সাধারণ খাবার কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

খাদ্য যেমন শরীরের জন্য উপকারী, তেমনই সমান ভাবে অপকারীও। কারণ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আপনাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তুলতে পারে, আবার কিছু খাবার অনায়াসেই আপনাকে মুত্যুর কোলে ঠেলে দিতে পারে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন খাবার গুলো শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর-

ফাস্টফুড:

সব সময় হামবার্গাস, ভাজা যেকোনো খাদ্য, ঝলসানো মুরগি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। এগুলোতে উচ্চমাত্রায় স্যাটুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। ব্রয়েলড স্যান্ডউইচ মুরগি খান। চামড়া খাবেন না। এগুলোর সাথে সালাদ খান। যেসব খাবার ঝলসানো নয়, সেগুলো খান। উচ্চমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাদ্য ও পনির এড়িয়ে চলুন।

সবুজ আলু:

আলুর পাতা শেকড়ে গ্লাইকোঅ্যালকালোইড নামে একটি বিষাক্ত পদার্থ থাকে। গ্লাইকোলক্যালয়েড আলুর সংস্পর্শে আসলে আলু সবুজ দেখায়। উচ্চ গ্লাইকোলক্যালয়েডযুক্ত অর্থাৎ সবুজ আলু খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, বিভ্রান্তি, মাথাব্যথা হতে পারে। এমনকি এই গ্লাইকোঅ্যালকালোইড শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

মাশরুম:

প্রকৃতিতে মাশরুমের হাজার রকমের জাত রয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে এগুলোর ২০ শতাংশই মানুষকে অসুস্থ করে দিতে পারে আর শতকরা এক ভাগ তাৎক্ষণিকভাবে মানুষ মেরেও ফেলতে পারে। এই বুনো মাশরুম খেলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমি, পানিশূন্যতা, তীব্র তৃষ্ণা, লিভার ফেইলিওর, কোমা এবং মৃত্যু হতে পারে।

পটকা মাছ:

বাংলাদেশ, চীন, জাপান, কোরিয়া সহ বেশ কিছু দেশের মানুষের কাছে পটকা মাছ বা পাফার ফিশ বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ। কিন্তু এই মাছটি ঠিকভাবে প্রসেস করা সম্ভব না হলে সেটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এর শরীরে থাকে বিষাক্ত টিউরোটক্সিন নামক উপাদান, যা সায়ানাইডের তুলনায় বহুগুণ বেশি কার্যকর।

কাঁচা মধু:

মৌমাছির চাক ভেঙ্গে তাজা মধু সংগ্রহ করতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাস্তুরায়িত করা হয়নি এমন কাঁচা মধু শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ কাঁচা মধুর মধ্যে অনেক বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে, যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া এই মধু খাওয়ার ফলে ঘোর ঘোর ভাব আসা, দুর্বল লাগা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি করার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

ভাজা ডিম:

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিন্তু কাঁচা ডিম খাওয়া, ডিমের এক পাশ পোঁচ করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর।

কাজু বাদাম:

কাজু বাদামের দুইটি জাত রয়েছে- একটি মিষ্টি, অপরটি তিতকুটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও তেতো কাজুবাদামের ভেতর সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামের একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ তা শরীরে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করতে পারে।
কাঁচা অবস্থায় তেতো কাজুবাদাম খাওয়া একেবারে উচিত নয়। বলা হয়, প্রতিটা তেতো কাজুবাদামের ভেতর ছয় মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে। কারো শরীরে ১০০ মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রবেশ করলে তা তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট হতে পারে। কাঁচা কাজু বাদাম বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কাজু বাদাম খাওয়া ফলে প্রতিক্রিয়া হিসাবে অ্যালার্জির হতে পারে।

কামরাঙ্গা:

কামরাঙ্গা কিডনি রোগীদের জন্য ভালো নয়। কামরাঙ্গাতে আছে উচ্চ মাত্রার অক্সালেট। কিডনি, মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর উচ্চ অক্সালেট শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু কিডনি রোগীর কিডনি দুর্বল থাকে। তাই শরীর থেকে এই ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে পারে না। এর ফলে তা রক্ত থেকে আস্তে আস্তে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং বিষক্রিয়াও ঘটাতে পারে যেমন বিভ্রান্তি, খিঁচুনি এবং এমনকি মৃত্যুও। এজন্য কিডনি রোগীরা কামরাঙ্গা খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।

তেতো আলমন্ড:

তেতো আলমন্ড এ অ্যামিগডালিন, একটি রাসায়নিক যৌগ যা সায়ানাইডে পরিণত হতে পারে। তেতো আলমন্ড খেলে বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে।

আপেলের বীজ:

আপেলের বীজে সায়ানাইড থাকে। সায়ানাইড আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যদি ভুল বশত খেয়ে ফেলেন খুব বেশি সমস্যা হবে না কারণ আপেলের বীজে একটি প্রতিরক্ষামূলক আবরণ থাকে যা সায়ানাইডকে বের হতে দে না। তবে সাবধান হওয়া ভালো। আল্প মাত্রায়, সায়ানাইড দ্রুত শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি এবং সম্ভবত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

জায়ফল:

জায়ফলে খুবই সুন্দর সুমিষ্ট ঘ্রাণ রয়েছে। জায়ফল আপনি যেকোন খাবারে খুবই সামান্য পরিমাণে দিয়ে খেতে পারেন। কিন্তু পরিমানে বেশি জায়ফল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এই মসলা থেকে একটি তেল হ্যালুসিনেশন (hallucinations) বের হয় যা, মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি এবং খিঁচুনির কারণ হতে পারে।