উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।

ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আসলে, আমাদের শরীরে অন্য কোন খনিজের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম আছে। এটি স্বাস্থ্যকর দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়।

বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১,০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সের প্রত্যেকের প্রতিদিন ১,২০০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন এবং ৪-১৮ বছর বয়সী শিশুদের ১,৩০০ মিলিগ্রাম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

গর্ভাবস্থায় এবং যেসব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাঁদের বেলায় এটি আরো বেশি প্রয়োজন।

আমাদের শরীরের ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম সংরক্ষিত হয় হাড় ও দাঁতে। বাকি ১ শতাংশ পাওয়া যায় রক্ত, পেশী এবং কোষীয় তরলে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো-

কাঠবাদাম:

আলমন্ড বা কাঠ বাদামে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে। এক আউন্স কাঠ বাদামে ৮% ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম দেহের জন্য অতি উপকারি যা শক্ত হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া আলমন্ড ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন “ই” এর একটি চমৎকার উৎস।

দুধ:

দুধ সর্বোৎকৃষ্ট ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। শুধুমাত্র বাচ্চাদের জন্যই না এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যও প্রয়োজনীয় একটি খাবার। গরুর দুধ পানের মাধ্যমে আমাদের শরীরে পৌঁছে যাচ্ছে ক্যালসিয়াম।
বলা হয়ে থাকে দুধে উপস্থিত শতভাগ খনিজের ভেতর ৬০% ক্যালসিয়াম।

ডিম:

ডিমকে বলা হয় “সুপারফুড”। ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে। ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। যা হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং এতে ক্যালোরিও থাকে বেশ কম। ১ টি ডিমে ৩% ক্যালসিয়াম আছে।

দই:

দই ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। এতে কিছু স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা হজমে সহায়তা করে। এছাড়া এতে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে। এক কাপ দইয়ে ৩০% ক্যালসিয়াম রয়েছে এছাড়া ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন B2 এবং B12 ও থাকে।

চিজ বা পনির:

দুগ্ধ জাতীয় খাবারের মধ্যে পনির অন্যতম। পারমেজান চিজে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। বেশিরভাগ চিজ ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন পনির খাওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

তিল বীজ:

তিলের বীজে উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ১০০ গ্রাম কাঁচা তিল বীজে ২২% ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া পোস্ত বীজেও ক্যালসিয়াম রয়েছে। ৯ গ্রাম পোস্ত বীজে ১৩% ক্যালসিয়াম থাকে।

কমলা:

সাইট্রাস জাতীয় ফল কমলাতে শুধু ক্যালসিয়ামই নয় ভিটামিন “ডি” আছে যেগুলো শরীরের হাড় মজবুত করে। একটি মাঝারি আকৃতির কমলা থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

সবুজ শাক সবজি:

বিভিন্ন প্রকারের সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। যেমন পালংশাক, শালগম, বাধাকপি, ঢেঁড়স, লেটুস পাতা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যেগুলো হাড় গঠনে সহায়তা করে। এক কাপ শাকে ২৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ৫০ গ্রাম ঢেঁড়স বা ভেন্ডিতে প্রায় ১৭২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

ডুমুর:

শুকনো ডুমুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। অন্যান্য শুকনো ফলের তুলনায় ডুমুরে ক্যালসিয়ামও বেশি। ২৮ গ্রাম শুকনো ডুমুরে ৫% ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাছাড়া, ডুমুর যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন “কে” সরবরাহ করে।

মসুর ডাল:

মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। এছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, জিঙ্ক, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম। মসুর ডালে ক্যালসিয়াম রয়েছে অল্প পরিমাণ। একক কাপ মসুর ডালে ২৪% ক্যালসিয়াম রয়েছে।

মটরশুটি:

মটরশুটি ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, ফসফরাস, ভিটামিন “কে” এর ভালো উৎস। একক কাপ রান্না করা মটরশুটিতে ১৩% ক্যালসিয়াম রয়েছে।

মাছ:

মাছ থেকে আপনি ক্যালসিয়াম পেতে পারেন। হাড় দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরী। শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে, দেহ দুর্বল হয়ে যাবে ও ক্লান্তি চলে আসবে। ছোট মাছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম রয়েছে। কাঁটাসহ ছোট মাছ কালসিয়ামের অন্যতম উৎস। মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে।

সয়াবিন:

শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সয়াবিন অত্যন্ত কার্যকর। প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ২৭৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। তাই নিয়মিত পাতে রাখুন সয়াবিন ভালো উপকার পাবেন।

রেফারেন্স: