নিয়মিত রসুন খেলে হার্ট এটাক ও ব্লাড প্রেসার যাবে চলে।

আনারসে যেমন আছে দুর্লভ ব্রোমেলিন এনজাইম, টমেটোতে লাইকোপেন তেমনি রসুনে রয়েছে বিরল ও দামী-সালফার। এই “সালফার” রসুনকে ঔষধি ক্ষমতা প্রদান করেছে। রসুনে যে কয়টি যৌগ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে অ্যালিসিন অন্যতম। অধিক সালফার সমৃদ্ধ এই অ্যালিসিন, রসুনের প্রধান অস্ত্র।

প্রায় সকল রান্নাঘরেই পাওয়া যাবে “রসুন” নামক মসলাটি বা হার্ব (herb) টি। গোটা পৃথিবীজুড়ে রাঁধুনিদের পছন্দের এই মসলাটি রান্নাঘরের একটি সাধারণ উপাদান। রসুন একটি অলৌকিক হার্ব (herb) যেটি প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

রসুনে বিভিন্ন ধরণের সালফারযুক্ত মিশ্রণ রয়েছে যা এর তীব্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত গন্ধের কারণ। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যৌগ হল অ্যালিসিন যেটি দুর্দান্ত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে পরিচিত।

অ্যালিসিনের সুবিধাগুলি সর্বোত্তমভাবে পেতে হলে রসুন কুঁচি কুঁচি বা পিষে ভর্তা করে খেতে হবে। রসুন সেলেনিয়ামেরও একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। অ্যালিসিন এবং অন্যান্য যৌগগুলি যেমন এজোয়েন এবং অ্যালিন আমাদের দেহের রক্তচলাচল, হজম এবং ইমিউনোলজিক সিস্টেমগুলিতে প্রভাব ফেলে এবং রক্তচাপ হ্রাস করে।

রসুনের পুষ্টি উপাদান

রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম – Allium Sativum এবং ইংরেজিতে Garlic বলে। রসুনে ভিটামিন ও নিউট্রিয়েন্ট-এ ভরপুর যেমন- B1, B2, B3, B6, ফোলেট, ভিটামিন “সি”, ম্যাঙ্গানীজ, ক্যালসিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম ইত্যাদি।

রসুন কিভাবে খাওয়া ভালো?

কাঁচা অথবা অল্প একটু ভেঁজে রসুন খাওয়া ভালো। রসুন বেটে মিহি করে, তেলে কষিয়ে, এরপর অধিক তাপে কড়াইতে বা প্রেসার কুকারে রান্না করে খেলে এর উপকারিতা অনেকটাই কমে যায়- অথচ আমরা এটাতেই অভ্যস্থ।

রসুনের কোঁয়ার খোসা ছাড়িয়ে একটু থেঁতো করে বা আস্ত কোঁয়া লেবুর রসে এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখলে ঝাঁঝালো গন্ধ একেবারেই থাকে না। এতে করে আপনি দিব্যি অনায়াসেই কাঁচা রসুন খেতে পারবেন।

রসুনের উপকারিতা

ঝাঝাঁলো গন্ধযুক্ত এই হার্বটি প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যান্সার কোলন, রেক্টাল, স্টোমাক, ব্রেস্ট ও প্রস্টেট ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিচে রসুন খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –

রক্ত বিশুদ্ধকারক:

আপনি হয়তো সকালে বাথরুম সেরে বেরিয়ে পড়ছেন। ভাবছেন সব ঠিক আছে। কিন্তু এদিকে ব্রণের জ্বালায় আপনি অতিষ্ট। প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন কিছুটা গরম জলের সাথে খান এবং সারাদিন যথেষ্ট পানি পান করুন। ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। প্রতিদিন সকালে হালকা গরম জলের সাথে লেবুর রস ও দুই কোয়া রসুন সহযোগে খাওয়ার অভ্যাস করুন। রসুন আপনার সিস্টেম পরিষ্কার করতে এবং বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করে দিতে সহায়তা করবে।

ঠান্ডা এবং flu প্রতিরোধক:

ঠান্ডা এবং flu প্রায় সময় যেন পরিবারের কারো না কারো লেগেই থাকে। এক্ষেত্রে রসুন খুব উপকারি। নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং ঠান্ডা ও flu সহজে আপনাকে কাবু করতে পারবে না। মধু, আদা সহযোগে রসুন খেলে বন্ধ নাক খুলে যাই।

নিম্ন রক্তচাপ:

অ্যানজিওটেনসিন হল একটি প্রোটিন যা আমাদের রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করতে সহায়তা করে, যার ফলে রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। রসুনের অ্যালিসিন অ্যানজিওটেনসিন এর ক্রিয়াকলাপকে ব্লক করে এবং রক্তচাপ হ্রাস করতে সহায়তা করে। রসুনে উপস্থিত পলিসালফাইডগুলি লোহিত রক্তকণিকা দ্বারা হাইড্রোজেন সালফাইড নামে একটি গ্যাসে রূপান্তরিত হয়। হাইড্রোজেন সালফাইড আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে:

রসুনের উপকারিতার কথা বলতে গেলে প্রথমে যে উপাদানটির কথা বলতে হয় সেটা হলো এলিসিন। এই “allicin”- এন্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিভাইরাস, এন্টিফাংগাল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে ও শরীরকে সুস্থ্য রাখে। রসুনে বিদ্যমান সালফার একে এন্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট সরবরাহ করে থাকে।

অ্যালিসিনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিদিন দৈনিক রসুন গ্রহণ কলেস্টেরলের মাত্রা কমতে সহায়তা করে। এটি রক্তচাপ এবং রক্ত ​​শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপকারী।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে:

রসুন আমাদের রক্তে ​​ট্রাইগ্লিসারাইড এবং মোট কোলেস্টেরলকে কমিয়ে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ত্বকের যত্নে:

রসুনের উদ্দীপক বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিকালের প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং কোলাজেনের হ্রাসকে ধীর করে দেয় যা ত্বকে বৃদ্ধ বয়সে স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়। রসুন ছত্রাকের সংক্রমণে আক্রান্ত ত্বকে আশ্চর্যজনক ভাবে কাজ করে এবং একজিমার মতো ত্বকের অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেয়। এটি অ্যাথলিটের পা এবং দাদরোগের মতো ছত্রাকের সংক্রমণেরও কার্যকর প্রতিকার।

চুলের যত্নে:

আমরা চুলের জন্য পেঁয়াজের বিস্ময়কর উপকারিতা সম্পর্কে জানি। চুলের যত্নে রসুন দারুন কার্যকরী।

ক্যান্সার প্রতিরোধক:

স্তন ক্যান্সার রোগীদের একটি ফরাসী সমীক্ষায় দেখা গেছে যে রসুন, পেঁয়াজ এবং ফাইবার গ্রহণ স্তনের ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হ্রাসের সাথে জড়িত।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে অল্প পরিমাণে খেয়েছে তাদের তুলনায় যে পরিমাণে রসুন  বেশি পরিমাণে খেয়েছে তাদের মধ্যে অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫৪ শতাংশ কম ছিল।

উত্তেজনা বৃদ্ধি করে:

রসুনের এফ্রোডিসিয়াক উপাদানগুলো রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়ায়। রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর সাথে সাথে কামোদ্দীপনা জাগায়।

দাঁত ব্যথা কমায়:

রসুনের ২-৩ টা কোয়া নিন। রসুন চূর্ণ করে আক্রান্ত দাঁতে লাগান। এটির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যানালজেসিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দাঁত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সচেতন থাকুন এটি মাড়িতে জ্বালাময় হতে পারে।

ওজন হ্রাস করুন:

গবেষণা অনুসারে, রসুন আমাদের দেহে ফ্যাট কোষগুলির গঠন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে। রসুনে পাওয়া 1, 2-টিটি (1, 2-ভিন্যালডিথিন) এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলো ফ্যাট কোষ গঠনে বাধা দিয়ে ওজন হ্রাসে সহায়তা করে।

ফাংগাল ইনফেকশনে রসুন তেল:

ফাংগাল ইনফেকশনে রসুন তেল ভালো কাজ দেয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:

রসুন ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

সতর্কতা

  • Asthma রোগীরা রসুনের ব্যাপারে অনেক সতর্ক থাকবেন। তাদের রসুন গ্রহণ না করাই ভালো।
  • অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তাই ২-৩ কোয়ার বেশি দিনে গ্রহণ না  করা ভালো।
  • সার্জারি বা অপেরেশনের আগে ব্যবহার না করাই ভালো।
  • রসুন খেয়ে মুখে গন্ধ হলে দাঁত ব্রাশ করে বাইরে যাবেন।