ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ “আমড়া” ভাইরাল ইনফেকশন, সর্দি-কাশি ও বার্ধক্য প্রতিহত করে।

আষাঢ় শ্রাবণ মাসে অর্থাৎ বর্ষাকালে সুস্বাদু আমড়া বাজারে উঠতে শুরু করে। আমড়ার দুটি প্রজাতি আছে দেশি আমড়া ও বিলাতি আমড়া। আমরা বিলাতি আমড়ার সাথে একটু বেশি পরিচিত দেশি আমড়ার তুলনায়। বর্ষার শুরুতেই কচি কচি আমড়ার টক খুবই লভনীয়।

আমড়া ইংরেজিতে Hog plum বা Indian Hog Plum নামে পরিচিত এবং বৈজ্ঞানিক নাম Spondias mombin. ল্যাটিন আমেরিকা আমড়ার আদি বাসস্থান। আমড়া অনেক উপকারী একটি ফল।

কিছুটা অস্বাস্থ্যকর হলেও স্কুল ছুটির পরে বা টিফিনে স্কুল গেটের সামনে অস্থায়ী দোকান থেকে সুস্বাদু আমড়া মাখা কিনে খাওয়ার মজাটাই আলাদা। কাসুন্দি বা সর্ষে বাটা, বিট লবন, শুকনো মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি দিয়ে বাড়িতে মেখে খেতে পারি। চানাচুর মাখাতেও আমড়া দেওয়া হয়।

মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে আমড়ার তুলনা হয় না। এছাড়া এটি হজমের জন্য ভালো। কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে। আমড়াতে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমান আপেলের থেকে বেশী। আমড়াকে গোল্ডেন আপেলও বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে অসস্তি লাগে। এই অসস্তিভাব দূর করতে আমড়া খেতে পারেন।

আমড়ার পুষ্টি উপাদান:

১০০ গ্রাম আমড়াতে ভিটামিন “সি” আছে ২০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন আছে ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, সামান্য ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, আয়রন আছে ৪ মিলিগ্রাম।

আমড়ার উপকারিতা:

আমড়ার কিছু ভেষজগুণও রয়েছে। এটি পিত্তনাশক ও কফনাশক। নিচে আমড়ার গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা দেওয়া হল:

মুখের রুচি বৃদ্ধিতে:

ভিটামিন “সি”-তে ভরপুর আমড়া মুখের রুচি বৃদ্ধি করতে দারুন কার্যকরী। আমড়া খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হয় ও ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। তাই রুচি বাড়াতে নিয়মিত ফলটি খাওয়া যেতে পারে। জ্বর থেকে ওঠার পরে খাবার খাওয়ার রুচি থাকে না খাবার খেতে ইচ্ছা করেন। এ সময়ে অরুচিভাব দূর করতে আমড়া খেতে পারেন।

হজমের জন্য ভালো:

আমড়া ফাইবার এর চমৎকার উৎস। আমড়াতে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায় এবং এতে ক্যালোরির পরিমাণ ও কম। ফাইবার বেশি থাকার কারণে আমড়া আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

আইরন সমৃদ্ধ:

আমড়াতে প্রচুর পরিমানে আয়রন রয়েছে। আয়রন এমন একটি খনিজ উপাদান যেটা আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ১০০ গ্রাম আমড়াতে ৩.২ মিলিগ্রাম আইরন রয়েছে। যদি আমরা দৈনিক ১০০ গ্রাম আমড়া খাই তবে আমাদের দৈনিক আয়রনের চাহিদার ১৮% পূরণ হবে।

বার্ধক্য প্রতিহত করতে:

ভিটামিন “সি” একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে ফ্রি রেডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন “সি” মানুষের দেহে কোলাজেন প্রোটিন উৎপাদনে সহায়তা করে। এই কোলাজেন প্রোটিন মানুষের চামড়ায় পাওয়া যায়। কোলাজেন প্রোটিন ত্বকের উজ্জ্বলতা, দৃঢ়তা বজায় রাখে এবং ত্বকের কুঁচকানো প্রতিরোধ করে বুড়া হওয়া বিলম্বিত করতে সাহায্য করে।

হাড় মজবুত করে:

আমড়াতে ক্যালসিয়ামের পরিমান বেশী। প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে আমড়ার তুলনা হয় না। হাড়ের যেকোনো রোগ দূর করে হাড়কে শক্তিশালী করে এই ক্যালসিয়াম। এছাড়া আমড়াতে ভিটামিন-K ও রয়েছে। ভিটামিন K রক্তক্ষরণ কমায় অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। শিশুদের দৈহিক গঠনে ক্যালসিয়াম খুবই দরকারি। এই ফলে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় শিশুদের এই ফল খেতে উৎসাহিত করতে পারেন।

দাঁত ও মাড়ি মজবুত করে:

ভিটামিন “সি” ও ক্যালসিয়াম থাকার কারণে দাঁত ও মাড়ি মজবুত রাখে। পাশাপাশি স্কাভি, দাঁত ও মাড়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

সর্দি-কাশিতে:

সর্দি কাশি ও জ্বরের উপশমেও আমড়া অত্যন্ত উপকারী। এখন আমড়া প্রায় সারাবছর জুড়ে পাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে এটি বেশি পরিমানে পাওয়া যায়। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে দামে সস্তা এই ফলটি আমরা অবশ্যই খাব।

ভাইরাল ইনফেকশন:

আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি শক্তিশালী থাকবে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাল ইনফেকশন থেকে আমরা তত বেশি নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবো। যেহেতু আমড়া ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ এজন্য আমড়া বিভিন্ন ভাইরাল ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্র: wikipedia