যোগব্যায়াম করুন এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন।

আজকের এই অতি আধুনিক বিশ্বে আমাদের মন ও শরীর সবসময় দৌড়াচ্ছে। কেন দৌড়াচ্ছে? চাহিদা ও ইচ্ছা পূরণের বাসনা। এতো চাহিদা আমাদের এবং এতো বাসনা তা বলতে গেলে মুখও ব্যাথা হয়ে যাবে। বিরতিহীন কাজ। শুধু কাজ করো। শুধু ছুটে চল। আর তুমি যদি এটা না কর তাহলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তুমি বিপন্ন হবে। কেন এই মানসিকতা?

যোগব্যায়াম অনুশীলন মনের শান্ত ও নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন। এতো কিছু চিন্তা না করে, এতো না ছুটাছুটি করে, চোখ বন্ধ করে আপনি একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন। কয়েক মিনিটের ধ্যান আপনার বিরক্তিকর চিন্তাগুলিকে দূর করবে।

মস্তৃষ্ক সুস্থ্য ও সক্রিয় রাখতে এটি সবচেয়ে কার্যকরী প্রাকৃতিক ঔষধগুলির মধ্যে একটি হলো যোগব্যায়াম। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যোগব্যায়াম দারুন কার্যকরী। যেকোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত যোগব্যায়ামের অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যোগব্যায়ামের স্বাস্থ্য সুবিধা :

Yoga বা ইয়োগা বা যোগা একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ হলো –শরীর ও মনের সমন্বয়। নিচে যোগব্যায়ামের স্বাস্থ্য সুবিধা আলোচনা করা হলো –

শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি :

যোগব্যায়াম শরীরকে নমনীয় করে। আপনি সামনে কাত হয়ে হাত দুটো পায়ের পাতায় ছোঁয়াবেন বা পা ছড়িয়ে বসে কপালটা হাঁটুতে স্পর্শ করবেন। আপনি সক্ষম হবেন না। কিন্তু আপনি যদি চেষ্টা করতে থাকেন দেখবেন ধীরে ধীরে কত সহজে আপনি এটা করতে পারছেন।

প্রথম প্রথম আপনি অনেকটা ব্যাথা ও যন্ত্রনা অনুভব করবেন। মনে হবে, আপনার মাংসপেশি, শিরা-উপশিরা ছিঁড়ে যাচ্ছে। নিয়মিত যোগব্যায়াম অভ্যাস করলে হঠাৎ করেই বা কাকতালীয়ভাবে ব্যাথা উধাও হয়ে যাবে। হাঁটু, মেরুদন্ড, কোমর, কটিদেশীয় মেরুদন্ড এগুলির নমনীয়তা বাড়বে।

শক্ত পেশী তৈরি করে :

শক্তিশালী পেশি ভালো চেহারা থেকে মূল্যবান। প্রচলিত এই কথাটি বা ধারণাটি অনেকেই গুরুত্বসহকারে মেনে চলে। নিয়মিত যোগব্যায়াম অভ্যাস আমাদের পেশিকে শক্ত ও দৃঢ় করে। যৌগিক ব্যায়াম দেহ অভ্যান্তরের স্নায়ুগুলিকে, গ্রন্থিগুলিকে ও অন্যান্য যন্ত্রগুলিকে যে রকম পুষ্ট ও সবল করতে পারে অন্য কোনো ব্যায়াম সে রকম করতে পারে না।

স্নায়ুমন্ডলী আমাদের এই দেহযন্ত্রকে চালিত করে। মস্তিষ্ক স্নায়ুমণ্ডলীর কেন্দ্রস্থল। এই স্থান থেকে বিভিন্ন স্নায়ুর সাহায্যে যে আদেশ প্রেরিত হয়- তা মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গকে চালিত করে।

রক্তপ্রবাহ বাড়ায় :

সবথেকে কার্যকরী ও অধিক জনপ্রিয় একটি আসন হলো- শীর্ষাসন। আজও দেশি-বিদেশী এমন কোনো ব্যাবস্থা বা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, যা মস্তিষ্কের মধ্যে প্রচুর রক্ত প্রবাহিত করে মস্তিষ্ককে সবল ও অধিক কর্মক্ষম করতে পারে।
যোগব্যায়াম মস্তিষ্কে অধিক রক্ত পাঠিয়ে মস্তিস্ককে সবল ও অধিক কর্মক্ষম করে তোলে।

sirsan yoga
শীর্ষাসন

সর্বাঙ্গাসন ও মৎস্যাসন এনডোক্রিন গ্রন্থিসমূহ যথা থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড ইত্যাদি গ্রন্থিগুলোকে রক্তস্নাত করে।

মানসিক চাপ ও টেনশন কমায় :

ধকল ও কাজের চাপ কমাতে যোগব্যায়াম দারুন কার্যকর। নিঃশ্বাসের এই ব্যায়ামগুলি ফুসফুসের ফাংশন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সহনশীলতা উন্নতি করে। এছাড়াও স্ট্রেস হ্রাস করে এবং কার্ডিওভাসকুলার ফাংশন উন্নত করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃশ্বাসের ব্যায়াম (ইংরেজি নাম বেশি পরিচিত) উল্লেখ করা হলো –

breathing
নিঃশ্বাসের ব্যায়াম
  • Alternative Nostril Breathing বা অনুলোম বিলম
  • Skull Shining Breath
  • Coherent breathing
  • Sitali breath
  • Deep breathing
  • Lion’s breath
  • Breath focus technique
  • Diaphragmatic breathing

মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায় :

বেঁচে থাকতে গেলে কাজের কোনো বিকল্প নেই। মনোনিবেশের অভাব বা একাগ্রতার অভাব একটি মামুলি জিনিস নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ একাগ্রতার অভাবে জীবনে পিছিয়ে পড়ছে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করার বিশেষ সুবিধার মধ্যে একটি হলো এটি মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। ভালো ফোকাস এবং একাগ্রতা জীবনের সামগ্রিকমানের উন্নতি ঘটায়।

ভালো ঘুম আনে :

আপনার ভালো ঘুম হয় না এবং আপনি কি অনেক দিন ধরে অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগছেন ? সেক্ষেত্রে যোগব্যায়াম করার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা যোগব্যায়াম করুন। প্রতিদিন না পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন করুন।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে :

খাবার পর বজ্রাসন, এটা কেমন যেনো ইউনিভার্সাল হয়ে গেছে। জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ঘুরিয়ে, পাকিয়ে বা মুচড়িয়ে বা নাড়িয়ে চারিয়ে অর্থাৎ পাচক সিস্টেম বরাবর খাদ্য সরানো, গ্রন্থিরস নিঃসরণ অর্থাৎ যোগব্যায়ামের এই প্রক্রিয়াগুলোর কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ও স্বীকৃত।

ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কমায় :

যোগব্যায়াম রক্তচাপ কমায়। হাই ব্লাড প্রেসারের কিছু রোগীকে শুধুমাত্র সঠিকভাবে শবাসন করানো হয়। ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

যোগব্যায়ামের উপকারিতা বলে শেষ করা কঠিন। নিয়মিত কিছুদিন যোগব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ শক্তি বাড়ে। স্নায়ু সতেজ ও মাংসপেশী সবল হয় এবং কোষ্টবদ্ধতা, বহুমূত্র, অর্শ ও শুক্রতারল্য প্রভৃতি দূরারোগ্য ব্যাধি সেরে যায়।

যৌগিক আসন অভ্যাসে শক্তিক্ষয় কম হয় ও শক্তিবৃদ্ধি পায়, দেহ রোগমুক্ত হয়, যৌবন ও সৌন্দর্য দীর্ঘ্যস্থায়ী হয়, স্বাস্থ্য, বীর্য এবং দীর্ঘজীবন লাভ হয়। এছাড়া মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ও একাগ্রতা বৃদ্ধিতে যোগব্যায়াম অদ্বিতীয়।