শুটকি মাছ কেন খাবেন? শুটকি মাছের স্বাস্থ্য উপকারীতা কি কি? ক্ষতিকর দিক আছে কি?

শুটকি মাছ বা dried fish বা শুকনো মাছ কেনো খাবেন? খাবেন এই কারণে যে, শুটকি মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি। উচ্চমানের প্রোটিন ছাড়াও স্বাস্থ্যকর চর্বি আয়োডিন, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টির অনন্য উৎস।

গবেষণালব্ধ ফলাফল দেখায় যে, শুকনো মাছ প্রোটিনের একটি খুব সমৃদ্ধ উৎস। ৮০-৮৫% প্রোটিন ধারণ করে।

শুঁটকি মাছের অ্যামিনো অ্যাসিড ডিমের অ্যামিনো অ্যাসিডের সাথে তুলনা করে দেখা যায় যে, শুঁটকি মাছের প্রোটিনগুলি উচ্চ মানের ছিল।

বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক এলাকায় শুঁটকি মাছ খাওয়ার প্রবণতা আছে। রুপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, গজার, পুঁটি, কাঁচকি ইত্যাদি মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এটি বেশ জনপ্রিয় পদ।

সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে তাজা মাছ সহজেই পচে যায়। খাদ্য সংরক্ষনের এক প্রাচীন পদ্ধতি হল খাদ্য শুকানো। শুঁটকি বা মাছকে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষন তেমনই একটি পদ্ধতি যাতে মাছকে রোদে রাখা হয় পানি অপসারণের জন্য।

খোলা জায়গায় বাতাস এবং রোদ ব্যবহার করে মাছকে শুকানোর প্রথা অনেক প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।

শুকনো মাছ বা শুঁটকি মাছ কি স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ?

যদিও শুকনো মাছ দেশজুড়ে একটি জনপ্রিয় উপাদেয়, তবুও এর ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক কারণ মাছকে শুকনো রাখার জন্য ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ অত্যন্ত বিষাক্ত।

কোন ধরনের শুঁটকিতে কী উপাদান আছে?

শুঁটকি মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে আমিষ, প্রোটিন ও খনিজ লবণ থাকে।

ছোট চিংড়ির শুঁটকি:
৬২ দশমিক ৪ গ্রাম প্রোটিন, ৩৫৩৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৫৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৮ গ্রাম লৌহ ও ২৯২ ক্যালরি।
ছুরি শুঁটকি:
৭৬ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ৭৩৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৪ দশমিক ২ মিলিগ্রাম লৌহ, ৩৮৩ ক্যালরি।
লইট্টার শুঁটকি:
৬১ দশমিক ৭ গ্রাম প্রোটিন, ১৭৮১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৪০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ২৯৫ ক্যালরি।

শুটকি মাছের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

শুটকি মাছের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো –

উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো:

শুঁটকি মাছ প্রোটিনের একটি বড় উৎস। সামুদ্রিক শুঁটকি হার্টের স্বাস্থ্যকর খাবারের সুপার স্টার কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হার্ট বিট) এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমায়।

আর্থারাইটিস-এর ব্যাথ্যা কমায়:

গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ বেশি খায় তাদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এবং যাদের ইতিমধ্যেই এই রোগ আছে, তাদের মধ্যে সামুদ্রিক ওমেগা-৩ ফোলা এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

রক্ত স্বল্পতা ও গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী:

শুঁটকি মাছে তাজা মাছের তুলনায় আমিষ ও খনিজ লবণের পরিমাণ অনেক বেশি। ক্যালসিয়াম ও লৌহের পরিমাণও অনেক। ছোট চিংড়ির শুঁটকিতে লৌহের পরিমাণ বেশি।

যাঁরা দুধ খেতে পারেন না বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তাঁরা প্রোটিনের বিকল্প উৎস হিসেবে মাঝে মাঝে শুঁটকি খেতে পারেন।

সতর্কতা:

  • শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সময় প্রচুর লবণ দেওয়া হয়। তাই উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। 
  • কিডনি রোগীদের বেশি শুঁটকি খাওয়া উচিত নয়। যাঁদের কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁরাও শুঁটকি এড়িয়ে চলবেন।
  • ইদানীং শুঁটকি সংরক্ষণে ক্ষতিকর কীটনাশক ডিডিটি-জাতীয় উপাদান দেওয়া হয়। তাই রান্নার আগে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
  • বাড়িতে শুঁটকি সংরক্ষণ করতে হলে মাঝে মাঝে কড়া রোদে দেবেন।

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো ডাক্তারের তত্বাবধানে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।