কোন খাবারগুলো প্রাকৃতিক ব্যথানাশক?

শরীরের ব্যথা বা বাতের ব্যথা যেটাই বলুন না কেনো ব্যথা আমাদের নিত্যসঙ্গী। এই ব্যথা কমানোর জন্য ঔষুধ খাওয়া জরুরী।

তবে এসব ব্যথা উপশমকারী ঔষুধের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আমরা শরীরে কোনো প্রকার ব্যথা হলেই ব্যথানাশক ঔষুধ খায়।

ব্যথানাশক এই সব ঔষুধ নিয়মিত খেয়ে লিভার, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করছি।

কিন্তু ব্যথা নিরাময়ে যে প্রাকৃতিক ওষুধ গুলো আছে যা আমাদের রান্না ঘরেই সব সময় থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এতে একদিকে যেমন ব্যথা সেরে যায়, তেমনি স্বাস্থ্যও থাকে ভালো।

আসুন জেনে নেওয়া যাক হাতের নাগালে থাকা এসব প্রাকৃতিক ব্যথানাশক সম্পর্কে:

আদা:

আদা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে আদা প্রাচীনকাল থেকে জনপ্রিয়। আদা শুধু এই সব সমস্যা দূর করে না এর পাশাপাশি আদা ব্যথা প্রশমনেও কার্যকর।

মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে শরীরের যে কোনো ব্যথা দূর করতে আদা খুবই কার্যকরী। ব্যায়াম করার পর পেশীর ব্যথা হলে সে ব্যথা, হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে আদা।

১১ দিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ২ গ্রাম করে আদা খেলে, পেশী ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাই। কারণ এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

হলুদ:

হলুদের গুণের কথা বলে শেষ করা যায় না। প্রাচীন কাল থেকেই প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে হলুদ।

এতে আছে কারকুমিন নামের উপাদান। আর্থ্রাইটিস (জয়েন্টে ব্যথা) পশ্চিমা দেশগুলিতে একটি সাধারণ সমস্যা।

হলুদে থাকা কারকুমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ। গবেষণায় প্রমাণিত কারকুমিন বাতের (জয়েন্টে ব্যথা) ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

লবঙ্গ:

লবঙ্গের সুমিষ্ট ঘ্রানের পাশাপাশি এর অসাধারণ ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। মাথা ব্যথা, বাত, দাঁত ব্যথা সহ অন্যান্য প্রদাহ চিকিৎসার জন্য লবঙ্গ ব্যবহার হয়।

ধোঁয়া, রোদ এবং ঠান্ডার জন্য শ্লেষ্মা বেড়ে নানা ধরনের মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লবঙ্গ মাথা ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী।

সেঁক দেওয়া ও বরফ:

শারীরিক ব্যথা-যন্ত্রণায় ভোগেন না, এমন মানুষ নেই। কখনো মেরুদণ্ডের ব্যথা, কখনো কোমরের ব্যথা, কখনোবা পায়ের ব্যথা চরম ভোগায়। এসব ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে গরম ও ঠান্ডা পানির টোটকা ব্যবহার করা যায়।

প্রথমে আপনার ব্যথার জায়গায় বরফ লাগান। বরফ লাগিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ঘরের তাপমাত্রায় ফিরে আসতে দিন। ব্যথার স্থানে তাপ বা সেঁকা দিলেও ব্যথার উপশম হয়।

কফি:

কফিতে থাকে ক্যাফেইন। মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা ব্যথার সংবেদনশীলতা কমাতে পারে ক্যাফেইন। কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে। প্রতিদিন দুই কাপ কফি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মরিচ:

মরিচে থাকে ক্যাপসিসিন নামের একটি বিশেষ উপাদান। এই উপাদানটি অনেক প্রদাহনাশক ক্রিমেও থাকে।

এই উপাদান স্নায়ুকে আরাম দেয় এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

অ্যালোভেরা:

অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। ব্যথার স্থানে একটুখানি অ্যালোভেরা লাগালে ব্যথা কমে যায়।

অ্যালোভেরায় মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিডসহ নানা ধরণের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যা হাড় ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।

যোগব্যায়াম:

শুধু বয়স্করাই ব্যথায় আক্রান্ত হন এমনটা নয়, বরং সব বয়সের নারী পুরুষের জন্যই এখন ব্যথা একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।

আসলে বর্তমান আধুনিক জীবনে, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে সবাইকেই ছুটতে হয় বিরামহীন, করতে হয় অতিরিক্ত পরিশ্রম, সঙ্গে মানসিক চাপ তো আছেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে এসব ক্ষেত্রে বরং নিয়ন্ত্রিত ও পরিমিত ব্যায়ামই হতে পারে কার্যকরী সমাধান।

দীর্ঘদিনের ব্যথা ব্যায়ামে আরোগ্য হয়। ব্যায়ামের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। যা ব্যথা দূর করতে কার্যকরী।

রেফারেন্স: