লবঙ্গ পেটের আলসার কমাতে, সর্দি – কাশি ও বমি বমি ভাব দূর করতে কার্যকরী।

বছরের পর বছর ধরে লবঙ্গ বমি বমি ভাব, হজম ব্যাধি এবং ফ্লুর চিকিৎসার জন্য ঐতিহ্যবাহী চীনা ঔষধ এবং আয়ুর্বেদে একটি বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছে। অ্যারোমাথেরাপিতে লবঙ্গ এন্টিসেপটিক এবং ব্যথা উপশমকারী হিসাবে বিশেষত দাঁত ব্যথা এবং পেটের ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রত্যেক রান্নাঘরেই এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ পাওয়া যায় একত্রে যেটাকে আমরা গরম মশলা বলে থাকি। সেই গরম মসলারই একটি অংশ লবঙ্গ। লবঙ্গের গুণাগুণ শুধু রান্নাতেই নয়, তার বাইরেও আছে। লবঙ্গের সুমিষ্ট ঘ্রানের পাশাপাশি এর অসাধারণ ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। লবঙ্গ গাছের ফুলের কুঁড়ি হলো লবঙ্গ যার বৈজ্ঞানিক Syzygium aromaticum এবং ইংরেজি নাম Clove. লবঙ্গের স্বাদ একটু ঝাঁঝালো। এটা খেতে যতটা ঝাঁঝালো ঠিক ততোটাই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

লবঙ্গের সুগন্ধের মূলকারণ “ইউজেনল” (Eugenol) নামের একটি যৌগ। এটি লবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তেলের মূল উপাদান, এবং এই তেলের প্রায় ৭২-৯০% অংশ জুড়ে ইউজেনল বিদ্যমান। ইউজেনল এর জীবাণু নাশক এবং বেদনা নাশক গুণ রয়েছে।

লবঙ্গের উপকারিতা

লবঙ্গ আমাদের জন্য খুবই উপকারী কিন্তু এটি আমাদের খাদ্য তালিকায় খুবই কম থাকে। নিচে লবঙ্গের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

পেটের আলসার হ্রাস করতে পারে:

কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে লবঙ্গ পেটের আলসার নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। এটি পেপটিক আলসার হিসাবেও পরিচিত, পেটের আলসারগুলি বেদনাদায়ক ঘা যা সাধারণত পাকস্থলী ও খাদ্যনালীর আস্তরণের মধ্যে গঠিত হয়।

পেটের আলসার মূলত স্ট্রেস, সংক্রমণ এবং জিনেটিক্সের কারণে হয়। গ্যাস্ট্রিক শ্লেষ্মা বাধা হিসাবে কাজ করে এবং হজম অ্যাসিড থেকে পেটের আস্তরণের ক্ষয় রোধে সহায়তা করে। প্রাণীদের উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, লবঙ্গ তেল আলসার নিরাময়ে ভূমিকা রয়েছে।

রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে:

গবেষণায় দেখা গেছে যে, লবঙ্গ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে। লবঙ্গ ইনসুলিন উৎপাদন কোষগুলির কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। ইনসুলিন হরমোন আপনার রক্ত থেকে কোষে চিনি পরিবহনের জন্য দায়ী।

রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে ইনসুলিন হরমোনের ঠিকভাবে কাজ করতে পারা খুব প্রয়োজনীয়। সুষম খাদ্যের সাথে লবঙ্গ আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করতে পারে।

ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে:

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে লবঙ্গতে পাওয়া যৌগ আমাদেরকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে। একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, লবঙ্গ টিউমারগুলির বৃদ্ধি কমাতে এবং ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে সাহায্য করেছিল। অন্য একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায়, লবঙ্গ তেল খাদ্যনালীর ক্যান্সারের কোষগুলির ৮০% মৃত্যু ঘটায়।

লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে:

অধ্যয়নগুলি দেখায় যে, লবঙ্গতে থাকা উপকারী যৌগ লিভারের স্বাস্থ্যের ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারে। লবঙ্গতে থাকা যৌগ ইউজেনল (eugenol) লিভারের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এছাড়া লবঙ্গতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণও বেশি, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করতে সাহায্য করে।

হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে:

লো হাড়ের ভর অস্টিওপরোসিসের বিকাশ ঘটাতে পারে, যা ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। লবঙ্গ ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ, ১ চা চামচ লবঙ্গ এর মধ্যে ৩০% (DV) ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। ম্যাঙ্গানিজ হল একটি খনিজ যা হাড় গঠনে জড়িত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বমি বমি ভাব দূর করে:

কয়েকটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ রাখুন। লবঙ্গের গন্ধ এবং স্বাদ বমি বমি ভাব দূর করার জন্য খুব কার্যকরী। বমিভাব এড়াতে লবঙ্গ চা পান করুন। এক চা চামচ লবঙ্গের গুঁড়া এক কাপ পানিতে কিছুক্ষন গরম করুন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আস্তে আস্তে এটি পান করুন। যদি এর স্বাদ কটু লাগে তবে এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন।

মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

লবঙ্গ হল লবঙ্গ গাছ থেকে শুকনো ফুলের কুঁড়ি। এছাড়া কফ দূর হয় এবং মুখের বাজে দুর্গন্ধ দূর হয়। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপাটিজ, যা মুখে গন্ধ তৈরি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে।

মুখে একটি লবঙ্গ মুখে ভিতরে রেখে দিন, দেখবেন গন্ধ একেবারে চলে গেছে। দাঁতের জন্য লবঙ্গ খুবই উপকারি। দাঁতের যন্ত্রণায় কষ্ট হলে, লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে যন্ত্রণা কমবে।

সর্দি, কাশি দূর করে:

সর্দি,কাশিতে লবঙ্গ বা লবঙ্গ চা খেলে খেলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া যদি এমন হয় যে কাশি শুরু হয়ে ছে আর থামছে না তাহলে মুখের ভিতরে লবঙ্গ নিয়ে আস্তে আস্তে চিবাতে থাকুন। আরাম পাবেন।

সতর্কতা

লবঙ্গ তেলের কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।


healthline, medicalnewstoday, ndtv