যেসব ভেষজ চা পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

ভেষজ চা প্রায় শতাব্দী ধরে সবাই পান করে আসছে। ভেষজ চা নাম সত্ত্বেও ভেষজ চা মোটেও সত্যিকারের চা নয়। গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি এবং ওলোং চা সহ সত্যিকারের চা ক্যামেলিয়া সিনেনেসিস গাছের পাতা থেকে তৈরি করা হয়।

অন্যদিকে, ভেষজ চা শুকনো ফল, ফুল, মশলা বা ভেষজ থেকে তৈরি করা হয়। এর অর্থ ভেষজ চা বিভিন্ন স্বাদের হতে পারে এবং পানির বিকল্প হতে পারে।

সুস্বাদু হওয়ার সাথে সাথে কিছু ভেষজ চায়ে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আসলে, ভেষজ চা শত শত বছর ধরে বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

গলা খুসখুস ভাব ও ঠাণ্ডা লাগা কমাতে যেমন ভেষজ চা কার্যকর, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও জুড়ি নেই এসব চায়ের। এক কাপ গরম ভেষজ চা দূর করতে পারে কাজের ক্লান্তিও।

জেনে নিন তুলসি, পুদিনা, আদা, দারুচিনিসহ নানা ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি চা পানের উপকারিতা সম্পর্কে –

Peppermint Tea

পুদিনা চা:

পুদিনা চা বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত ভেষজ চা। এটি হজমজনিত স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

এই চাতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে পুদিনা চা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে বদহজম, বমি বমি ভাব এবং পেটের ব্যথা উপশম করতে পারে।

Herbal ginger tea

আদা চা:

আদা চা হল মশলাদার এবং স্বাদযুক্ত চা যা স্বাস্থ্যকর, রোগ-প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বর জ্বর ভাব, গলাব্যথামাথাব্যথা দূর করতে সহায়ক হিসেবে পান করা হয় আদা চা। 

এই চা ব্যথা দূর করার সাথে সাথে বমি বমি ভাবের জন্য এক কার্যকর প্রতিকার হিসাবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

এছাড়া আদা পেটের আলসার প্রতিরোধ করতে এবং বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আদা পরিপূরকগুলি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তের লিপিডের মাত্রায় সহায়তা করে।

Hibiscus tea

জবা ফুলের চা:

হিবিস্কাস চা বা জবা ফুলের চা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। গবেষণা দেখায় যে, জবা ফুলের চা ওষুধ ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এছাড়া ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করতে পারে এবং এমনকি ওজন হ্রাসকে সহায়তা করতে পারে।

জবা ফুলের চাতে অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় বার্ড ফ্লুর স্ট্রেনের বিরুদ্ধে এই ফুল অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। জবা ফুলের চা পান করা আপনাকে জ্বরের মতো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

Herbal Fennel tea

মৌরি চা:

মৌরি গাছ বহু শতাব্দী ধরে ঔষধি গাছ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মৌরি বীজ শুকিয়ে তারপর গুড়ি করে নিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন।

এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রভাব রয়েছে।

এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার (খাদ্য আঁশ) পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে। মৌরি চা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজমের জন্য ভালো এবং প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে।

এক কাপ পানিতে পরিমাণ মতো মৌরি দিয়ে ভালো করে জ্বাল দিয়ে ছেকে কাপে ঢেলে পরিবেশন করুন মৌরি চা।

Herbal Cinnamon Tea

দারুচিনি চা:

দারুচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়ে বানাতে পারেন ভেষজ চা।

১ চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া, ১/৪ চা চামচ গোলমরিচের গুঁড়া, ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ চা চামচ মধুর মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত পানি দিয়ে মিশিয়ে ছেঁকে নিন। এই চা আপনাকে চাঙা রাখবে অনেকক্ষণ পর্যন্ত।

tulsi tea herb

তুলসী চা:

প্রকৃতি মায়ের এক অফুরুন্ত ঔষুধের ভান্ডার এই তুলসী বা তুলসী পাতা। এই পাতাটি শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন দূর করে এবং এতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

তুলসী চা সর্দি কাশি দূর করে, ব্লাড সুগার কমায়, ওরাল এবং চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, হজমের জন্য ও মানসিক চাপ কমায়।

কয়েকটি তাজা পাতা নিয়ে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন তুলসী চা।

Herbal maringa tea

সজিনা পাতা চা:

সজিনা গাছকে প্রায়শই একটি অলৌকিক গাছ হিসাবে উল্লেখ করা হয় কারণ এই পাতাগুলি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে পরিপূর্ণ।

এছাড়া প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। সুপারফুড হিসাবে গত কয়েক বছরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সজনা পাতা।

গাছ থেকে ফ্রেশ পাতা ছিড়ে কিংবা পাতা শুকিয়ে চা বানাতে পারেন।

Herbal rose tea

গোলাপ চা:

গোলাপ চা আলসার, অ্যাজমা, ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সহায়তা করে। গোলাপ চা পিত্তথলি ও যকৃতকে ভালো রাখে। এছাড়া গোলাপ চা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতেও সহায়তা করে এবং হজমের পক্ষেও ভাল। গোলাপের গন্ধ আমাদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে এটি একটি স্ট্রেস বুস্টার এবং মেজাজ-বর্ধকও।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: