গাজর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, দাঁত ও মাড়ি সুস্থ্য রাখে ও ত্বককে বলিরেখা থেকে রক্ষা করে।

গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। বিশেষ করে শীতকালীন এই সকল সাধারণ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সব চাইতে ভালো সবজি হচ্ছে এই গাজর। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, গাজরের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখের অন্যান্য সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ইত্যাদির মতো সমস্যায় বাধা দেয়।

Carrot অর্থাৎ গাজর (বৈজ্ঞানিক নাম Daucus carota) একপ্রকার মূল জাতীয় সবজি। এই সবজিটির স্বাস্থ্য সুবিধার পাশাপাশি এর কিছু বিউটি বেনিফিট ও রয়েছে। কমলা রঙের এই সবজিটি ত্বক, চুল এবং দাঁতের জন্য অনেক উপকারী। গাজরে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আপনার ত্বকের জন্য উপকারী।

গাজর কি পেটের চর্বি কমাতে সহায়তা করে?

হ্যাঁ, গাজর ওজন হ্রাস এবং পেটের চর্বি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। এ সবজিটিতে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি। গাজরের রস দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে যা শরীরের মেদ কমাতে সহায়তা করে।

গাজর খাওয়ার সৌন্দর্য্য উপকারিতা

আজ আমরা গাজরের সৌন্দর্য্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো-

ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখে:

গাজর খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভেতর থেকে ভালো থাকে। এছাড়াও গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে। কোথাও ব্রণ উঠলে সে জায়গাটায় নিয়মিত গাজরের রস লাগালে দাগ দূর হয়ে যায় বেশ তাড়াতাড়ি।

ত্বককে বলিরেখা থেকে রক্ষা করে:

একটু বয়স হলেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। এছাড়াও ত্বক অনুজ্জ্বল ও দাগ হয়ে যায়। তাছাড়া সূর্যের আলোতেও ত্বক অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নিয়মিত গাজর খেলে বাহ্যিক ক্ষতি থেকে ত্বক রক্ষা পায় এবং ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। গাজর মুখের বলিরেখা, দাগ ছোপ ও পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করে।

চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে:

ত্বকের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও গাজর চুলের জন্য এক দুর্দান্ত উৎস। এতে ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “ই” রয়েছে, উভয়ই মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়তা করে। যা, পরিবর্তে চুলের বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেয় এবং চুল পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। যদি লম্বা এবং ঘন চুল পেতে চান তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমপক্ষে এক গ্লাস গাজরের জুস রাখার চেষ্টা করুন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়:

বিটা ক্যারোটিন যা গাজরকে কমলা রঙ দেয়। বিটা ক্যারোটিন ত্বককে উজ্জ্বল করে। গাজরের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাসিয়াম রয়েছে। এই উপাদান গুলো ত্বককে সুস্থ এবং সতেজ রাখে। এসব পুষ্টি উপাদান ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, স্কিন টোনকে উন্নত করা এবং ত্বককে দাগ পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে। নিমিয়ত গাজরের জুস খেলে গায়ের রং উজ্জল হয়, কারণ এটি রক্ত পরিষ্কার করে ও ত্বকের উজ্বলতা ফিরিয়ে আনে।

দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে:

গাজর কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া প্রাকৃতিক দাঁত ব্রাশ হিসাবে কাজ করে। ভিটামিন “সি” থাকায় গাজর দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা বজায় রাখে। মাড়ি ফোলা ও দাঁত থেকে রক্ত পড়া সমস্যা সমাধানে গাজর ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও মুখের মধ্যে প্লাক জমতে দেয় না ফলে দাঁত আর মাড়ি ঠিক থাকে।

ত্বকের শুষ্কতা দূর:

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে গাজর দুর্দান্ত কারণ গাজর পটাসিয়ামযুক্ত। শরীর এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি ত্বককে আর্দ্র ও কোমল রাখতে নিয়মিত গাজরের জুস পান করুন।

রৌদ থেকে ত্বককে রক্ষা করে:

গাজর সূর্যের রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারে। গাজরে বিটা ক্যারোটিন হল ত্বক-বান্ধব পুষ্টি যা শরীরের অভ্যন্তরে ভিটামিন “এ”তে রূপান্তরিত হয়। এটি ত্বকের টিস্যুগুলি মেরামত করতে সহায়তা করে এবং ত্বকে ক্ষতিকারক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে।

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে:

যারা ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে স্কিনকেয়ার পণ্যগুলি ব্যবহার করেন তারা খেয়াল করেছেন যে এই পণ্যগুলোতে রেটিনয়েড এবং ট্রেটিইনিন আকারে ভিটামিন “এ” থাকে। গাজর ভিটামিন “এ” এর দুর্দান্ত উৎস। তাই গাজর খেলে ভিতর থেকে ত্বকের তৈলাক্ততা কমাতে সহায়তা করবে।

ওজন কমাতে সহায়তা করে:

অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করার একটি দুর্দান্ত উপায় হল নিয়মিত ডায়েট এমন খাবারের রাখা যেখাবার গুলো খেলে সহজেই পেট ভরে যায়। গাজর প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত। ফলে অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা আজ থেকেই ডায়েটে গাজর যোগ করুন।

মুখের মাস্ক হিসাবে:

২ চামচ গাজর পেস্ট, ১ চামচ দুধ, ১ চামচ মধু, অলিভ অয়েল ৩-৪ ফোঁটা, একটি পাত্রে সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিন। আপনার মুখ এবং ঘাড়ে লাগান। তারপর ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫-২০ মিনিট পর হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি আপনার মুখকে মশ্চারাইজ করবে।

রেফারেন্স: