স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে কি কি খাবার খাবেন, জেনে নিন।

একটা দুটো খাবারের নাম বললাম আর সেটা খেলে স্তন ক্যান্সার সেরে যাবে বিষয়টা এমন নয়।

এমনকি কোনো একটা খাবারের জন্য ব্রেস্ট ক্যান্সার দেখা দিতে পারে বিষয়টা তেমনও নয়। স্তন ক্যান্সার একটি জটিল রোগ। এই রোগটা অনেক কারণে হতে পারে। যেসব কারণে হয়ে থাকে সেগুলোকে আমরা দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি।

প্রথম ভাগ সম্বন্ধে বলতে গেলে বলতে হয় যে, মানুষের শরীরের ভিতরের ব্যাপার যেটা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু কিছু বিষয় যেটা চোখের অগোচরে থাকার ফলে আমরা সতর্ক থাকতে ভুলে যায়।

দিদার বা নানীর ছিলো, মায়েরও হয়েছে সেক্ষেত্রে মেয়ে হয়ে আপনি যদি আগে থেকে সচেতন না হন তাহলে আপনারও স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

দ্বিতীয় ভাগ সম্পর্কে অর্থাৎ কিছু কারণ রয়েছে যেটা মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমনঃ আমি নিয়মিত ব্যায়াম করি, ওজন বাড়তে দিই না, প্রচুর লাল মাংস এবং মদও খাই না।

সুষম খাবার এবং মানসম্মত খাবার খাই। স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।

জীবনধারণের স্টাইল পরিবর্তন বা যেটাকে আমরা বলি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং সচেতন থাকলে আপনি ধরে নিতে পারেন স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ শুরু হয়ে গেছে। আপনি স্তন ক্যান্সার -এর পিঠে পেরেক ঠুকে দিলেন।

আপনার খাবারের থালাটিকে রঙিন ফলমুল ও শাকসবজি দিয়ে এমনভাবে সাজান যেনো স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের ভিত্তি মজবুত হয় খাবারের টেবিল থেকে।

রঙ্গিন শাকসবজি ও ফলমুলে ভর্তি আপনার খাবারের প্লেটটি যদি রংধনুর মতো দেখায় তাহলে তো মন্দ হয় না।

এটা কোনো ম্যাজিক বুলেট না হলেও গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং ব্যায়াম, স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি ২৫%-৩০% কমিয়ে দেয়।

শাকসবজি ও ফলমূলে থাকা আন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এছাড়া শাকসবজি ও ফলমূলে রয়েছে উচ্চ পরিমানে ফাইবার (আঁশ) ও ভিটামিন।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবার:

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে যে খাবারগুলি ভূমিকা রাখে সেগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো –

ব্রকলি :

ক্যান্সারের তথা টিউমারের বৃদ্ধি কমাতে চান তাহলে ব্রকোলি খাওয়া শুরু করুন। ব্রোকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে সালফোরাফেন। এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ব্রকলি, ফুলকপি, পাতাকপি খাদ্য তালিকায় রাখুন ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বাঁচুন। স্যালাড হিসাবে কাঁচা খেতে পারলে বেশি ভালো। রান্না করলে অল্প তাপে রাঁধুন।

পালংশাকঃ

পাতাজাতীয় সবধরণের শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিড্যান্ট ও ফাইবার। বিশেষ করে পালংশাকে রয়েছে বেশি পরিমানে বিটাক্যারোটিন ও লুটেনিন নামের শক্তিশালী দুইটি উপাদান।

গবেষকরা জানান যারা সপ্তাহে অন্ততঃ দুইবার পালংশাক খায় তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

হলুদঃ

হলুদের ভিতর শক্তিশালী নিজস্ব একটি কেমিক্যাল উপাদান বিদ্যমান। এই উপাদানটির নাম হলো কারকিউমিন (curcumin) . এর এন্টি -ইনফ্লামেটরি প্রভাব ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

রসুন ও পেঁয়াজ :

রসুন মানব শরীরের কোষ গুলোকে স্থির থাকতে দেয় না অর্থাৎ সেল সাইক্লিং-এ রসুন কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে করে ক্যান্সার সেল সহজে বেড়ে উঠতে পারে না।

গ্রীন টি:

গ্রিন টি ওজন হ্রাস থেকে শুরু করে রক্তচাপ পরিচালনা একাধিক উপকার করে থাকে। ক্যান্সার প্রতিরোধে মানবদেহে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর কারণ গ্রিন টিতে পলিফেনল এবং ক্যাটচিনের পরিমাণ বেশি।

এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি কোষগুলি ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির কারণে সৃষ্ট ডিএনএর ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন এবং স্তন-ক্যান্সার প্রতিরোধে পেরেক ঠুকুন।

বিনস:

শিম ও শিম জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দানাদার জাতীয় খাবার এস্ট্রোডিউল-এর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা নিয়মিত দানাদার খাবার খায়, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় কমে যায়।

সয়া ফুডস (সয়া মিল্ক বা সয়াবিন বড়ি) :

উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস সয়া বীজ। সয়া বীজ থেকে উৎপন্ন খাদ্যপণ্য হলো: সয়া মিল্ক, সয়াবিন বড়ি, টোফু, সয়াবিন তেল, সয়া ময়দা, সয়া প্রোটিন, সয়া সস ইত্যাদি।

কারণ সয়াবিনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তন-ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। প্রাণীজ আমিষে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি এখন আর কারো অজানা নয়।

সেই তুলনায় উদ্ভিজ্জ আমিষে স্বাস্থ্যঝুঁকি একেবারে কম বা নেই বললেই চলে। সয়াবিনে ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট অনুপস্থিত।

সয়াবিনে উদ্ভিদের যৌগ রয়েছে যা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

বরই:

বরই ও পিচে রয়েছে পলিফেনল যা ক্যান্সার-এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

আপেল:

লাল টুসটুসে আপেল শুধু ক্যান্সারই দূর করে না এর ভিতর আরো অনেক উপকারী কম্পাউন্ড বিদ্যমান।

প্রতিদিন আপেল খান আর ডাক্তার থেকে দূরে থাকুন পুরোনো এই বাক্যটি শুনলেই বোঝা যায় আপেল কতটা পুষ্টিকর একটি ফল। ডালিম ও খেতে পারেন।

টমেটো ও গাঁজর:

টমেটো -এর খোসার নিচে রয়েছে প্রচুর পরিমানে লাইকোপেন। গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। লাইকোপেন ও বিটা-ক্যারোটিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

সামুদ্রিক মাছ:

এতে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যেমন: স্যামন, সার্ডিন, টুনা।

হোল wheat ব্রেড, ব্রাউন রাইস, পাস্তাস, oat মিল, ডাল, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। সকল ধরণের বাদাম তবে wallnut স্তন ক্যান্সার-এ ভালো কাজ দেয়। আভোকাডোস খেতে পারেন।

অলিভ অয়েল-এ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। এই ডায়েটারি গাইডলাইনগুলি আপনাকে আপনার স্তন ক্যান্সারের সামগ্রিক ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।

উপসংহারে বলতে পারি, সকল প্রকার ক্যান্সার এর জন্য দুর্বল খাদ্যাভাসই অনেকাংশে দায়ী।

বর্তমান ফার্স্ট ফুড-এর জামানায় আমরা আমিষ জাতীয় খাবারই বেশি খেয়ে থাকি। শাকসবজি কম খাই। প্রসেসেড ফুড, রেড মিট, পোল্ট্রি, বিগ ফিশ এগুলো ছাড়া দিন যেনো চলে না।

এলকোহল জাতীয় খাবারও সেই সাথে যোগ হয়েছে। দ্রুত ওজন বেড়ে যাচ্ছে সেই সাথে কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন।

এটাই তো ক্যান্সার। আসুন আমরা শরীর নীরোগ ও কর্মক্ষম রাখতে বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল খাই এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী দেওয়াল গড়ে তুলি।