ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়।

মানুষের শরীরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি হলো ফুসফুস। শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ, কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনসহ দেহের অনেক জরুরি কাজ করে থাকে ফুসফুস।

যখনই ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেনের যোগান দিতে পারে না, তখনই শরীরে তৈরি হয় নানা জটিলতা।

অক্সিজেন গ্রহণ করে রক্তে সরবরাহ করা এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেওয়া এটাই হলো ফুসফুসের প্রধান কাজ। ফুসফুসকে বলা হয় প্রাণীর চালিকাশক্তি।

তাই আমাদের সকলের উচিৎ ফুসফুস সুস্থ্য রাখা।

দুর্বল ফুসফুস (Lungs) সম্পন্ন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। ফুসফুস সুস্থ্য রাখার সবথেকে ভাল উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।

ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য করণীয়:

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কয়েকটি উপায় সম্পর্কে:

পানি পান:

ফুসফুস শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ এবং তার জন্যও পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। শরীরের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকলে ফুসফুসের ‘মিউকোসাল লাইনিং’ বা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি পাতলা থাকবে এবং তা ভালোভাবে কাজ করবে। এতে করে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম:

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকরী। ‘ডায়াফ্রাগম্যাটিক ব্রিদিং’, ‘পার্সড লিপস ব্রিদিং’, প্রাণায়াম ইত্যাদি কার্যকর এবং পরিচিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম।

চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক এই ব্যায়ামগুলো অনুশীলন করলে ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা বাড়বে এবং ফুসফুস স্বাস্থ্যবান হবে। যাতে করে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ধূমপান ত্যাগ করা:

ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কোষ স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দুর্বল হয়ে থাকে বলে তাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও সবার থেকে বেশি থাকে। সাধারণ মানুষ অপেক্ষা ধূমপায়ীরা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ধূমপান ত্যাগ আবশ্যক।

বাদাম ও লেবুজাতীয় ফল খান:

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াস থাকে। যা খাদ্যাভ্যাসের জন্য খুবই উপকারী। এটি ফুসফুসের স্বাস্থ্যকর কার্যাবলী ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

আবার প্রতিদিন লেবুজাতীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। এধরনের ফলে থাকে ভিটামিন-সি যা ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে।

আপেল:

আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড ও পলিফেনল নামক উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান উপাদান। প্রতিদিন আপেল খাওয়ার অভ্যাসের মধ্যেমে আপনি আপনার ফুসফুসকে ভালো রাখতে পারেন।

আদা:

আদায় আছে প্রদাহরোধী উপাদান যা ফুসফুস থেকে বিষাক্ত উপকরণ দূর করে এবং ফুসফুসকে ভালো রাখে। আপনি আদা কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন আবার চা এর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় হিসাবে আদা খুব উপকারী।

রসুন:

রসুনে ফ্লাওনয়েড থাকে যা গ্লুটাথিনের (glutathione) উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা টক্সিন এবং কার্সিনোজেন নির্মূলের উন্নতি করতে সহায়তা করে, আপনার ফুসফুসকে আরও ভালভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

শোয়া-বসার ধরন:

কীভাবে শুয়ে ঘুমান বা বসেন তার ওপর একজন মানুষের ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা নির্ভর করে। বসার সময় যদি সামনের দিকে ঝুঁকে বসেন বা পিঠ সোজা রেখে না বসেন তবে ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে।

কারণ এভাবে বসলে ফুসফুস সংকুচিত হয়ে থাকে লম্বা সময় ধরে। আর একসময় তা আর প্রসারিত হয়ে স্বাভাবিক হতে পারে না। তাই সবসময় সোজা হয়ে বসার অভ্যাস করতে হবে।

রেফারেন্স: