সকালে না খেলে কি কি ক্ষতি হয়?

সকালে ঘুম থেকে উঠে না খেয়ে দিনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয় আমরা অনেকেই। কেউ বা অফিসে বের হওয়ার তাড়ায় আবার কেউ ঘরের কাজের চাপে দেরি করে সকালের খাবার খেয়ে থাকেন। কেউ আবার সকাল আর দুপুরের খাবার একসাথে খান।

কেউ কেউ ভাবেন সকালের খাবার না খেলে ওজন কমানো যায়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। কারণ সকালের দিকে শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বেশি থাকে ফলে যা খাওয়া হয় তা হজম হয়ে যায়।

ক্যালরিরও চাহিদা বাড়ে তাড়াতাড়ি, তাই যারা সকালের নাস্তা করেন না স্বাভাবিকভাবেই তারা দুপুরে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। সকালের খাবার খেলে এই অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সকালবেলা খাবার না খাওয়ার ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে তা কল্পনার বাইরে। যারা নিয়মিত সকালের খাবার খাই না, তাদের হাঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়।

এছাড়া হরমোনাল ইমব্যালেন্স সহ আরও নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই আমাদের উচিৎ কম করে হলেও সকালের খাবার খাওয়া।

সকালে না খাওয়ার ক্ষতিকর দিকসমূহ:

চলুন জেনে নেওয়া যাক, সকালে না খেলে কি কি ক্ষতি হয়-

ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে :

সকালের খাবার না খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তার সাথে সাথে শরীরে গ্লকোজ টলারেন্স বেড়ে যায়, যা এক সময়ে গিয়ে ইনসুলিন রেজিটেন্স হওয়ার পথকে প্রশস্ত করে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

কারণ হচ্ছে যখন আমরা দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকি, তারপরে ক্ষুধার্ত হওয়ার কারণে প্রচুর খাই, তখন রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পায়- যা শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে থাকে।

বুদ্ধি বা স্মৃতিশক্তি কমে যায় :

যারা নিয়মিত সকালের খাবার খাই তাদের স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। সকালে খাবার খেলে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ে এবং মস্তিষ্ক তীক্ষ্ম হয়। সকালের খাবার না খেলে শরীরে গ্লকোজ লেভেল কমতে থাকে।

সেই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে ব্রেনে পুষ্টির ঘাটতি শুরু হয়। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধির ধারও কমতে শুরু করে।

ওজন বৃদ্ধি পায় :

আমরা অনেকেই ভাবি সকালে না খেলে হয়তো ওজন কমে। এই ধরণাটা কিন্তু একেবারেই ভুল। বরং ওজন কমাতে চাইলে বা স্বাভাবিক রাখতে চাইলে প্রতিদিন অল্প করে হলেও সকালে খেতে হবে।

কারণ সকালের খাবার না খেলে দুপুরের সময় আসতে আসতে এতটাই ক্ষিদে পেয়ে যায় যে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হতে হতে এক সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

শক্তি কমে যায় :

সকালের খাবার সারাদিনের কাজ করার শক্তি জোগায়। সকালে যদি খাবার না খান তাহলে রাতে ও পরের দিন দুপুরের মধ্যে যে ব্যবধান হয় তা একদমই শক্তিকে কমিয়ে দেয়।

সকালে খাবার না খেলে সারাদিনে কাজে শক্তি পাওয়া যায় না। শরীরের ভিতর দুর্বল অনুভব হয়। কোন কাজ করতে গেলে ঠিকমতো শক্তি দিয়ে কাজ করা যায় না। সকালের খাবার থেকে দৈনন্দিন শক্তির ২৫ শতাংশ সরবরাহ হয়।

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে :

সুস্থ জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সকালে খাবার খাওয়া। যেসব লোক সকালের খাবার না খেয়ে থাকেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২৭ শতাংশ বেশি।

সকালে না খেলে বা দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকলে শরীরের ওপর চাপ পড়ে এবং শরীরের পক্ষে কাজ সম্পাদন করা কঠিন হয়। ফলে হৃদরোগ সংঘটিত হয়।

রেফারেন্স: