চুল কেন পাকে? পাকা চুল দূর করার উপায় জেনে নিন।

মানুষের চেহারার সৌন্দর্য বা মাধুর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সুশ্রী, সুন্দর, সুদর্শন, রূপবান, রূপবতী এই শব্দগুলোই মানুষ অপরের কাছ থেকে শুনতে আশা করে।

অনেক মানুষ তাদের চুল এবং চুলের রং তাদের সর্বশ্রেষ্ট সৌন্দর্য সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে। প্রকৃতপক্ষে, সুন্দর, পরিপাটি, মেঘকালো স্বাস্থ্যকর চুল আমাদের চেহারার সৌন্দর্যকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।

চুলের সম্মন্ধে একটা বিষয় খুবই কমন এবং সকলের জানা যে, বয়স যত বাড়ে চুল ততো পাকে। কিন্তু পাকা চুল জীবনের যে কোনো সময়ে দেখা দিতে পারে।

বর্তমান সময়ে ২০ বছর বয়সী ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে, এমনকি টিনএজারদেরও পাকা চুল চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কতো সাধের /যত্নের চুল আমার। হাই এ কি হলো? অল্প বয়সে পেকে যাচ্ছে। বয়স ৪০ ছাড়িয়ে প্রায় ৫০ ছুঁই ছুঁই। কারোরবা ৫০ ছাড়িয়ে ৬০ এর দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারো তারও বেশি।

অর্থাৎ দিন দিন বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। চুলতো পাকবেই। কিন্তু ২০ বা ৩০ বছর বয়সে চুল পেকে গেলে সেটা খুবই বেদনাদায়ক ও মনোবল ভাঙ্গার একটা বিষয়।

দিন দিন পরিবেশ এতো দূষিত হয়ে উঠছে, বাইরে রাস্তাঘাটে বেরোলে এতো ধুলো, ময়লা, ধোঁয়া। তার উপর খাদ্যে ভেজাল। প্রতিদিনকার কাজের চাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা।

ফলে অল্প বয়সে চুল পেকে যাচ্ছে। এছাড়া অজ্ঞতা, সঠিক পুষ্টির অভাব, জেনেটিক্স প্রব্লেম ইত্যাদি তো আছেই।

এরপরেও আমরা সচেতন হলে এবং নিম্নিলিখিত বিষয়গুলো মেনে চললে অল্প বয়সে চুল পাকা অনেকাংশে রোধ করতে পারি।

চুল পাকার প্রধান কারণ

১. ভিটামিনের অভাবজনিত কারণে।
২. ধূমপান করার কারণে।

এছাড়া অন্যান্য কারণগুলো হলো

১. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
২. জেনেটিক্স।
৩. বাস্তব জীবনের কাজের চাপ, হতাশা ও দুশ্চিন্তা।
৪. কিছু রোগে ভোগা ও ওষুধের প্রতিক্রিয়া।
৫. হরমোন ইমব্যালেন্স।
৬. জলবায়ু, দূষণ ও নির্দিষ্ট রাসায়নিকের (কেমিক্যাল হেয়ার ডাই ও হেয়ার প্রোডাক্টস) এক্সপোজারের মতো বহিরাগত কারণ।

পাকা চুল দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি ও খাবার

১. আমলকি ও নারিকেল তেল বা আমলা পাউডার / অয়েল ফর white হেয়ার:

আমলকি ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করে। এটি চুলের জন্য টনিক হিসাবে কাজ করে। এটি আপনার গাঢ় কালো চুলগুলিকে উজ্জ্বল আলোর মতো ঝকঝকে করতে সাহায্য করে।

এটি ভিটামিন সি এর মজুত তহবিল, এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি-এজিং সুবিধা রয়েছে এবং revitalizes the পিগমেন্ট ইন hair ফলিকেলস।

তিন থেকে চারটে শুকানো আমলকি ও এক কাপ নারকেল তেল। নারকেল ও আমলকি একসাথে ফুটিয়ে একটি তেলের মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।

এরপর এটিকে একটি জারে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন দুই চামচ করে মাথায় ভালোভাবে মাখুন। রাতে ঘুমানোর আগে মাখলে বেশি ভালো। সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

আলমন্ড অয়েল বা বাদামতেলের সাথে আমলা পাউডার ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি মসৃন মিশ্রণ তৈরি করে মাথায় মাখলেও একই কাজ করে।

২. আলুর খোসা:

কালো চুলের মাঝে সাদা চুলের উঁকিঝুঁকি। তাহলে কি বয়স অনেক হলো ? সাদা চুল কি আসলেই বয়স প্রমাণের সাক্ষ্য দেয় ? আলুর খোসা সাদা চুলের যম।

৫ থেকে ৬টি আলুর খোসা গরম পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে একটি শ্যাম্পুর বোতলে রাখুন। মিশ্রনের গন্ধ ভালো না লাগলে কয়েক ফোটা সুগন্ধি তেল এর সাথে মিশিয়ে নিন।

৩. মধু, পাতিলেবু, রসুন ও তেল দিয়ে তৈরি খাবারের মিশ্রণ:

বর্তমান সময়ে অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আমরা এক এক জনের কথা শুনে এক এক রকম পদ্ধতি অনুসরণ করি।

আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যানে পাওয়া বিভিন্ন হেয়ার ডাই ও কালার, মেহেদী, কত কিছু না চুলে মাখছি। খাবারের এই মিশ্রণটি অনুসরণ করা যেতে পারে। মিশ্রণটি নিয়মিত খেলে পাকা চুল কালো হয়ে উঠবে।

পাকা চুল দূর করতে হবে বা কমাতে হবে। চুল পাকা প্রতিরোধ করা নির্ভর করে এর cause এর উপর।

যদি ভিটামিনের অভাবজনিত কারণে কারো চুল পাকে তাহলে তাকে  ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, biotin, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, কপার, আইরন, জিঙ্ক  সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

৪. Curry leaves (কারিপাতা) ও নারিকেল তেল:

এক মুষ্টি কারি পাতা ও তিন টেবিল চামচ নারকেল তেল নিন।

৫. ব্ল্যাক টি:

দুই টেবিল চামচ ব্ল্যাক টি ও এক কাপ জল নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ফুটানোর পর ঠান্ডা করে নিন। মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগিয়ে এক ঘন্টা রেখে দিন। এরপর হালকা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

৬. নারকেল তেল ও লেবুর রস:

নারকেল তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় মাখুন।

৭. মেথি ও জল:

মেথি আমাদের চুলের জন্য দারুন উপকারী। মেথি ভিটামিন সি, আইরন, পটাসিয়াম ও লাইসিনের ভালো উৎস। মেথি চুল পাকা রোধ, নতুন চুল গজাতে ও মাথার তালুর শুষ্কতা দূর করে।

দুই চামচ মেথি দানা ও ১/৪ কাপ জল নিন। সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে দানাগুলো পিষে একটি পেস্ট তৈরি করুন। চুল এবং মাথার তালুতে মিক্সচারটি লাগিয়ে ঘন্টাখানেক রাখুন। সপ্তাহে ২-৩ বার মাখুন।

৮. পেয়াজ এবং অলিভ অয়েল:

একটি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ ও এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। একটি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ ও এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল।

পেঁয়াজ কুচিকুচি করে এক চামচ অলিভ অয়েল সহযোগে ব্লেন্ড করে জুইসের মতো করে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার লাগান। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

৯. হেনা পাউডার ও ইনস্ট্যান্ট কফি:

প্রয়োজন হবে– ৫ টেবিল চামচ হেনা পাউডার
১ টেবিল চামচ ইনস্ট্যান্ট কফি
১ কাপ জল

১০. Ridge gourd অর্থাৎ ঝিঙে ও নারিকেল তেল:

১/২ কাপ কুঁচানো ঝিঙে
১ কাপ নারকেল তেল

ধূমপান বা কোনোরকম নেশায় আসক্ত হবেন না। কাজের চাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

বাইরের ধুলো, ময়লা, দূষিত পরিবেশ থেকে এসে চুল ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। পুষ্টিকর খাবার খান। তাহলে এই সমস্যা সহজেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।