করোনাভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে, সেই ফুসফুস সুস্থ্য রাখতে কি কি খাবেন।

ফুসফুস – স্পঞ্জী, গোলাপী অঙ্গটি আমাদের বুকে দুটি উল্টো ডাউন কোনের মতো দেখায়। ডান ফুসফুস তিনটি লব দ্বারা গঠিত। বাম ফুসফুসে আপনার হার্টের জন্য জায়গা তৈরি করার জন্য দুটি লব রয়েছে। ফুসফুসগুলি শ্বাস-প্রশ্বাস (breathing ) সিস্টেমের কেন্দ্রস্থল।

জীবিত ও সুস্থ্য থাকতে শরীরের প্রতিটি কোষের অক্সিজেনের প্রয়োজন। আবার শরীরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে মুক্তি পাওয়াও দরকার। ফুসফুসগুলি প্রতিবার নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় এই গ্যাসগুলি (অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড) বিনিময় করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

ফুসফুস আমাদের শরীরের কার্যকারিতা ভালোভাবে পরিচালিত করতে কত বড় ভূমিকা পালন করে তা আর কি বলবো। ধূমপান ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর সেটা জেনেও ধূমপান করে চলেছি।

একবিংশ শতাব্দীর এই যান্ত্রিক যুগে পরিবেশ দূষণ যেভাবে বেড়েছে তাতে প্রতিনিয়ত ফুফফুসের প্রতি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই দূষকগুলি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসকষ্টজনিত স্বাস্থ্যের সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

এছাড়া ভাইরাসের আক্রমণ তো রয়েছে। বলা বাহুল্য, বর্তমানে করোনাভাইরাসের মহামারী চলছে। দুর্বল ফুসফুস (Lungs) সম্পন্ন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি।

আপনার ফুসফুস সুস্থ্য রাখার সবথেকে ভাল উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং একটি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। স্বাস্থ্যকর ডায়েট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যেকোন অসুস্থ্যতা থেকে দূরে রাখে।

ফুসফুস ভালো রাখার খাবার

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) এর মতে, ২৩৫ মিলিয়ন মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত, এটি একটি নির্ধারিত রোগ এবং এর চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং, আপনি যদি আপনার ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে চান তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি এমন কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করেছেন যা আপনার ফুসফুসকে সক্রিয় ও কার্যকর রাখতে সহায়তা করবে।

আপেল:

স্বাস্থ্যকর ফুসফুস আমরা সকলে চাই। আর সেজন্য আমাদের নিয়মিত আপেল খেতে হবে। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড ও পলিফেনল নামক উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান উপাদান। প্রতিদিন আপেল খাওয়ার অভ্যাসের মধ্যেমে আপনি আপনার ফুসফুসকে ভালো রাখতে পারেন।

আপেলের মধ্যে পেকটিন নামক ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রনালীতে কোলেস্টরেল জমতে দেয় না। যার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে। এছাড়াও, আপেলের খোসার মধ্যে যে ফেনলিক উপাদান রয়েছে, যা রক্তনালীর থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। ফুসফুস সুস্থ্য থাকে ও কার্যকারিতা বেড়ে যায়।

আখরোট:

ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের দুর্দান্ত উৎস আখরোট, হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় লড়াই করতে সহায়তা করে। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস আখরোট। “আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশনের জার্নাল” অনুসারে নিয়মিত আখরোট গ্রহণের অভ্যাস হাঁপানি ও অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

আদা:

আদা কেবল প্রদাহ বিরোধী নয়, এটি ডিটক্সিফাইংয়ে সহায়তা করে এবং ফুসফুস থেকে দূষক নির্মূলের কাজ করে। আদা রক্তজমাট উপশম করতে, এয়ার-প্যাসেজগুলিকে মুক্ত রাখা এবং ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, ফুসফুসের স্বাস্থ্য আরও বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

রসুন:

রসুনে ফ্লাওনয়েড থাকে যা গ্লুটাথিনের (glutathione) উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা টক্সিন এবং কার্সিনোজেন নির্মূলের উন্নতি করতে সহায়তা করে, আপনার ফুসফুসকে আরও ভালভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

পানি:

স্বাস্থ্যকর ফুসফুসের জন্য পানি প্রয়োজনীয়। আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফায়িং করার জন্য পানির থেকে ভালো কিছু নেই। শরীরে পানির অভাব হলে ফুসফুসে জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ হয়। আমাদের দিনে কমপক্ষে ৮-১০-গ্লাস পানি পান করা উচিত।

বিভিন্ন ধরণের শিম ও বেরি:

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, শিম ফুসফুসের স্বাস্থ্যকে ভালো করে তোলে। কিডনি, পিন্টো, কালো এবং অন্যান্য শিমগুলি হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির ভাল উৎস, যা ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে এমন ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে।

বেরিগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিতে সমৃদ্ধ, যা ফুসফুসকে সুরক্ষা দেয়। অ্যাকাই বেরি এবং ব্লুবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের শীর্ষ দুটি উৎস, তবে ক্র্যানবেরি, আঙ্গুর এবং স্ট্রবেরিও ফুসফুসের জন্য ভাল।

ফ্যাটি ফিশ:

উচ্চ ফ্যাটযুক্ত মাছগুলি স্বাস্থ্যকর ফুসফুসের জন্য একটি দুর্দান্ত উৎস কারণ তাদের মধ্যে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি উচ্চ মাত্রায় থাকে যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

হলুদ:

হলুদে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারণ এতে রয়েছে কারকিউমিন যৌগ। এই যৌগটি হাঁপানির সাথে জড়িত শ্বাসনালী এবং প্রদাহজনিত উপশম থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।

ব্রকোলি:

ব্রকলি ফুসফুস থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া পরিষ্কার করে প্রতিরোধ শ্বাস-প্রশ্বাস সিস্টেমকে ভালো রাখে। ব্রকলিতে পাওয়া একটি যৌগ এখন ফুসফুসজনিত রোগীদের চিকিৎসা হিসাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

কীভাবে ফুসফুসকে আরও শক্তিশালী করতে পারি?

ধূমপান বন্ধ করুন। ভিটামিন অর্থাৎ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান। ফ্লু ভ্যাকসিন এবং নিউমোনিয়া ভ্যাকসিনের টিকা নিন। পরিমিত ব্যায়াম করুন। ঘরে বসেই নিঃশ্বাসের ব্যায়ামগুলো (অনুলম-বিলম, ভস্ত্রিকা, কপালভাতি) দিয়ে শুরু করুন। ঘরে প্রচুর বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

কোন ভিটামিনগুলো ফুসফুস ঠিক রাখতে সহায়তা করে?

বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি” এবং ভিটামিন “ই” ফুসফুসে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই ভিটামিনগুলির পাশাপাশি ভিটামিন “ডি” ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

ফুসফুসের জন্য শাক-সবজি কি ভাল?

সার্বিক ফুসফুসের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে এবং ফুসফুসকে প্রদাহ এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য শাক-সবজি হল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি পাওয়ার হাউস। বিশেষজ্ঞের মতে, এই খাবারগুলিতে ক্লোরোফিল থাকে যা এগুলিকে তাদের সবুজ রঙ দেয় এবং ফুসফুসে রক্ত প্রবাহকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

সূত্রঃ হেলথলাইন, NDTV