ডেলিভারির পর প্রথম পিরিয়ড কখন শুরু হয়। বেশি দেরি হলে কোন বিষয়ে সজাগ থাকবেন।

ডেলিভারির পর প্রথম পিরিয়ড। অনেকেরই এই বিষয়টি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। কাঙ্খিত প্রেগন্যান্সি শুরু মানে তো কাঙ্খিত পিরিয়ড বন্ধ। আপনি আপনার পিরিয়ড থেকে কমপক্ষে নয় মাসের স্বাধীনতা পাবেন।

৯ টা মাস পর ক্যালেন্ডারে দাগ দেওয়া ভুলতে বসা দিনগুলো মায়েরা মনে করতে করতে প্রেগন্যান্সি শেষের পরে নতুনের আগমন উপভোগ করতে করতে আবার পিরিয়ড বা মাসিকের আগমন। একটু আগে বা কারো কারো একটু ভুগিয়ে দেরিতে আগমন।

সৃষ্টির রহস্য বা মাতৃত্বের বীজ বোনা যে প্রক্রিয়ার ভেতর সেটা হাজার অস্বস্তি,  অসহনীয় ব্যথা সহ্য করতে হলেও সকল মায়ের আখাঙ্খিত এই পিরিয়ড বা মাসিক, ডেলিভারির কতদিন পরে শুরু হয়? ডেলিভারির পরেই যে রক্তপাত চলতে থাকে সেটা পিরিয়ড কিনা এটা নিয়েও অনেকে দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগে।

অনেক মায়েরা বাচ্চা হওয়ার পরে ভারী, দীর্ঘ বা বেশি বেদনাদায়ক সময় অনুভব করেন। আমরা জানি, স্বাভাবিক অবস্থায় জরায়ু কেমন থাকে। এই পরিবর্তনগুলি বৃহত্তর জরায়ু গহ্বরের সাথে সম্পর্কিত যার ফলে আরও এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুতে আঠালো আস্তরণ) ঝরতে পারে। কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে, তাদের পিরিয়ডের উন্নতি অর্থাৎ খুব বেশি সমস্যা হয় না।

প্রসবোত্তর সময় গর্ভাবস্থার আগের তুলনায় ভারী এবং বেদনাদায়ক হতে পারে, অথবা এটি হালকা এবং সহজ হতে পারে। কিছু মহিলাদের প্রথম প্রসবোত্তর পিরিয়ড হয় লোচিয়ার কিছুদিন পরে, অন্যদের অনেক মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে, বিশেষ করে যেসব মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।

ডেলিভারির কতদিন পরে পিরিয়ড শুরু হতে পারে?

আপনার পিরিয়ড সাধারণত সন্তান জন্ম দেওয়ার ছয় থেকে আট সপ্তাহ (দেড় থেকে দুই মাস) পরে ফিরে আসে, যদি আপনি সন্তানকে বুকের দুধ পান না করান।

আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরে আসার সময় পরিবর্তিত হতে পারে। যারা একচেটিয়া বুকের দুধ খাওয়ানোর অনুশীলন করে তাদের বুকের দুধ খাওয়ানোর পুরো সময়টি মাসিক নাও শুরু হতে পারে।

লোচিয়া এবং সাধারণ মাসিক বা পিরিয়ড কি এক?

আপনার সি-সেকশন হয়েছে বা যোনিপথে প্রসব করা হোক না কেন, জন্ম দেওয়ার পর আপনার ছয় থেকে আট সপ্তাহ রক্তক্ষরণ হবে। যাইহোক, এটি ঋতুস্রাব হিসাবে বিবেচিত হয় না। একে লোচিয়া বলা হয়।

বাচ্চা হওয়ার পুরো প্রসেসটা একেবারে সহজ ভাবলে ভুল হবে এবং মায়ের শরীরের অনেক পরিবর্তন দেখা যায়।  ডেলিভারির পরে শরীর চেষ্টা করে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে।

বেশ কিছুদিন বা অনেকের ক্ষেত্রে কিছু সপ্তাহ এই লোচিয়া স্থায়ী থাকে। দিনের পর দিন ব্লিডিং-এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং রং হাল্কা হতে থাকে। ঘন লাল বা কালচে লাল রং-এর ডিসচার্জ ধীরে ধীরে গোলাপি এবং শেষ পর্যায়ে সাদাটে, স্বচ্ছ হয়ে যায়।

এইসময় তলপেটে পিরিয়ডের মতোই ব্যথা হতে পারে কারণ জরায়ুর সংকোচন শুরু হতে থাকে। শরীরের ওপর ভিত্তি করে এই লোচিয়া ২৪-৩৬ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে, এই স্থায়িত্বের কম বেশি হতেই পারে। লোচিয়া ও মাসিক সম্পূর্ণ আলাদা।

যারা বাচ্চাকে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিড করান, তাদের জন্য ব্যাপারটা কেমন?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে মায়েরা বাচ্চাদের শুধুমাত্র বুকের দুধই খাওয়ান; তাদের মাসিক খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসে না। এর জন্য দায়ী অবশ্যই হরমোন। প্রোল্যাকটিন নামের যে হরমোন ব্রেস্টমিল্ক তৈরি করে; সেইটি জননে জড়িত হরমোন বা রিপ্রোডাক্টিভ হরমোনগুলিকে দাবিয়ে রাখে। ফলস্বরূপ মায়ের শরীরে পুনরায় অভ্যুলেশন বা ডিম্বস্ফোটন শুরু হয় না। আর এর ফলেই স্বাভাবিকভাবেই পিরিয়ড হয় না।

পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে সেটা কি ব্রেস্টমিল্কের সাপ্লাই কমিয়ে দেয়?

না, একেবারে কমিয়ে দেয় এটা বলা ঠিক হবে না। তবে, কিছুটা প্রভাব অবশ্যই ফেলে। ডেলিভারির পরে যখন পুনরায় মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হয়; তখন ব্রেস্ট মিল্কের পরিমাণে বা তার প্রতি বাচ্চার আচরণে কিছুটা পরিবর্তন হলেও হতে পারে।

হরমোনের কার্যকারিতার জন্যই হতে পারে, ব্রেস্ট মিল্কের পরিমাণ একটু কমে গেল বা ব্রেস্ট মিল্ক গঠনগতভাবে কিছুটা বদলে গেল। বদলাতে পারে এর স্বাদও। বাচ্চা সেই স্বাদবদলটাই হয়তো বুঝে ফেলে কিছুদিন একটু অদ্ভুত আচরণ করল। খেতে চাইল না বেশি বা কম খেলো।

তবে, যে পরিবর্তনই হয় তা নেহাতই নগণ্য। সব বাচ্চা এই স্বাদবদল বুঝতেও পারে না, আর যারা পারে, তারা দুদিন পরেই আবার নিজের খাওয়ার ছন্দে ফিরে আসে। কাজেই, এই পরিবর্তনে ঘাবড়ে যাওয়ার একেবারেই কোনও প্রয়োজন নেই।

ডেলিভারির আগে এবং পরে হওয়া পিরিয়ডের মধ্যে কী পার্থক্য থাকে?

ডেলিভারির পরে যখন আবার নতুন করে পিরিয়ড শুরু হয়, প্রথমদিকে তা একটু বদলে যায় বই কি! মায়ের শরীর আবার নতুন করে মাসিকচক্রের জন্য প্রস্তুত হয়; মাসিকের নিয়মিত ছন্দে ফিরে আসার জন্য তৈরি করে নিজেকে । ডেলিভারির পরে প্রথম হওয়া পিরিয়ড তাই অনেকটাই আলাদা অনুভূতি নিয়ে আসে। যেমন;

আগে যেমন হতো, তার থেকে বেশি ব্যথা, তলপেটে টান
ব্লিডিং শুরু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেল, আবার শুরু হলো; অর্থাৎ অনিয়মিত
বেশি মাত্রায় ব্লিডিং
প্রত্যেক মাসে মাসিক নিয়মিত হতেও সময় লাগতে পারে
জরায়ুর দেওয়াল আগের থেকে মোটা হয়ে যায় বলেই তা খসে পড়ার সময় তলপেটে মাসল ক্র্যাম্প বেশি হয়। আস্তে আস্তে, এই ব্যথা কম হতে থাকে এবং পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই আবার আগের মতোই পিরিয়ড হতে শুরু করে।
আবার দেখা যায়, গর্ভবতী হওয়ার আগে যেসব মহিলার এন্ডমেটরিওসিস (endometriosis)-এর মতো সমস্যা ছিল, ডেলিভারির পরে তাদের ক্ষেত্রে ব্লিডিং-এর পরিমাণ কমে যায়। শারীরিক কোনও সমস্যা বা পিটুইটারি গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই পিরিয়ডে প্রভাব পড়ে। সেক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি।

সুত্র:

https://www.healthline.com/health/pregnancy/first-period-postpartum#1