তরমুজ ক্যান্সার প্রতিরোধে করে, পানি শুন্যতা দূর করে এবং চোখের জন্য ভালো।

গ্রীষ্মের খরতাপে গলা শুকিয়ে মরুভূমি। অনবরত ঘাম ঝরছে। এমন সময় প্রিজমাকৃতির এক ফালি তরমুজ আপনাকে সবথেকে বেশি আনন্দ দিবে। অসহনীয় গরমের ক্লান্তি দূর করে শান্তির পরশ বুলিয়ে আপনাকে সারাদিন সতেজ রাখবে।

সারা পৃথিবীজুড়ে গ্রীস্মকালে এতো বিশুদ্ধ, এতো নিখুঁত রিফ্রেশমেন্ট দ্বিতীয়টি আর নেই। এন্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, অ্যামিনো অ্যাসিড, পটাসিয়াম – এর কোনোটিই আপনার ভাবনায় নেই। আপনি হয়তো ফ্রিজ থেকে বের করে সরবত করে বা সরাসরি ঠান্ডা এক ফালি তরমুজ মুখে দিয়ে তৃপ্ত হচ্ছেন। না বন্ধুরা, জীবন রক্ষাকারী অনেক উপাদান সেই সাথে আপনি গ্রহণ করছেন।

তরমুজ একটি মসৃণ সবুজ ত্বক, লাল সজ্জা এবং রস বিশিষ্ট একটা ফল। এটি একটি গ্রীস্মকালীন ফল। গ্রীস্ম কালে প্রচুর গরম পড়ে ফলে শরীর থেকে অনেক পানি ঘাম আকারে ঝরে পরে। তাই আমাদের শরীরে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। এই পানির চাহিদা পুরণ করতে আমরা তরমুজ খেতে পারি।

কারণ তরমুজে প্রচুর পানি আছে। তরমুজ এমনই একটি সুস্বাদু ফল যেটা সবাই খেতে পছন্দ করে।

তরমুজ অ্যামিনো অ্যাসিড সিট্রোলিনের সর্বাধিক উৎস। এটা সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায় তরমুজের সাদা অংশ থেকে। সেটা আমরা ফেলেদি কারণ স্বাদে নোনতা বলে। তরমুজ ইংরেজীতে: Watermelon এবং বিজ্ঞানিক নাম: Citrullus lanatus.

তরমুজের পুষ্টিগুণ

তরমুজে ৯২% পানি এবং ৬% চিনি আছে। এছাড়া অন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে:

  • ভিটামিন “সি” – ২১% (RDI)
  • ভিটামিন “এ” – ১৮% (RDI)
  • পটাসিয়াম – ৫% (RDI)
  • ম্যাগনেসিয়াম – ৪% (RDI)

ডায়াবেটিস হলে কি তরমুজ খেতে পারি?

গ্লাইসেমিক লোড (GL) হল খাদ্যে প্রকৃত কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নির্ণয়ক। তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) ৭২, তবে গ্লাইসেমিক লোড (GL) ২ প্রতি ১০০ গ্রাম পরিবেশনায়। যেহেতু তরমুজের গ্লাইসেমিক লোড (GL) কম, তাই সুষম খাবারের অংশ হিসাবে এটি সমস্ত ফলের মতো পরিমিতভাবে ডায়াবেটিস রোগীরাও তরমুজ খেতে পারে।

তরমুজের স্বাস্থ্য সুবিধা

তরমুজ লাইকোপিনের একটি চমৎকার উৎস। লাইকোপিন তরমুজের লাল রঙের জন্য দায়ী। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। মানব গবেষণায় দেখা যায় যে, তাজা তরমুজের রসে থাকা লাইকোপিন এবং বিটা ক্যারোটিন উভয়ের রক্তের মাত্রা বাড়াতে কার্যকর। নিচে এর আরো কিছু উপকারীতা দেওয়া হলো –

পানি শুন্যতা দূর করে:

তরমুজে প্রচুর পরিমানে পানি (৯২%) থাকে। প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। তাই তরমুজ খেলে শরীরের পানিশুন্যতা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ্য ও সতেজ থাকে।

পেশীর ব্যথা দূর করে:

পেশী ব্যথা কঠোর ব্যায়ামের একটি সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ব্যায়ামের পরে মাংসপেশির ব্যথা হ্রাস করতে তরমুজের রস কার্যকর।

ত্বক সজীব রাখে:

তরমুজে থাকা ভিটামিন “সি” ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে। ত্বকের যে কোনো সংক্রমণে প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গড়ে তুলে ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে। বিভিন্ন ইলেক্ট্রোলাইট, উপকারী অ্যাসিড ও লাইকোপেন সমৃদ্ধ তরমুজ নিয়মিত খেলে বার্ধক্য দেরীতে আসে। ত্বকে সহজে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে না। আপনি সবসময় প্রাণবন্ত থাকবেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

তরমুজে বিদ্যমান লাইকোপেন এবং অন্যান্য প্লান্ট কম্পাউন্ড ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

হার্টের জন্য ভালো:

আমরা স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও জীবনধারার মাধ্যমে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারি। তরমুজের বেশ কয়েকটি পুষ্টিউপাদান রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তার মধ্যে লাইকোপেন অন্যতম। গবেষণায় দেখা যায় যে, লাইকোপেন কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে।

চোখ ভালো রাখতে:

তরমুজে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড। প্লান্ট কম্পাউন্ডস ক্যারোটিনয়েড include- আলফা ক্যারোটিন এবং বিটা ক্যারোটিন, যেটা আমাদের শরীর ভিটামিন “এ” হিসাবে গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে। চোখের নানারকম সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:

তরমুজে থাকা পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া তরমুজে আরেকটি গুরত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, সেটা হলো সিট্রুলিন (citrulline)। সিট্রুলিনের একটি চমৎকার উৎস তরমুজ। সিট্রুলিন আমাদের দেহে অর্জিনিনে (arginine) রূপান্তরিত হয়। এই উভয় অ্যামিনো অ্যাসিডই নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন করতে সহায়তা করে। নাইট্রিক অক্সাইড হল একটি গ্যাস অণু যা আমাদের রক্তনালীগুলির চারপাশের ক্ষুদ্র পেশীগুলি শিথিল করে এবং বিচ্ছিন্ন করে তোলে। এটি রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে।

টাইফয়েড রোগীর জন্য:

টাইফয়েড রোগীরা যদি আধাপাকা তরমুজের রস ২ চা চামচ প্রতিদিন খায় তাহলে উপকার পাবে।

কিডনি সুস্থ্য রাখে:

তরমুজের রস কিডনির বর্জ্য পরিষ্কার করে। তাই কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসকগন তরমুজের রস খেতে বলেন।

শারীরিক শক্তি ও লিবিডোর মাত্রা বাড়ায়:

তরমুজ শুধু শরীরে পানির মাত্রা বৃদ্ধি ও ওজন কমাতেই সাহায্য করে না, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌন ইচ্ছা বাড়াতেও সাহায্য করে মৌসুমী এই ফলটি। এই ফলের মধ্যে রয়েছে সিট্রোলিন অ্যামিনো এসিড যা লিবিডোর অর্থাৎ যৌনতার ইচ্ছা বাড়ায়।

সতর্কতা:

তরমুজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে না খাওয়াই ভাল। কারণ হজমে সমস্যা হতে পারে। আবার অতিরিক্ত তরমুজ খেলেও হজমের সমস্যা হতে পারে।

সূত্র:হেলথ লাইন