“চা” তে যোগ করুন দারুচিনি এবং কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

শরীর ও মন চাঙ্গা করতে এক কাপ গরম গরম চায়ের কোনো তুলনা হয় না। দিনভর চাঙ্গা ও চনমনে থাকতে – কে না ভালোবাসে? ঘুম থেকে ওঠার পর বা যে কোনো সময়ে শরীরকে চাঙ্গা করতে চা এর তুলনা হয় না।

চা শুধু কি শরীরটাকে চাঙ্গা বা সজীব করে? না, এর অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে। চায়ের ঔষধি গুণ বৃদ্ধি করতে চাতে যোগ করুন দারুচিনি। দারুচিনি চায়ের (cinnamon tea) সুমিষ্ট ঘ্রাণে শরীর ও মন যেন একটু বেশি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

এর সুমিষ্ট ঘ্রানের পাশাপাশি অসাধারণ ঔষধী গুনাগুনও রয়েছে। দারুচিনি একটি চমৎকার পুষ্টি সমৃদ্ধ মশলা, যা চর্বি স্তর কমিয়ে শারীরিক নানা অসুখ থেকে দূরে রাখে।

রক্তের শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে, হার্ট ভালো রাখতে, সর্দি কাশিতে, বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দারুচিনি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

দারুচিনি চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিচে দারুচিনি চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে:

দারুচিনি চা রক্তে শর্করা হ্রাস করতে পারে। প্রথমে, দারুচিনি খাওয়ার পরে আমাদের রক্ত ​​প্রবাহে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। এটি অসংখ্য হজম এনজাইমের সাথে মিলিত হয়ে হজমে কার্বোহাইড্রেট ভাঙ্গনকে ধীর করে দেয়।

দ্বিতীয়ত, দারুচিনিতে এমন একটি উপাদান রয়েছে যা মানব দেহে ইনসুলিনের মতো কাজ করতে পারে। দারুচিনি আমাদের শরীরের কোষগুলির দ্বারা গ্লুকোজের ব্যবহার উন্নত করে।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে:

মরণব্যাধি ক্যান্সারের অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে দারুচিনি চা। কারণ দারুচিনিতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। এটি ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি এবং টিউমারগুলিতে রক্তনালী গঠন হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, দারুচিনি কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। তাই আমরা নিয়মিত দারুচিনি চা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারি।

হার্টের জন্য ভালো:

দারুচিনি চা রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে, পাশাপাশি ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রাও হ্রাস করতে পারে। এছাড়া দারুচিনি চা HDL (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে যা রক্তনালীগুলি থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণ করে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তবে দারুচিনি পরিমাণ মতো খেতে হবে।

সর্দি কাশিতে:

দারুচিনি চাতে অ্যান্টি–মাইক্রবিয়াল আর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি গুন রয়েছে। তাই এটি আমাদের সর্দি-কাশি থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। দারুচিনি আর লবঙ্গ একসাথে পানিতে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফোটান তারপর ছেঁকে পান করুন সর্দি কাশিতে উপকার পাবেন।

ওজন কমাতে:

দারুচিনি চা প্রায়শই ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে দারুচিনি চা খেলে পেটের চর্বি বা কোমরের পরিধি কমে যায় যা ওজন কমাতে সহায়তা করে।

বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

দারুচিনি চা ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। দারুচিনিতে কিছু শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

এর অন্যতম সক্রিয় উপাদান সিনামালডিহাইড যা, বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, টেস্ট-টিউব গবেষণা দেখায় যে, দারুচিনি বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাক বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।

মাসিকের ব্যথা হ্রাস করে:

দারুচিনি চা বিশেষত মহিলাদের জন্য উপকারী। কারণ এটি মাসিকের কমাতে কার্যকরী। একটি নিয়ন্ত্রিত গবেষণায় মহিলাদের মাসিকের প্রথম ৩ দিনের জন্য প্রতিদিন ৩ গ্রাম দারচিনি দেওয়া হয়েছিল। এতে তারা মাসিকের ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কম অনুভব করেছেন।

সতর্কতা:

অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। যা খাবেন পরিমাণ মতো খাবেন। শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: