পানিশূন্যতার ফলে শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে।

আমাদের দেহের ৭৫% পানি দিয়ে গঠিত। তাই শরীরকে সুস্থ্য ও সতেজ রাখার জন্য পানির গুরুত্ব কতটা তা বোঝার বা অস্বীকার কোনও উপায় নেই। পানি রক্তের সব দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

প্রতিনিয়ত প্রস্রাব এবং ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বের হয়। আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করি তাহলে পানিশূন্যতা অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন দেখা দেবে। প্রতিনিয়ত ডিহাইড্রেশন থেকে কিডনির সমস্যা, মাথায় ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যতা, রক্তে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তাই ডিহাইড্রেশন রোধ করতে পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির (পুরুষ) প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।

পানিশূন্যতা ফলে শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে

পানি আমাদের শরীরের জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বোঝানো যাবে না। নিচে পানিশূন্যতার ফলে শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে নিচে আলোচনা করা হলো –

মস্তিষ্কের সমস্যা হয়:

হালকা ডিহাইড্রেশন শক্তি স্তর কমিয়ে দিতে পারে, মেজাজকে দুর্বল করতে, স্মৃতিশক্তি অর্থাৎ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের মধ্যে পানিশূন্যতা মেজাজ, স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে।

মাসিকের সময় সমস্যা হয়:

ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় পেটে ব্যথা মেয়েদের একটি কমন বিষয়। পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। এই সময়টায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এই অভাব পূরণ করতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

ত্বকের সমস্যা হয়:

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে শরীরের পিএইচ লেভেল ঠিক থাকে না। শরীরে পানিশূন্যতার কারণে ব্রণ হয়, ত্বকের দাগ কমে না, বয়সের ছাপ বৃদ্ধি পায়। ত্বকের তাই যেকোন সমস্যা দূর করে ত্বক উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করে তুলতে চাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

মাথাব্যথা হয়:

ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিশূন্যতা আমাদের দেহের বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। পানি আমাদের শরীরের অধিকাংশ রোগ দূর করতে পারে। অপর্যাপ্ত পানি পান করা মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন হল মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনের একটি সাধারণ কারণ।

কোষ্ঠকাঠিন্যতার সমস্যা হয়:

কোষ্ঠকাঠিন্যতার সবথেকে সাধারণ সমস্যা হলো পানি কম খাওয়া। প্রতিদিন আমাদের অন্ত্রের গতিবিধির ঠিক রাখার জন্য অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান প্রয়োজন। যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করে থাকেন তবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন বা অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করুন।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য:

গর্ভবতী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি কম পক্ষে ২-৩ লিটার পান করা খুবই প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি মাতৃগর্ভের তরল (amniotic fluid) তৈরি করতে, অতিরিক্ত রক্ত উৎপাদন করতে, নতুন টিস্যু তৈরি করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী মায়েদের অন্য লোকেদের তুলনায় বেশি পানি পান করতে হবে।

কিডনির সমস্যা হয়:

সীমিত প্রমাণ রয়েছে যে, বেশি করে পানি পান না করলে কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। বেশি পরিমান তরল গ্রহণ কিডনির মধ্য দিয়ে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এতে পাথরগুলির প্রাথমিক পাথর গঠন রোধ করতেও সহায়তা করতে পারে।

কিডনি সুস্থ্য রাখতে হলে পানি পানের বিকল্প নেই। পানি কিডনিকে সচল রাখতে ও কিডনির স্বাভাবিক কার্যকলাপে সাহায্য করে।

আমাদের যতটা সম্ভব নিজেদের হাইড্রেট রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আমরা আমাদের শরীরকে বেশির ভাগ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারবো।