ডাবের পানি ভরপুর কর্মশক্তির জন্য, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও ত্বকের যত্নে অতুলনীয়।

প্রাকৃতিকভাবে অতিসুরক্ষিত যে পানীয়টি আমাদের শরীরকে শীতলকরে, স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে পুষ্টিতে ভরিয়ে তোলে সেটি কি?

সেটি আর কিছুই নয়। সেটি ডাবের পানি বা গ্রীন কোকোনাট ওয়াটার। এককথায়, শক্তিদায়ক, সক্রিয়কারী অর্থাৎ প্রবলভাবে কর্মশক্তি প্রদানকারী পানীয় হচ্ছে ডাবের পানি বা গ্রীন কোকোনাট (green coconut) ওয়াটার।

গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের সহজলভ্য এই পানীয় মানুষ প্রায়শ গ্রহণ করে থাকে।

অতিরিক্ত গরমে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের পরে, খেলাধুলা বা ব্যায়ামের পরে শীতলতার পরশ বুলিয়ে দেহ ও মন শান্তিতে ভরিয়ে তোলে।

শারীরিক ও মানসিক বেদনা উপশমকারী এই পানীয়টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে পুনরায় কর্মক্ষম করে তোলে।

কম ক্যালোরিযুক্ত, প্রাকৃতিকভাবে চর্বি ও কলেস্টেরল মুক্ত, কলা থেকে অধিক পটাশিয়ামযুক্ত – এক কথায় অমৃত। স্পর্শমনি বা divine elixir যেটাই বলি না কেনো ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন, কপার, ফান্ডামেন্টাল অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রয়োজনীয় দুটি লবন- সোডিয়াম ও পটাশিয়াম- এতো পুষ্টি উপাদানের মিলনমেলা। এককথায় অসাধারণ।

ডাবের পানির পুষ্টি গুন

তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি নানা রকম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি। এটা সম্পর্কে অনেকে জানিনা। প্রতি এক কাপ বা ২৪০ মিলি ডাবের পানিতে রয়েছে ৪৬ ক্যালোরি এবং লিখিত পুষ্টিগুণ:

  • পানি: ৯৪ ভাগ
  • কার্বোহাইড্রেট: ৯ গ্রাম
  • ফাইবার: ৩ গ্রাম
  • প্রোটিন: ২ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: ১০% (RDI)
  • ক্যালসিয়াম: ৬% (RDI)
  • সোডিয়াম: ১১% (RDI)
  • পটাশিয়াম: ১৭% (RDI)
  • ম্যাংগানিজ:১৭% (RDI)
  • ম্যাগনেশিয়াম: ১৫% (RDI)

coconut_waater

ডাবের পানির উপকারীতা

ডাবের পানি অত্যান্ত উপকারি প্রাকৃতিক পানীয়। এটা প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় বলে এতে কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া নাই। কোনো পার্শ প্রতিক্রিয়া নাই।

২০১২ সালে এক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, স্পোর্টস ড্রিংকসের মতোই ডাবের পানি উপকারী।

এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। নিচে ডাবের পানির আরও কিছু উপকারীতা তুলে ধরা হলো-

ডিহাইড্রেশন দূর করে:

এটি ডাবের পানির প্রথম উপকারি দিক। অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীর ঘামের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায়।

আবার কখনও অতিরিক্ত গরমের ফলে ডায়রিয়া ও বমি হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়।

ডাবের পানি এই ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে। আর বমি হলে রক্তে পটাশিমের পরিমান কমে যাই।

ডাবের পানি ডাবের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম এটা পূরণ করতে পারে। স্যালাইনের সুবিধা নেই এমন এলাকায় ডাবের পানিকে চিকিৎসকরা স্যালাইন হিসাবে ব্যাবহার করে থাকে।

ওজন কমায়:

ডাবের পানিতে অল্প পরিমানের চর্বি রয়েছে, তাই বেশি করে এটা খাওয়া যায়। ডাবের পানি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখে।

চুলের জন্য ভালো:

চুলকে ভালো রাখতে ডাবের পানি ব্যাবহার করে অনেকেই। প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে ডাবের পানি। চুলকে রুক্ষ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে, চুলকে চকচকে ও নরম করে খুশকির সমস্যা নিয়ন্ত্রন করে।

এছাড়াও ডাবের পানি চুলের গোড়ার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে চুল কম পড়ে।

কিডনি ভালো রাখে:

এটা কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করে এবং ডায়রিয়া, আলসার, গ্যাসটাটাইটিস, মূত্রনালীর সংক্রমণ ও ইউরোলিথিয়েসিস প্রতিরোধ করে।

ডাবের পানিতে এন্টিসেপটিক গুণ থাকাতে কাটা-ছেড়া জায়গায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

গুটিবসন্ত বা চিকেনপক্সের ক্ষত ডাবের পানি দিয়ে ধৌত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

coconut_waaterr

ত্বকের জন্য ভালো:

আমরা হয় তো অনেকেই জানিনা গ্লোয়িং ত্বকের একটি রহস্য হল ডাবের পানি। ডাবের পানি ত্বককে ভিতর থেকে তরতাজা রাখে ও আস্তে আস্তে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

ডাবের পানিতে তুলা ভিজিয়ে ব্রণ আর উপরে লাগালে এটি দ্রুত দূর হয়ে যায়। এছাড়াও ডাবের পানি বয়সের ছাপ দূর করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ডাবের পানি বেশ কার্যকর। কারণ এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ও ভিটামিন -সি যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রন করে।

যদি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখতে চান তাহলে ডাবের পানি খান। তবে যদি ডাবের পানি মিষ্টি হয় তাহলে ডায়বেটিস রোগীদের অতিরিক্ত না খাওয়া ভালো।

ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ডাবের পানি ভালো :

গ্রীন কোকোনাট ওয়াটার বা অনেক সময় আমরা বলি কচি ডাবের পানি খাওয়ার কথা। কচি ডাবের পানি বা ডাবের পানিতে চিনি খুবই কম থাকে।

ডাবের পানি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ পানীয়। অসাধারণ ইলেক্ট্রোলাইট-এ পরিপূর্ণ ডাবের পানি টাইপ-২ ডায়াবেটিস-এর রোগীরা প্রায়শ খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীরা ফ্রুট জুস খাচ্ছে, বিভিন্ন aerated বেভারেজ খাচ্ছে, আইসক্রিম খাচ্ছে- এগুলো অতি সাধারণ ব্যাপার।

ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর ডাবের পানি এই সব খাবারগুলো থেকে শুধু ভালই নয় শ্রেষ্ঠ ও অমোঘ ঔষধ।

হার্ট এর জন্য ডাবের পানি ভাল:

হার্টকে ভালো রাখার জন্য দরকার উপযুক্ত খাবার আর একটু শরীর চর্চা। ডাবের পানি হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল পরিমাণ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।

শুধু তাই নয়, দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি হাইপারটেনশনও কমায়।

Coconut-Water

কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করে:

ডাবের পানিতে প্রতি ১০০গ্রামে ২.৬ গ্রাম আঁশ আছে। এটা নিয়মিত পান করলে কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের দাগ দূর করতে:

শুধু পক্সের দাগই নয়, স্কিনের যেকোনো দাগ দূর করার জন্য প্রথমে যে জিনিসটির কথা মাথায় আসে, সেটি হলো ডাবের পানি।

বসন্ত সেরে যাবার পর পরই প্রতিদিন ডাবের পানিতে কটন বার ভিজিয়ে দাগের উপর লাগাতে হবে। এতে উপকার পাবেন।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডাবের পানি খুব ভালো:

গর্ভবতী মায়ের জন্য ডাবের পানি গর্ভকালীন সময়ে অতি নিরাপদ একটি পানীয়।

গর্ভাবস্থায় Morning Sickness অর্থাৎ প্রাতঃকালীন অসুস্থতা, বমি ও ডাইরিয়ার কারণে শরীর পানিশুন্য হয়ে পড়ে।

পাঁচটি প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইটস – মিনারেলস, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস ডাবের পানিতে বিদ্যমান।

এই উপাদানগুলি দ্রুত মাংসপেশীতে শক্তি সরবরাহ করে শরীরকে পুষ্টিতে ভরিয়ে তোলে।

যার ফলে গর্ভাবস্থার ১ম তিন মাস সময়টায় প্রাতঃকালীন দুর্বলতা দূর হয়। পানিশুন্যতা ও বমি সহজেই দূরীভূত হয়।

গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মায়েদের ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ প্রায়শ দেখা যায় যেমনঃ গ্যাস বা অম্বল, বুকজ্বালা, কোষ্টকাঠিন্য ও বদহজম। গর্ভকালীন সময়ে হরমোনাল জটিলতার জন্য এই লক্ষণগুলো দেখা যায়।

প্রাকৃতিক অ্যাসিড নিউট্রিলাইজার – ডাবের পানি, গ্যাস বা অম্বল দূর করে। ডাবের পানিতে বিদ্যমান ফাইবার পাচনতন্ত্রের উন্নতি করে অর্থাৎ হজমশক্তি বাড়ে। রক্তের PH – লেভেল ঠিক রাখে এবং কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।

সতর্কতা

সকালের দিকে অর্থাৎ খালিপেটে ডাবের পানি খাওয়া ভালো।

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।