ত্বক উজ্জ্বল রাখতে যেসব ফলের রস বা জুস খাবেন?

চকচকে এবং ঝলমলে ত্বক পেতে কে না পছন্দ করবে? আমরা সকলেই রাসায়নিক বোঝাই সৌন্দর্য পণ্য প্রয়োগ করে একটি সুন্দর এবং ত্রুটিহীন ত্বক পাওয়ার চেষ্টা করি। এটা করতে গিয়ে আমরা যা ভুলে যায় তাহলো উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এক গ্লাস তাজা ফলের রস ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল করতে পারে।

ত্বক স্বাস্থ্য উজ্জ্বল রাখার সব থেকে সাধারণ ও সহজ উপায় হলো প্রচুর তরল গ্রহণ। সেটা ফলের জুস হোক কিংবা পানি। কিছু কিছু ফল আছে যেগুলো ত্বকের জন্য উপকারী।

ফল খেতে আমরা সবাই খুব পছন্দ করি। ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী। প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেকোন ধরণের একটি ফল অবশ্যই থাকা উচিত নিজের সুস্বাস্থ্যের জন্য।

ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো যেকোন বয়সের যে কারোর জন্যে দারুণ উপকারের। এছাড়া এটি আমাদের শরীরের পাশাপাশি ত্বকের জন্যও ভীষণ উপকারী।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল থাকে সবারই। কিন্তু অনেকে ফল চিবিয়ে না খেয়ে ফলের রস খেতে বেশি ভালোবাসেন।

আসুন জেনে নিই, এই ফলের রস শরীরের পাশাপাশি আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী-

পাঁকা পেঁপের জুস:

পাঁকা পেঁপেতে থাকা অ্যান্টি অ্যাজিং প্রপার্টি ত্বকের বয়স ধরে রাখে। ডার্ক সার্কেল যেমন হতে দেয় না, তেমনই সান ট্যান হওয়া থেকেও আমাদের রেহাই দেয়। পেঁপেতে থাকা প্যাপেন নামের এনজাইম স্কিন ড্যামেজ হতে দেয় না।

এছাড়া পেঁপের জুস ভিটামিন “এ” এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন “এ” ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করে, ত্বককে তাৎক্ষণিক হাইড্রেট করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। এই জুসে থাকা পটাসিয়াম ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। তাই পেঁপের রস খান।

গাজরের জুস:

শীতে আপনার ত্বকে সুন্দর প্রানোজ্জ্বল রাখতে চান তাহলে আপনার ডায়েটে গাজরের জুস রাখতে ভুলবেন না। এক কাপ গাজরের জুসে ২০% এর বেশি ভিটামিন “সি” রয়েছে। ভিটামিন “সি” ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন।

এছাড়া ভিটামিন “সি” ও বিটা ক্যারোটিন আপনার ত্বকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল এর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে। ভিটামিন “সি” ত্বকের কোষগুলিকে পুনরুত্থিত করে যা মুখের চামড়া কুঁচকিয়ে যাওয়া রোধ করতে সহায়তা করে।

এছাড়া এতে ভিটামিন “এ”, পটাসিয়াম রয়েছে যা ত্বকের সতেজতা বজায় রাখে এবং ত্বককে আরও উজ্জ্বল করে।

তরমুজের রস:

তরমুজে থাকা ভিটামিন “এ”, “বি”৬, “সি” ত্বকের ভিতর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। ফলে পাওয়া যায় উজ্জ্বল দাগহীন ত্বক। ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেলের সমস্যা দূর করে ব্রণ বা অন্যান্য সমস্যাও কম হতে দেয় এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। তরমুজ এমনিতেই খুব মিষ্টি। তাই সরাসরি তরমুজ থেকে রস বের করে খেয়ে নিন।

বিটরুট:

বিটরুটে থাকা আয়রন এবং পটাসিয়াম সামগ্রী রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। বিটরুটের জুসে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “কে”, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, আয়রন, জিঙ্ক এবং এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব উপাদান রক্ত বিশুদ্ধ করে ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

কমলার রস:

ত্বক উজ্জ্বল করার সবেচেয়ে ভালো উপাদান হলো কমলার রস। কমলার রস প্রতিদিন পান করা আপনার ত্বকের জন্য খুব ভালো কাজ করে। অরেঞ্জ জুস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির সাথে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি”, যা ফ্রী র‌্যাডিক্যাল ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

র‌্যাডিকাল ক্রিয়াকলাপ আপনার ত্বককে নিস্তেজ করে তুলতে পারে এবং ত্বক কুঁচকে যাই ও বার্ধক্যের ছাপ ফেলে। কমলার রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” উপস্থিত একটি যুবকোচিত এবং উজ্জ্বল ত্বক গঠনে সহায়তা করতে পারে।

কমলার ভিটামিন “সি” এক নিমিষেই ত্বক উজ্জ্বল করে। এটি ত্বকের কালচে দাগ দূর করে এবং ত্বক টানাটন করে।

আমের জুস:

স্বাদের জন্য আমতো ফলের রাজা বটেই। কিন্তু ত্বকের উপকার করার জন্যও আমকে রাজা বলাই যায়। আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষ পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। নিয়মিত আম রস খেলে ত্বকের কালো ছোপ দূর হয়। এতে থাকা ভিটামিন “সি” ত্বককে উজ্জ্বল সাহায্য করতে করে।

আপেলের জুস:

ত্বকের জন্য খুবই উপকারী এই আপেলের রস। আপেলের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলিরেখা দূর করে। আমাদের ত্বকের টিস্যু নষ্ট হতে দেয় না বরং নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। আপেলের মধ্যে থাকা কপার, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

এছাড়া আপেলের জুস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির সাথে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি”, যা ফ্রী র‌্যাডিক্যাল ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। র‌্যাডিকাল ক্রিয়াকলাপ আপনার ত্বককে নিস্তেজ করে তুলতে পারে এবং ত্বক কুঁচকে যাই ও বার্ধক্যের ছাপ ফেলে। আপেলের জুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” উপস্থিত একটি যুবকোচিত এবং উজ্জ্বল ত্বক গঠনে সহায়তা করতে পারে।

ডালিমের রস:

ডালিমের রস ফলিক এসিড, ভিটামিন “সি”, সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ডালিমের রস ত্বকের কোষগুলি পূর্নজ্জীবিত করে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়াটি ধীর করতে সহায়তা করে। এই রসে রক্তের পরিষ্কারক বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি ত্বকে প্রাকৃতিক আভা দেয়।

এছাড়া ডালিমে থাকা ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পিউনিক অ্যাসিড আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন এক গ্লাস ডালিমের রস পান করা উচিত।

পালং শাকের রস:

পালং শাকের মধ্যে ভিটামিন “এ” এবং “সি” “ই” এবং ম্যাঙ্গানিজ বেশি থাকে, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। অধ্যয়নগুলি দেখায় যে ভিটামিন “সি” আপনার ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, প্রদাহ এবং ত্বকের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, এগুলি সবই বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

পাতিলেবুর রস:

পাতিলেবুতে আছে ভিটামিন “সি”। আর ভিটামিন “সি” থাকায় একসঙ্গে অনেকগুলো উপকার হয়। ভিটামিন “সি” ত্বককে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে। তাই ত্বক উজ্জ্বল হয়। এছাড়া ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন “সি”।

এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে দুই চামচ লেবুর রস নিন। তার মধ্যে এক চামচ মধু নিন। এটা রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে নিন উপকার পাবেন।

স্ট্রবেরির রস:

স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” রয়েছে যা ত্বক উজ্জ্বল করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রুক্ষা করে। এটি ত্বক নরম রাখে এবং গভীর থেকে উজ্জ্বল করে।

ত্বকের জন্য স্ট্রবেরী দুর্দান্ত। স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন “সি”। ভিটামিন “সি” ত্বককে ফ্রেশ রাখে এবং এটি বয়সের ছাপ কমাতেও দারুণ কার্যকর।

শসার জুস:

শসার জুস পান করলে আমাদের ত্বক ভিতর থেকে স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ থাকে যা ত্বককে সবসময় চাঙ্গা করে রাখে।

আর এটি সম্ভব হয়েছে শসার উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তরের কারণে যা শরীরে প্রদাহকে শান্ত করে, লালচেভাব, ঝাপসা এবং দাগের সম্ভাবনা হ্রাস করে। এছাড়াও আমাদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করে দিতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর রঙ বজায় রাখতে এটি সহায়তা করে থাকে।

টমেটোর রস:

টমেটো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা বার্ধক্যের লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে। এক গ্লাস টমেটোর রস পান করা অবশ্যই ঝলমলে ত্বকের জন্য অন্যতম সেরা রস।

টমেটোর রসে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, এবং লাইকোপেন প্রচুর পরিমানে রয়েছে। এটি বিবর্ণতা, দাগ এবং ব্রণ হ্রাস করে। ভিটামিন “সি” কোলাজেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। collagen- ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনে।

অ্যালোভেরার রস:

অ্যালোভেরার রস সামগ্রিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার ত্বক এবং চুলের জন্য আশ্চর্য। এটি ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যা আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরাতে অক্সিন এবং গিব্বেরেলিনের মতো হরমোন রয়েছে যা ত্বক নিরাময়কারী হিসাবে পরিচিত।

রেফারেন্স:
এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: