শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার প্রাকৃতিক উপায়।

অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে ত্বক একটু বেশি আর্দ্র হয়ে থাকে। তাই এই সময়ে ত্বকের একটু বেশি যত্ন নিতে হয়।

নারী-পুরুষ উভয়ে শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় পড়লেও মেয়েদের ত্বক বেশি নরম হওয়ায় শীতে মেয়েদের ত্বক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে।

তাই শীত এলেই নিজেদের ত্বকে আর্দ্রতা ফেরানো নিয়ে কমবেশি আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পরি। জেনে নিন কিভাবে প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে ত্বকের শুস্কতা দূর করা যায়।

অ্যালোভেরা:

আমাদের ত্বকের শুস্কতা দূর করে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী উপাদান৷ একটি অ্যালোভেরা পাতা কেঁটে জেল নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন৷

ত্বকের শুষ্কতার সাথে সম্পর্কিত জ্বালাভাব, চুলকানি মুহূর্তে কমে যাবে৷ সেরে যায় ছোটখাটো ইনফেকশনও৷

দুধ বা দই:

ঠান্ডা দই বা দুধে নরম কাপড় বা তুলো ভিজিয়ে ত্বকে লাগান৷ অন্তত পাঁচ মিনিট এই প্রলেপটি ব্যবহার করুন৷ দই বা দুধে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিডের প্রভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে৷

কাঁচা দুধ বা দই এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন৷

তারপর সেটি গোসলের আগে ত্বকে লাগিয়ে নিন৷ প্রলেপটি শুকিয়ে গেলে গোসল করে ফেলুন৷

অলিভ অয়েল:

অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকের জন্য খুব কার্যকর৷ এর মধ্যে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডন্ট পুরো শরীরের ত্বকের যত্ন নেয়৷ গোসলের আধ ঘণ্টা আগে মুখে ও পুরো শরীরে অলিভ অয়েল মেখে নিন৷

তারপর হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিন৷ অলিভ অয়েলের সাথে চিনি আর মধু একসাথে মিশিয়ে ঘন একটি মিশ্রণ তৈরি করুন৷

তারপর এই মিশ্রণটি হাত পায়ে লাগিয়ে নিন৷ হালকা করে মালিশ করুন, এতে শরীরের সমস্ত মৃত কোষ উঠে যাবে৷ তার পর স্নান করে হালকা লোশন লাগিয়ে নিন৷

কমলালেবু:

কমলালেবু খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে আমরা ব্যবহার করতে পারি।

এক্ষত্রে কমলালেবুর খোসা পেস্ট করে নিয়ে তারসাথে দুধের সর, ময়দা বা বেসন মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগাতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের জুসও খেতে পারেন।

মধু ও পাকা কলা:

পাকা কলামধু একসঙ্গে পেস্ট করে নিন৷ মুখে ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে তারপর ধুয়ে ময়েশ্চরাইজ়ার লাগাতে হবে৷

এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে দূর হবে শুষ্কতা এবং ত্বক হয়ে উঠবে নরম ও কোমল৷

নারকেল তেল:

ত্বকের শুষ্কতা দূর করে আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে নারকেল তেল খুবই কার্যকরী। মুখ ও শরীরের ত্বকের পাশাপাশি গোড়ালি, হাঁটু, কনুইয়েরও বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন বিশেষ করে শীতকালে৷

এক্ষেত্রে নারকেলের তেল আমরা ব্যবহার করতে পারি। নারকেল তেলে রয়েছে উচ্চা মাত্রার ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন “ই” যা একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।

পানি:

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন৷ দিনে অন্ততপক্ষে আট-দশ গ্লাস এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে৷ পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের রসও পান করতে পারেন৷

ডিম ও মধু:

একটি পাত্রে ডিমের সাদা অংশ ও ৩ চামচ মধু মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে। এই পেস্টটি ত্বকে ১০ মিনিট ধরে মাসাজ করে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। মধু প্রাকৃতিক টোনার ও ময়শ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে।

তার সঙ্গে ডিমের সাদা অংশের প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষে আর্দ্রতা পৌঁছে দেয়। তাই এই প্যাক শীতে খুবই কার্যকর।

অতিরিক্ত গরম জলে বেশিক্ষণ ধরে স্নান করা যাবে না, তাতে ত্বকের আর্দ্রতা ক্রমশ হারায়৷ গোসলের আগে অয়েল মাসাজ করলেও স্নানের পর অতি অবশ্যই ময়েশ্চরাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে৷

ত্বককে বাইরে থেকে ময়েশ্চারাইজ করার চেষ্টা করুন। প্রতিনিয়ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।

এজন্য প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখে এবং হাতে পায়ে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন দিনে অন্তত ৩/৪ বার মুখ ধুতে হবে।

প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। পরিবর্তন আনুন খাদ্যতালিকায়৷ ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন “সি”, আর ম্যাগনেশিয়াম যেন থাকে খাদ্যতালিকায়৷