দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার উপায়।

আজকাল আমাদের সারাদিনের বেশির ভাগ সময় কাটে মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে। এছাড়া, আমরা সারাদিনে অনেকক্ষণ টিভিতে প্রিয় অনুষ্ঠান দেখি।

এসব কিছুর ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখের।

অল্পবয়সে চশমার উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। তাইতো আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠেছে। এজন্য আমাদের জানতে হবে কিভাবে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা যায়

যথেষ্ট ঘুম:

কম ঘুমানো চোখের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। যে কোনও ডাক্তার আপনাকে আপনার সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দেবেন।

পর্যাপ্ত ঘুম পড়ুন কিংবা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করুন এটা চোখের জন্য খুবই ভালো।

বিশেষ করে আপনি যদি কম্পিউটারে কাজ করেন বা বই পড়ার অভ্যাস থাকে এক্ষেত্রে চোখেকে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রামমের সুযোগ দিন।

আলোর সঠিক ব্যবহার:

কিন্তু চোখ ভালো রাখার জন্য কম আলো বা তীব্র আলোতে লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজকর্ম করা উচিত নয়।

অন্ধকার ঘরে বসে মোবাইল দেখা বা টিভি দেখা উচিত নয়। এতে আমাদের চোখের ক্ষতি হয়।

দিনের বেলা ঘরের যত জানালা দরজা আছে সব খুলে দিন। যাতে দিনের আলো ঘরে প্রবেশ করতে পারে। এতে আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকবে।

সবুজ দেখুন:

দুচোখ ভরে সবুজ দেখুন। একটু সময় নিয়ে সবুজের মাঝে বসে থাকুন। যারা শহরে থাকে তাদের এই সুযোগটা কম। তাই তারা বেলকনিতে গাছ লাগাতে পারেন।

পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ করুন:

ভিটামিন “এ”, “সি” এবং “ই” পাশাপাশি জিঙ্ক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধে সহায়তা করতে পারে।

এসব ভিটামিন ও খনিজ আমরা বিভিন্ন ধরণের রঙিন শাকসবজি এবং ফল থেকে পেতে পারি। যেমন: গাজর, লাল মরিচ, ব্রকলি, শাক, মিষ্টি আলু এবং লেবু ইত্যাদি।

ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার:

চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে লুটেইন এবং জেক্সানথিন, যা চোখের রেটিনার মধ্যে পাওয়া ক্যারোটিনয়েড।

সবুজ শাক, ব্রকলি এবং ডিম ইত্যাদি লুটেইন এবং জেক্সানথিন এর উৎস।

এই ক্যারোটিনয়েড (লুটেইন এবং জেক্সানথিন) চোখের অতিবেগুনী এবং নীল আলো শোষণ করে ম্যাকুলা রক্ষা করতে সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার মধ্যেমে আমরা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে পারি।

কারণ ব্যায়াম না করা এবং অতিরিক্ত ওজন চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালী গুলোর ক্ষতি করতে পারে।

চোখের ব্যায়াম করুন:

চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ২০-২০-২০ বিধি অনুসরণ করুন। একটানা স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ নিয়ন্ত্রনকারী পেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে যায়।

এ থেকে বাঁচার জন্য প্রতি ২০ মিনিটে একবার বাইরে তাকাতে হবে। আনুমানিক ২০ ফিট দুরে কোনো কিছু দেখুন কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য।

এটাকে ডাক্তার ২০-২০-২০ রুল বলেন। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট পর আপনার ২০ ফিট দূরে কি ঘটছে তা দেখার জন্য ২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করতে হবে।

ধুমপান ত্যাগ করুন:

ধূমপান করা আমাদের ফুসফুস এবং হার্টের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি এটি আমাদের ত্বকের জন্য, চুলের জন্য চোখের জন্যও ক্ষতিকর।

ধূমপান চোখে ছানি পড়া এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয়ের বিকাশের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে হলে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।

বেশি বেশি পলক ফেলুন:

কাজ করার সময় বেশি বেশি পলক ফেলুন। চোখের পলক স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ১২ থেকে ১৪ বার পড়ে।

কিন্তু আমরা যখন কম্পিউটার এর মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন চোখের পলক পড়ার হার অনেক কমে আসে।

এজন্য কম্পিউটার ব্যবহার কারীদের চোখের পানি ঠিকমত চোখের উপরিভাগে কর্ণিয়া ও কনজাংটিভাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না।

চোখের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়, ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। একারণে চোখে জ্বালা পোড়া করে ও চোখে ব্যথা হয়।

তাই চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর অন্তর ১০ বার করে চোখের পলক ফেলুন।

চোখে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। চোখের অসুখ থাকলে তো সময় অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। অসুখ না থাকলেও বছরে দুবার চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া খুবই প্রয়োজন। এই কাজে অবহেলা করবেন না।

সূত্র: healthline, versanthealth