প্রতিদিন কতটুকু জল বা পানি পান করা উচিৎ।

মানবদেহে প্রায় ৬০ শতাংশ পানি। আমাদের দেহ থেকে সারাদিন ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকে প্রস্রাব এবং ঘামের মাধ্যমে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো নিয়মিত শরীরের কাজ থেকেও অধিক পরিমাণে পানি হারায়।

প্রতিনিয়ত আমাদের শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায়। তা পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা হারানো পানির পরিমাণ পূরণ করতে না পারি তাহলে আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

তাই ডিহাইড্রেশন রোধ করতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণত আটটি ৮ আউন্স অর্থাৎ দিনে প্রায় ২ লিটার পানি পানে পরামর্শ দেন।

পানিশূণ্যতার কারণে দেহে নানা রোগ হতে পারে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে, হার্ট অ্যাটাকের রিস্ক কমাতে, কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা কমাতে, ত্বক ভালো রাখতে, শরীর থেকে টক্সিক জাতীয় পদার্থ বের করে দিতে পানি খুবই উপকারী।

  • প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য দিনে ১১.৫ কাপ (২.৭ লিটার) পানি (জল) পান করা উচিৎ।
  • প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য প্রতিদিন ১৫.৫ কাপ (৩.৭ লিটার) পানি পান করা উচিৎ।

পানির পাশাপাশি এর মধ্যে রয়েছে চা বা জুসের মতো পানীয়। আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার গ্রহণ করি তা থেকে ২০ শতাংশ পানি পায়।

আপনার কতটা জল বা পানি প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনি যে পরিবেশে থাকেন তার উপর। গরম, আর্দ্র বা শুষ্ক এলাকায় বেশি পানির প্রয়োজন হয়। আপনি যদি পাহাড়ে বা উচ্চতায় থাকেন তবে আপনার আরও বেশি পানির প্রয়োজন হবে।

আপনার খাবারের তালিকায় যদি লবণাক্ত, মসলাযুক্ত বা চিনিযুক্ত খাবার বেশি থাকে তবে পানি বেশি পরিমাণে পান করতে হবে। এছাড়া আপনার শরীরে যদি প্রচন্ড ঘাম হয় তাহলে তুলনামূলক ভাবে আপনাকে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

যদি আপনার সংক্রমণ বা জ্বর থাকে, অথবা আপনি যদি বমি বা ডায়রিয়ার মাধ্যমে তরল পদার্থ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনাকে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। আপনার যদি ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্যে সমস্যা থাকে তবে আপনার আরও পানির প্রয়োজন হবে।

গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের পানির পরিমাণটা বেশি হবে। আপনি যদি গর্ভবতী হন বা আপনার শিশুকে নার্সিং করেন, তাহলে হাইড্রেটেড থাকার জন্য আপনাকে অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে।

অনেক লোক দাবি করে যে আপনি যদি সারাদিন হাইড্রেটেড না থাকেন তবে আপনার শক্তির মাত্রা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।

মহিলাদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ব্যায়ামের পরে ১.৩৬ শতাংশ পানি ঝরে যায় এবং মেজাজ এবং মাথাব্যথার তীর্বতা বৃদ্ধি পায়।

এমনকি হালকা ডিহাইড্রেশন শারীরিক কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। বয়স্ক, সুস্থ্য পুরুষদের উপর একটি ক্লিনিকাল গবেষণা রিপোর্ট করেছে যে শরীরের পানির মাত্র ১ শতাংশ হ্রাস তাদের পেশী শক্তি, শক্তি এবং সহনশীলতা হ্রাস করেছে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে?

বেশি পানি পান করলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষুধা কমিয়ে শরীরের ওজন কমতে পারে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান শরীরের ওজন এবং শরীরের গঠন স্কোর হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত।

গবেষণার আরেকটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের সাথে যুক্ত ছিল। দেখা যায় যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি।

  • শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে প্রাকৃতিক ভাবেই আপনি তৃষ্ণা অনুভব করবেন। তাছাড়া আপনার প্রস্রাবের রং বলে দিবে পানি খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কিনা। যদি প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে আসে, তবে বেশি বেশি পানি পান করুন। আর দেহের ঘাম ঝরলে পানি পান করতে একদমই ভুলবেন না।
রেফারেন্স: