আদা সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা কমাতে ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে অতুলনীয়।

মসলার মধ্যে অন্যতম ভেষজ গুন সম্পন্ন মসলা হলো আদা। যেকোনো রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিতে আদা অন্যতম। রান্নার পাশাপাশি আদা চায়ের জনপ্রিয়তাও রয়েছে। দিনটা যদি আদা-চা দিয়ে শুরু হয় তাহলে শরীর ঝরঝরে হয় যায়।

রান্না করা আদার তুলনায় কাঁচা আদার উপকারিতা বেশি। আদার সবথেকে বড় গুন হলো মাথা ব্যথা দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে।

আদা উৎপত্তি স্থান হলো চীন। ইংরেজীতে Ginger এবং বৈজ্ঞানিক নাম Zingiber officinale. বিভিন্ন ধরণের ঔষুধে আদা ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আদা হজমে সহায়তা করতে, বমি বমি ভাব হ্রাস করতে এবং সাধারণ জ্বর, সর্দি কমাতে সহায়তা করে।

এটিতে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব রয়েছে। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা খুবই কার্যকরী। বিশেষজ্ঞদের মতে আদা কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করতে পারে। কারণ আদায় আছে বিশেষ গুণ, যা অন্ত্রের গতিবিধি সচল করে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাব দূর করতে পারে।

আদা মূলত একটি মূল জাতীয় উদ্ভিদ যেটাকে আমরা মসলা এবং ভেষজ ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করি। আদায় আমিষ ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ বা ফাইবার ২·৪%, খনিজ পদার্থ, ১·২% ও পানি ৮০·৮% রয়েছে।

আদার উপকারিতা

আদা চুলের সমস্যা দূর করতে খুব উপকারী। নিচে আদার স্বাস্থ্য উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

কফ, কাশি, মাথাব্যথায় আদা:

ঠাণ্ডায় ও মাথাব্যথায় আদা ভীষণ উপকারী। এছাড়া জ্বর জ্বর ভাব, গলাব্যথা, সর্দি দূর করতে সাহায্য করে। কাশি এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। গলায় জমে থাকা কফ দূরে করতেও আদা কার্যকরী।

কফ সমস্যা দেখা দিলে আদা কুচি করে ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। কিছুক্ষণ ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। এতে বেশ আরাম পাওয়া যায়।

পেশীর ব্যথা হ্রাস করতে পারে:

মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে শরীরের যে কোনো ব্যথা দূর করতে আদা খুবই কার্যকরী। ব্যায়াম করার পর পেশীর ব্যথা হলে সে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে আদা।

১১ দিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ২ গ্রাম করে আদা খেলে, পেশী ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাই। কারণ এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

আর্থ্রাইটিসের ব্যাথা (জয়েন্টের ব্যথা) দূর করে:

আর্থ্রাইটিস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। হাঁটুর অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ২৪৭ জনের একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায়, যারা আদা খেয়েছিল তাদের ব্যথা কম ছিল এবং ব্যথার ঔষুধও কম প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে আদা দিয়ে চা খেতে পারেন। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে জিঞ্জার অয়েলও উপকারী।

রক্তে শর্করা কমাতে পারে:

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদাতে শক্তিশালী অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৪১ জন অংশগ্রহণকারীদের সাম্প্রতিক ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২ গ্রাম আদা রক্তে শর্করাকে ১২% হ্রাস করেছে।

দীর্ঘস্থায়ী বদহজম নিরাময়ে:

যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আদা ভীষণ উপকারী। দীর্ঘস্থায়ী বদহজমের কারণে পেটের উপরের অংশে বা বুকে ব্যথা কমাতে পারে আদা।

২৪ জন স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, খাবারের আগে ১.২ গ্রাম আদা ৫০% পেটের সমস্যা দূর করতে পারে।

মাসিকের ব্যথা কমাতে পারে:

মাসিক ব্যথা বা ঋতুস্রাবের সময় হওয়া পেটে ব্যথা কমাতে আদা খুবই কার্যকরী। ১৫০ জন মহিলার একটি সমীক্ষায়, মাসিকের প্রথম ৩ দিনের জন্য প্রতিদিন ১ গ্রাম আদা খেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে তাদের ব্যথা তুলনামূলক ভাবে কমেছিল। আদা ব্যথা নাশক ঔষধ হিসাবে কাজ করে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে:

উচ্চ মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) হার্টের রোগের ঝুঁকির জন্য দায়ী। আদা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।

উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত ৮৫ জন ব্যক্তির ৪৫ দিনের একটি গবেষণায়, ৩ গ্রাম আদা খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে:

ক্যান্সার একটি মরণ ব্যধি। ৩০ জন ব্যক্তির একটি গবেষণায়, প্রতিদিন ২ গ্রাম আদা কোলনে প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সিগন্যালিং অণুগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।

প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আদা কার্যকর। তবে এটা নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

আলঝেইমার (স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া) চিকিৎসায়:

আলঝেইমার একটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ যা মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। দুর্ভাগ্যবসত আলঝেইমার এর কোনও ভাল চিকিৎসা নেয়। তাই এটি প্রথম থেকেই এটিকে প্রতিরোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আদা সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ৬০ জন মধ্যবয়স্ক মহিলাদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

সংক্রমণে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে:

আদা, সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে। এটি মাড়ির রোগের সাথে সংযুক্ত মৌখিক ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে খুব কার্যকর। আদার দেহের যেকোনো ইনফেকশনকে প্রতিহত করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদা রেসপিরেটরি সেংশাল ভাইরাস (RSV virus) প্রতিহত করে ঠান্ডা লাগা থেকে সৃষ্ট শ্বাসনালির সংক্রমণ ও ঠান্ডাজনিত লক্ষণগুলোকে প্রতিরোধ করে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: