স্তন্যদানকারী মায়ের খাদ্যের তালিকা।

মায়ের দুধই শিশুর সেরা খাবার। তাই স্তন্যদানকারী মায়ের খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। শিশুকে খাওয়াতে গিয়ে মায়ের স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, এমনটা যেন না হয়। একজন নতুন মায়ের অন্যান্য নারীদের তুলনায় বেশি খেতে হয়। এমনকি একজন গর্ভবতী নারীর তুলনায়ও তার খাবারের চাহিদা বেশি থাকে।

নবজাতকের মায়ের নিজের দেহের ক্ষয়পূরণ করার পাশাপাশি সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে তার অতিরিক্ত পুষ্টি বা খাবারের দরকার হয়। এজন্য স্তন্যদানকারী মায়ের প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।

আসুন এবার জেনে নিই, স্তন্যদানকারী মায়ের খাদ্যের তালিকা সম্পর্কে-

শর্করা জাতীয় খাবার:
নবজাতকের মায়ের দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দৈহিক শক্তি ফিরে পেতে শর্করা জাতীয় খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। চাল, আটা, ময়দা, আলু, গুড়, চিনি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে কার্বোহেইড্রেট পাওয়া যায়। মায়ের প্রয়োজন অনুসারে শর্করা জাতীয় খাবার মায়ের এবং তার শিশুর শরিীরিক বিকাশে উল্লখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার:
সব রকমের ডাল, শিমের বীজ, মাছ, ডিম, দুধ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন আছে। আমিষ জাতীয় খাবার মায়ের শরীরের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করে এবং শিশুর শরীর গঠনে সাহায্য করে। ডিমের কুসুমে ভিটামিন “ডি”, মিনারেল এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে যা বাচ্চার হাড় মজবুত করে। দিনে এক থেকে দুটি ডিম খাওয়া যেতে পারে।

ফাইবার যুক্ত খাবার:
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার সহজে হজম হতে চায় না। নতুন মায়েরা প্রায় সময় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকেন। এজন্য বেশি পরিমানে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কচুশাক, সজনে, কলার মোচা, ঢেঁড়স, ডাটা, বাঁধাকপি, শিম, কচু, মটরশুঁটি, কলমিশাক ও মিষ্টি কুমড়ার শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।

শাকসবজি:
যেকোন সবুজ শাকসবজি নতুন মায়েদের জন্য উপকারী। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন। এর মধ্যে পালং শাক, কচু শাক অন্যতম। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “এ”, ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা নতুন রক্ত কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। যে সকল মায়েদের শিশু জন্মদানের সময় রক্তপাত হয়ে থাকে তাদের জন্য পালং শাক খাওয়া অনেক প্রয়োজন।

ফলমূল:
নবজাতক ও মায়ের ভিটামিন ও পুষ্টির জন্য নানারকম ফল খাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে, ফল খেতে না চাইলে তাজা ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন রকম দেশীয় মৌসুমি ফলে প্রচুর ভিটামিন থাকে। সাধারণ দেশীয় ফল যেমন- কলা, পেঁপে, পেয়ারা, বেল, আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল।

দুগ্ধ জাতীয় খাবার:
দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। প্রতিদিন দুই গ্লাস করে দুধ পান করুন। ক্যালসিয়াম, ভিটামিনসহ অনেকগুলো পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে দুধ। এছাড়া দুধ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও সাহায্য করে। যা স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

ওমেগা-3 ফ্যাট জাতীয় খাবার:
মায়ের শরীরের ক্ষতি পূরণ করতে এবং শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে ওমেগা-3 ফ্যাট জাতীয় খাবারের কোন বিকল্প নেই। কাঠবাদাম, সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল থেকে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-3 ফ্যাট পাওয়া যায়। যা প্রেগনেন্সির ধকল কাটিয়ে উঠতে নতুন মাকে সাহায্য করে।

পানি:
খাদ্য গ্রহণ, পরিপাক ও শোষণ করতে পানির প্রয়োজন। পানি রক্ত তরল রাখে এবং মলমূত্রের সাথে দূষিত পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়। পানির অভাবে হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। নবজাতক মায়ের দুধ খাওয়ায় মাকে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। সন্তানের জন্মের পর অনেকসময় মায়ের পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই এসময় মায়ের পানি শূন্যতা রোধে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।

৬ মাসের আগে বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়া বাইরের কোন খাবার দেবেন না। স্বাস্থ্যকর খাবার খান সুস্থ্য থাকুন। আর বাচ্চাকেও সুস্থ্য রাখুন। মনে রাখবেন আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।