চুলের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক উপাদান।

বর্তমান সময়ে রূপচর্চা থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। চুল বা ত্বকের যত্নে অধিকাংশ মানুষই কৃত্তিম ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে থাকে। এতে দ্রুত ফল পাওয়া গেলেও পার্শ প্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু চুল বা ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও তা নিরাপদ।

চুল পড়া সমস্যা যাদের নিয়মিত, তারা সেরা ফল পেতে চুলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেল, জবা ফুল, মেহেদী পাতা, আমলা ও অ্যালোভেরার মতো প্রাকৃতিক উপাদান চুলে অতিরিক্ত পুষ্টি সরবরাহ করে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করে চুলকে রাখে মসৃণ।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, চুলের জন্য প্রয়োজনীয় হারবাল বা প্রাকৃতিক উপাদান কোন গুলো-

আমলকী:

আমলকী ইংরেজি নাম ‘Aamla’ বা ‘Indian gooseberry’। এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। চুল পড়ে যাওয়া দূর করতে আমলকী বেশ উপকারী। এর ভিটামিন “সি” চুলের গ্রন্থিকোষ গুলোতে পুষ্টি জোগিয়ে কোলাজেন প্রোটিন উৎপাদন করে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই কোলাজেনগুলো চুলের মৃত কোষগুলোকে নতুন করে প্রতিস্থাপন করতে সহায়তা করে।

কাঁচা আমলকি বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুলের রং কালো হয়, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা হ্রাস পায়। তাছাড়া এটি চুলের খুশকির সমস্যাও দূর করে থাকে।

ব্রাহ্মী শাক:

চুলের যত্নে ব্রাহ্মী শাকের গুরুত্ব অপরিসীম। জনপ্রিয় হারবাল উপাদান ব্রাহ্মী শাক সাধারণত “ঐশ্বরিক ঔষধি” হিসাবে পরিচিত। এটি চুলের ভেঙে যাওয়া প্রান্তগুলো ঠিক করে এবং পুনরায় ভাঙ্গা প্রতিরোধে সহায়তা করে, যা চুলের বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি চুলের ফলিকালকে আরও শক্ত এবং মজবুত করতে সহায়তা করে। যারা চুল পড়া সমস্যা মোকাবেলা করছেন তাদের জন্য ব্রাহ্মী শাক দুর্দান্ত সমাধান।

অ্যালোভেরা:

alovera

চুলের যত্নেও অ্যালোভেরার আছে নানা ভূমিকা। চুল মজবুত ও লম্বা করতে অ্যালোভেরা বেশ কার্যকর। নারিকেল তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল যুক্ত করে মাথার ত্বক এবং চুলে ব্যবহারে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও মাথার খুশকি কমিয়ে ফেলতে ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। চুলের যে কোনো অবস্থার জন্য অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিশালী চুলের জন্য নিশ্চিন্তে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যায়।

জবা ফুল:

botanical hibiscus

অল্প বয়সে চুল পড়ে গেলে বা অল্প বয়সে চুল বিবর্ণ হয়ে গেলে কারোরই ভালো লাগে না। অকালে চুল পেঁকে যাওয়া থেকে বাঁচাতে জবাফুল অতন্ত্য উপকারী। জবা ফুলে ভিটামিন “সি” এবং খনিজ থাকে।

ভিটামিন “এ” এবং “সি” এর পাশাপাশি অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ জবা ফুল চুলের ক্ষতি রোধ করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি খুশকিও নিরাময় করে এবং অকালে চুল পড়া বন্ধ করে। জবা ফুল বেঁটে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল কুচকুচে কাল হয়। জবা ফুলের পাশাপাশি জবা গাছের পাতাও ব্যবহার করতে পারেন।

নারিকেলের তেল:

চুলের বৃদ্ধি জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিই রয়েছে নারিকেল তেলে। লৌরিক অ্যাসিড চুলের প্রোটিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও, চুলের গোড়া মজবুত করে ভাঙ্গন রোধ করে। মাথায় খুশকি হলে বা মাথার ত্বক চুলকালে এক চা চামচ নারিকেল তেল মাথার ত্বকে কিছুক্ষণ ভালোভাবে ঘষে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুল৷ এতে চুলকানো কমবে, দূর হবে খুশকিও৷

মেহেদী পাতা:

খুশকি দূর করতে মেহেদী বেশ কার্যকরী। এছাড়া চুল কালো করার সহজ উপায় হিসাবে ব্যবহার করুন মেহেদী পাতার রস। মেহেদী পাতার রস ব্যবহারে আপনি সহজে পেতে পারেন ঘন কালো চুল।

অনেক ধরণের শ্যাম্পু বাজারে পাওয়া যায়। দেখা যায় এসব শ্যাম্পু চুল পড়া রোধ করতে পারে না। মেহেদী পাতা ব্যবহার করলে আপনার ৯০ ভাগ চুল পড়া কমে যাবে। এক মুটো মেহেদী পাতার সাথে একটি হরিতকি সামান্য বেটে মাথায় দিলে চুল উঠা রোধ হবে এবং চুল পাকা ও অনেকাংশে দূর হবে। তবে এভাবে আপনাকে সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে হবে।

মেথি:

চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় কম-বেশি সকলেই ভোগে। এই সমস্যা থেকে চুলকে রক্ষা করতে মেথির ভূমিকা অপরিসীম। মেথি বেটে নিয়ে তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি হেয়ারমাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলপড়া ও খুশকি কমে যাবে। এছাড়া নারিকেল তেলের সাথেও মেথি ব্যবহার করতে পারেন।

ভৃঙ্গরাজ:

২০০৮ সালে একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, ভৃঙ্গরাজ চুল বৃদ্ধি করতে এবং চুল পড়া রোধ করতে অধিক কার্যকর। ভৃঙ্গরাজে রয়েছে ভিটামিন “ই” যা চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে এমন ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধেও লড়াই করতে পারে।

এছাড়া চুল পড়া কমাতে, মাথার ত্বককে শীতল করে স্ট্রেসের মাত্রা হ্রাস করতে, চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগাতে, মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং মাথার ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে সহায়তা করে। ভৃঙ্গরাজ উদ্ভিদে হরিটাকি এবং জাটামানসি নামক দুটি উপাদান থাকে যা চুলের প্রাকৃতিক রঙ বজায় রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী।

লেবু:

চুলের যত্নে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লেবু। লেবু নিয়মিত তেলের সাথে মাথায় স্কাল্পে লাগালে চুল পড়া সহজেই কমে যায়। এছাড়াও মাথায় ত্বকের মরা চামড়া দূর হয়, চুল ঝলমলে হয়ে ওঠে, চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়, চুলের আগা ফাটা রোধ ও চুলকে ঝলমলে করে তোলে।