালে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। মুখের শুস্কতা দূর করতে মুখে কিছু রাখা যেতে পারে।

দই:

দইতে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া থাকে। এই স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া পেটের মতো আপনার দেহের বিভিন্ন অংশে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে দই মুখের দুর্গন্ধ কমাতেও সহায়তা করতে পারে।

দুধ:

দুধ দুর্গন্ধ দূর করার জন্য একটি সুপরিচিত নিরাময়। গবেষণা দেখায় যে রসুন, পেঁয়াজ খাওয়ার পরে দুধ পান করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।

উপরের এসব উপকরণে যদি মুখের দুর্গন্ধ দূর না হয়। তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সূত্র: হেলথলাইন, medicalnewstoday