বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে কোন খাবারগুলো?

নিজেকে সুন্দর দেখাতে, কে না চায়। কিন্তু বয়স ধরে রাখা দায়। বয়সের কারণে নারী ও পুরুষদের মুখে একটা ছাপ দেখা দেয়। মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে লাবণ্য কমে যায়, যা অনেকের জন্য বিব্রতকর। আমাদের ত্বক টান টান করে রাখে কোলাজেন নামের প্রোটিন।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দেহে কোলাজেনের উৎপাদন কমে যায়। ফলে ত্বক কুঁচকে যেতে থাকে, বলিরেখা পড়তে শুরু করে।

কিন্তু এ থেকে পরিত্রানের একটা উপায় আছে তা হলো সঠিক খাদ্যভ্যাস। কারণ ত্বক ও চেহারার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের যোগসূত্র রয়েছে। তাই খাদ্যতালিকায় কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার থাকলে তা বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

বয়সের ছাপ কমায় যেসব খাবার:

আসুন জেনে নিই কোন খাবারগুলি বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে-

বাদাম:

চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখতে বাদামের জুড়ি নেই। বাদাম বিশেষ করে আখরোটে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা ত্বককে মসৃণ করে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে থাকে। প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় আপনি রাখতে পারেন যেকোনো বাদাম। বাদামে প্রচুর ভিটামিন “ই”, “সি” এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন “ই” ভিটামিন “সি” এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোলাজেন তৈরি করে।

হলুদ:

হলুদ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ২/৩ চিমটি হলুদ গুঁড়া, চালের গুঁড়া, টমেটো রস, কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের বয়েসের ছাপ দূর করে ত্বক ফর্সা করে তুলবে।

এছাড়া চোখের নীচে কালো দাগ দূর করতে হলুদ গুঁড়ার সাথে মাখন মিশিয়ে চোখের নীচে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। এটি চোখের নীচে বলিরেখা সহ কালো দাগও দূর করবে। এছাড়া আপনি ভিতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল করতে চাইলে দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।

ডার্ক চকলেট:

ডার্ক চকলেট নিয়মিত খেলে ত্বকের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং এটি উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তাই এটি ত্বকে বলিরেখা পরতে বাধা দেয়। এছাড়া এটি শরীরের বাড়তি ফ্যাট বার্ন করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

মশলা:

দারুচিনি, আদা, রসুন, মরিচ এর মতো মশলা খাদ্যতালিকায় নিয়মিত থাকলে বয়স আপনাকে চট করে কাবু করতে পারবে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, দারুচিনি কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়, ফলে ত্বক স্থিতিস্থাপক থাকে বেশি দিন। আদা বয়সজনিত দাগ-ছোপ কমায়।

অ্যাভোকাডো:

অ্যাভোকাডো তারুণ্য ধরে রাখার একটি জনপ্রিয় খাবার। উচ্চ মাত্রার ভিটামিন “ই”, পটাসিয়াম, মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলটি শুধু ত্বক ও শরীরকেই রক্ষা করে না বরং এটি মৃত কোষকে পুনর্গঠনে সহায়তা করে। তাছাড়া এটি ত্বককে সবসময় সতেজ দেখাতে সাহায্য করে।

গাজর:

গাজর ত্বকের জন্য খুবই উপকারি এবং প্রচুর পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। ভিটামিন “এ” এর একটি শক্তিশালী উৎস হচ্ছে গাজর এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা ত্বকের কোষ বিনষ্টকারী ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গাজর অকালে বলিরেখা পরা থেকে ত্বককে রক্ষা করে। তারুন্য উজ্জ্বল ত্বকের জন্য অবশ্যই ভিটামিন “এ” গ্রহণ করা উচিত।

সবুজ শাক সবজি:

সবুজ শাক সবজি খাদ্য ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ এর আধার। এছাড়া বেশির ভাগ সবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়াতে বেশি করে সবজি খেলে তা ত্বকে বার্ধক্য আসার গতিকে ধীর করে দেয়। বিশেষ করে সবুজ শাক সবজি যেমন- পালংশাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমানে খনিজ উপাদান ও ভিটামিন “এ”, “সি” এবং “ই” রয়েছে। যা কোলাজেন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। তাই খাদ্যতালিকায় শাক বিশেষ করে পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগম ও শিম রাখুন।

পানি:

পানির ওপর নাম জীবন। তারুণ্য ধরে রাখতে প্রথমেই পানি দিয়ে শুরু করতে হবে। শরীরের সঠিক তারুণ্য ধরে রাখতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করেন তাহলে আপনার শরীরের পিএইচ লেভেল ঠিক থাকবে। এতে ব্রণ হ্রাস পাবে, ত্বক দাগ মুক্ত হবে, বয়সের ছাপ কমে গিয়ে ত্বকের যেকোন সমস্যা দূর হয়ে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়।

টমেটো:

টমেটোতে থাকে লাইকোপিন যা হার্টের রোগের সম্ভাবনাকে কমায়। এছাড়া সূর্যের আলোর পোড়া ভাব কমাতে টমেটোর জুড়ি নেই। লাইকোপিন ত্বকের পোড়া ভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ত্বকের কোলাজেনের মাত্রা বাড়িয়ে ত্বককে করে তোলে মসৃণ এবং দাগমুক্ত। টমেটো তে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেও যাত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে।

বেরি:

বেরি জাতীয় ফল গুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এরা ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে স্ট্রবেরি, ব্লুবেরির মত গারো রঙের বেরি ফলগুলো ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে বাধা দেয়। এইসব বেরি ফল গুলো ভিটামিন “সি” তে ভরপুর তাই এগুলো ত্বকের জন্যও ভালো। ব্লুবেরি শরীরে বার্ধক্যের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ত্বকের ফোলা ভাব কমায়।

ব্রকলি:

আমাদের বয়স ছাপ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (oxidative stress) অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ। যদিও বয়স বৃদ্ধি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মাধ্যমে বার্ধ্যক্যজনিত রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করা যায়। এছাড়াও আরও কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্রকলির বায়ো-এক্টিভ-কম্পাউন্ড সালফোর‍্যাফেইন বয়োঃবৃদ্ধির গতি কমাতে পারে।

বেদানা:

বেদানা বা ডালিম কোলাজেন বান্ধব। ডালিম কোলাজেনকে রক্ষা করে। ফ্রি-রাডিক্যালস উৎপন্ন হলেও কোলাজেনকে নষ্ট করতে দেবে না। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, ডালিম ক্ষতিগ্রস্থ ত্বক মেরামত করতে এবং কোলাজেনের উৎপাদন করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডান্টে ভরপুর বেদানা বজায় রাখে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা। ইলাস্টিসিটি কমলেই কিন্তু ত্বক তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যায়, তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারিয়ে তুলতে বেদানার জুড়ি নেই।