মাছ খাওয়া ব্রেইনের জন্য ভালো, হাড় গঠনে জরুরী ও হার্ট সুস্থ্য রাখতে কার্যকরী।

সমগ্র বিশ্বে মাছ খাওয়ার প্রচলন আছে। তবে বাঙালি একটু মাছ খাওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে। খুবই পুরাতন একটা কথা যেটা আমরা সবাই জানি, মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত আর মাছ বাঙালির প্রতিদিনের সঙ্গী। বাঙালির খাওয়ার পাতে এক টুকরো মাছ প্রতিদিন চাই-ই-চাই। বড় মাছের পাশাপাশি ছোট মাছেও রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছ স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। এইজন্য ছোট মাছ স্বল্প পরিমাণ হলেও খাওয়া ভালো।

মাছ সবথেকে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রোটিন এবং ভিটামিন “ডি” এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের দ্বারা পরিপূর্ণ। মাছে এছাড়া আরেকটি গুরুপূর্ণ উপাদানের উৎস সেটা হলো ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড। যেটা আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশনের মতে সপ্তাহে অন্তত ২ সারভিং (পিচ) মাছ খাওয়া উচিত। আর এর মধ্যে অন্তত ১ সারভিং (পিচ) ফ্যাটি ফিস রাখতে হবে।

মাছ খাওয়ার উপকারীতা

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মাছ খাওয়া কতটা উপকারী তা জেনে নিন –

হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়:

হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হল পৃথিবীতে অকাল মৃত্যুর দুটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। মাছ হার্টের জন্য সব থেকে-স্বাস্থ্যকর খাবারগুলির মধ্যে একটি। অনেক বড় পর্যবেক্ষণ গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হার্টের রোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪০,০০০ এরও বেশি পুরুষের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত এক সপ্তাহ ধরে মাছ খেয়েছিলেন তাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি ১৫% কম ছিল। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে মাছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে হার্টের রোগের জন্য বেশি উপকারী।

ভিটামিন “ডি” এর উৎস:

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথের তথ্য অনুসারে, মাছে ভিটামিন “ডি” বেশি থাকে। NIH অনুসারে, ভিটামিন “ডি” হাড়ের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য উপকারী।

মস্তিষ্কের জন্য ভালো:

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায়শই বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পায়। হালকা মানসিক অবক্ষয় স্বাভাবিক হলেও বয়সের সাথে সাথে আলঝাইমার রোগের মতো মারাত্মক নিউরোডিজেনারেটিভ অসুস্থতাও দেখা দেয়। অনেক পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব লোকেরা বেশি মাছ খান তাদের মানসিক অবনতির হার কম হয়। গবেষণাগুলি আরও প্রকাশ করে যে, যারা প্রতি সপ্তাহে মাছ খান তাদের মস্তিষ্কের প্রধান কার্যকরী টিস্যু অনেক সক্রিয় থাকে।

হতাশা দূর করতে পারে:

হতাশা একটি সাধারণ মানসিক অবস্থা। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যক্তিরা নিয়মিত মাছ খান তাদের হতাশার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগুলো তে দেখা গেছে যে, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন আমাদের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে তখন তাকে অটোইমিউন রোগ বলে। টাইপ-1 ডায়াবেটিসের মতো অটোইমিউন রোগগুলি হয় যখন, ইমিউন সিস্টেমটি ভুলভাবে স্বাস্থ্যকর টিস্যু আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় ওমেগা-3 গ্রহণের ফলে টাইপ-1 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পাই। কিছু বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে মাছ খাওয়ার ফলে রিউমাটয়েড (rheumatoid) আর্থ্রাইটিস এবং একাধিক স্ক্লেরোসিস (sclerosis) হওয়ার ঝুঁকিও কমে যেতে পারে।

বাচ্চাদের হাঁপানি কমায়:

মাছ বাচ্চাদের হাঁপানি রোধে সহায়তা করতে পারে। অধ্যয়নগুলি দেখায় যে, নিয়মিত মাছ খাওয়ার ফলে শিশুদের মধ্যে হাঁপানির ২৪% ঝুঁকি কমে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটির কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পাওয়া যায় নি।

ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে:

বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই দরকারী। হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরী। শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে, দেহ দুর্বল হয়ে যাবে ও ক্লান্তি চলে আসবে। ছোট মাছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম রয়েছে। কাঁটাসহ ছোট মাছ কালসিয়ামের অন্যতম উৎস। মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে।

চোখের জন্য ভালো:

বয়স-সম্পর্কিত চোখের ছানি (AMD) দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এবং অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ যা, বেশিরভাগ বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে। কিছু প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, মাছ এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এই রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। মহিলাদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত মাছ খাওয়ার ফলে AMD এর ঝুঁকি ৪২% কমে যায়। অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা সপ্তাহে একবার চর্বিযুক্ত মাছ খেয়েছিল তাদের মধ্যে নিউওভাসকুলার AMD এর ঝুঁকি ৫৩% কম ছিল।

ভালো ঘুমের জন্য:

আপনার যদি ঘুমোতে সমস্যা হয় তবে বেশি করে মাছ খেতে পারেন। দ্য জার্নাল অফ ক্লিনিকাল স্লিপ মেডিসিন দ্বারা প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুম বৃদ্ধি করতে মাছ খাওয়া হয়। গবেষকদের মতে, মাছে থাকা ভিটামিন “ডি” ঘুমের জন্য সহায়তা করে।

সূত্র: হেলথলাইন