দ্রুত ওজন কমানোর ফলে শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে?

প্রতি সপ্তাহে আধা পাউন্ড থেকে দুই পাউন্ড ওজন হ্রাস নিরাপদ। কিন্তু রাতারাতি আপনি যদি আধা পাউন্ড থেকে দুই পাউন্ড ওজন কমাতে চান তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

ওজন বৃদ্ধির একমাত্র অন্যতম কারণ হল খাদ্যাভ্যাস। আর তাই আমরা দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে আমরা একটু বেশি খাবার কন্ট্রোল করে ফেলি। যখন শরীর এক রকম খাবার পেয়ে চলতে অভস্ত হয়ে যায়, ঠিক তখনই হটাৎ করে যদি আমরা খাবারের পরিমাণকে শূন্যতে নিয়ে আসি। তখন শরীর হটাৎ করে সেটা মেনে নিতে পারে না ফলে দেখা দেয় নানা রকম শারীরিক সমস্যা।

অনেক কিশোর-কিশোরীর অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির সমস্যা আছে। এ অতিরিক্ত স্বাস্থ্য থেকে রেহাই পেতে অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর দিকে মনোযোগী হয়। দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে কেউ কেউ এমন কিছু পথ অবলম্বন করে, যা তার ওজন কমায় সত্যি কিন্তু স্বাস্থ্যকে ঠেলে দেয় ঝুঁকির মধ্যে।

চলুন জেনে নেই, দ্রুত ওজন কমাতে গেলে শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দেয়-

শক্তি কমে যাওয়া:

কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি জোগায়, কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। এমনকি দেহের পেশিরও কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন পড়ে কাজের জন্য। সুতরাং হঠাৎ ওজন কমলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে গিয়ে দেহের শক্তি হ্রাস পেতে পারে।

গাউট বাত:

দেহে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে বিভিন্ন অস্থি-সন্ধি বা জয়েন্টে প্রদাহ এবং ব্যথা হয় একে গিঁট বাত বলে। হঠাৎ ওজন কমে গেলে গিঁট বাতের সমস্যা হতে পারে।

পিত্তথলিতে সমস্যা:

পিত্তথলির পাথর হওয়ার একটি কারণ হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া। তাই এই ধরনের সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন যদি দ্রুত ওজন কমে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির অভাব দেখা দেবে:

দেহে পুষ্টির প্রয়োজন হয় সচল থাকতে। শরীরকে ঠিকঠাক রাখতে পর্যাপ্ত পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দ্রুত ওজন হ্রাস করার ডায়েট অনুসরণ করলে আপনার শরীর সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজর অভাব দেখা দেবে।

পেশী হারাতে পারেন:

খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমানো, শরীরের পেশী স্বরকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কারণ দ্রুত ওজন কমানোর কারণে শরীরে ক্যালোরি পরিমান সীমাবদ্ধ থাকে ফলে শরীর শক্তি এবং জ্বালানির জন্য পেশী ভেঙে দিতে পারে।

শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া:

অনেক সময় অতিরিক্ত ডায়েট মেনে চলার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে, যেটা ভয়ের কারণ হয়। তাই দ্রুত ওজন কমানোর কথা চিন্তা না করে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে হবে।

রক্তচাপ কমে যাওয়া:

দ্রুত ওজন কমে যাওয়ার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া। রক্তচাপ কমে গেলে মাথা ঘোরা, ঝিমঝিম করা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হওয়া, দুর্বলতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ওজন কমাতে হলে স্বাস্থ্যকর একটি ডায়েট মেনে চলে ওজন কমাতে হবে।

সবসময় ক্ষুদার্থ মনে হতে পারে:

হটাৎ করে আপনি যখন কম-ক্যালরির ডায়েটে যান, তখন আপনার লেপটিনের মাত্রা- ক্ষুধা এবং তৃপ্তি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন- দুর্বল হয়ে যায়। যখন লেপটিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, তখন এটি আপনার মস্তিষ্ককে বলে শরীরে পর্যাপ্ত চর্বি আছে আপনি পূর্ণ। যা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে আপনাকে। পাশাপাশি শরীরে খাদ্যের অভাবে হজম শক্তি কমতে থাকে।

চাপ বাড়া:

হঠাৎ করে ওজন কমলে বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। এছাড়া দ্রুত ওজন কমানোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে অনেকে সমস্যা দেখা দেয়।

ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন:

দ্রুত ওজন কমানোর ফলে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এছাড়া পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। পানিশূন্যতা ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, পেশী খিঁচুনির মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা:

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য খাবার কম খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হতে পারে। এটি আপনার স্বাস্থ্যে উপর প্রভাব ফেলে। তাই এসব সমস্যা এড়াতে বিশেষজ্ঞ একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েই ওজন কমানো সবচেয়ে ভালো।

রেফারেন্স: