তুলসী পাতা সর্দি কাশির প্রাকৃতিক মহৌষধ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও কিডনি পরিষ্কারে সহায়তা করে।

ব্রিটিশরা যখন ভারতে পা রাখে তখন মশার অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য (Holy Basil) বা তুলসীর শরণাপন্ন হয়। তারা একে বলতো “মাসকিউটো প্লান্ট”।

প্রকৃতি মায়ের এক অফুরুন্ত ঔষুধের ভান্ডার এই তুলসী বা তুলসী পাতা। আয়ুর্বেদে তুলসীকে “হাড়ের রানী”, “গুল্মের রানী” এবং “প্রকৃতির মা ঔষুধ” বলা হয়েছে। ঔষুধী ও আধ্যাত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে একে জীবনের একটি elixir হিসাবে সম্মানিত করা হয়।

যদিও তুলসী গাছ ও পাতা ছোট। কিন্তু এর উপকারীতা বা গুন কোনো অংশে ছোট বা কম নয়। ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি যে, কাশি হয়েছে তুলসী পাতা খাও কাশি কমে যাবে।

শুধু যে কাশির মধ্যে সীমাবদ্ধ তা কিন্তু না। তুলসীতে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা, রক্ত পরিষ্কার বা পরিশুদ্ধ করে। এছাড়াও তুলসী এন্টিসেপ্টিক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।

তুলসী শব্দের অৰ্থ যার তুলনা নেই। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তুলসী একমাত্র গাছ যে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে। কিন্তু যে কোনো গাছ রাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে।

তুলসী বা তুলসী পাতার উপকারীতা

তুলসী অতি পরিচিত শব্দ হওয়ার পরেও এটার উপকারীতা সম্পর্কে খুব বেশি আমরা জানি না। আসুন তুলসীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারীতা সম্পর্কে জানা যাক –

কাশি কমাতে তুলসী পাতা বা তুলসী চা খান:

তুলসী পাতা কাশি সারাতে চমৎকার কাজ করে। কাশি হলে তুলসী পাতা, আদা ও মধুর একসঙ্গে মিশিয়ে খান৷ দ্রুত আরাম পাবেন। এছাড়া তুলসী চা খেতে পারেন। তুলসী চা বাজার থেকে কিনতে পারেন বা নিজেরা ঘরে তৈরি করতে পারেন। ঘরে তৈরি করতে গেলে এক্ষেত্রে আদা কুচি, এলাচ গুঁড়ি এবং পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর সামান্য মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। কাশি কমাতে সাহায্য করবে।

ক্যান্সার নিরাময়ে:

তুলসী পাতার মধ্যে থাকা এন্টি অক্সডেন্ট ও এন্টি কারসেনোজেনিক উপাদান ব্রেস্ট ক্যান্সার(স্তন ক্যান্সার) ও ওরাল ক্যান্সার এর বৃদ্ধি হতে দেয় না। কারণ এ উপাদান গুলো টিউমারের মধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়।

ডায়বেটিস নিরাময় করে:

তুলসী পাতায় প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল অয়েল আছে যা, শরীরের মধ্যে ইউজেনল, মিথাইল ইউজেনল ও ক্যারিওফাইলিন উৎপন্ন করে। এই উপাদান গুলো অগ্নাশয়ের বিটা সেলকে কাজ করতে সাহায্য করে (বিটা সেল ইনসুলিন জমা রাখে ও নিঃসৃত করে )। যার ফলে ইনসুলিনের সিংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে ব্লাড সুগার কমে এবং ডায়বেটিস ভালো হয়।

পেটের সমস্যায় ও জ্বর হলে:

পেট খারাপ হলে ১০-১২টা তুলসী পাতার সাথে সামান্য কয়েকটা জিরা নিয়ে পেস্ট করে দিনে ৩-৪ বার খান। এতে করে পেটের সমস্যা অর্থাৎ পেট খারাপ ঠিক হয়ে যাবে। জ্বরের জন্য তুলসী পাতা খুবই ভালো। তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিছরি মিশিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে নিন। জ্বর হলে দিনে ৩-৪ বার সেদ্ধ করা পানি পান করুন। দেখবেন জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। পেটের সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে বা অতিরিক্ত জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কিডনির পাথর দূর করে:

রক্তে ইউরিক এসিড -এর লেভেলকে কমতে ও কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে তুলসী পাতা।

বসন্তের দাগ ও হামের দাগ কমায়:

বসন্তের দাগ ও হামের দাগ কমাতে তুলসী পাতা খুব কার্যকরী। মুখে জল বসন্তের কালো দাগে তুলসী পাতার রস লাগান আস্তে আস্তে দাগ মিলিয়ে যাবে। সাধারণত হামের পর শিশুদের গায়ে কালো দাগ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস লাগালে গায়ের দাগ মিলিয়ে আগের মতো হয়ে যাবে।

ত্বকের যত্নে:

শুনলেই একটু অবাক হতে হয় যে, রূপচর্চায় খুব কাজে দিবে তুলসীর পাতা। কারণ ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ে সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। বিশেষ করে তরুণীদের কাছে কমন অভিযোগের বিষয়। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা বেশি হয়। ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে হওয়ার কারণে লোমকূপের মুখে ময়লা-জীবাণু আটকে থাকে। মরা কোষ দূর না হওয়ার কারণে ত্বকে ব্লাকহেডসের পরিমাণও বেড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে বাচার সবচাইতে সহজ উপায় হচ্ছে তুলসী পাতার ব্যবহার। কারণ এটি প্রাকৃতিক হওয়ার কারণে আপনার ত্বকের কোন ক্ষতি করবে না। তাই আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। ভালো ফলাফল পেতে তুলসী পাতার সাথে গোলাপ জল, তুলসী বীজ, মধু ও চন্দন মিশিয়ে লাগাতে হবে। ব্রণ, কালো দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

পুড়ে গেলে:

তুলসী পাতা এন্টিসেপ্টিক হিসাবে কাজ করে। শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান এতে জ্বালা কমবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়ার দাগও উঠে যাবে।

হজমের জন্য তুলসী:

তুলসী পাতা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। হজম ও স্নায়বিক প্রণালীকে শক্তিশালী করে এবং মাথাব্যাথার জন্য একটি ভাল প্রতিকার হতে পারে। তুলসীতে থাকা ইউজেনল আপনার পাচনকে সুস্থ রাখে। তুলসী পাতা শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা সামান্য করে রাখে এবং শরীরের পিএইচ (PH) লেভেল ঠিক রাখে।

মানসিক চাপ কমায়:

মানসিক চাপ কমাতে খুবই কার্যকরী। তুলসী পাতা কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে । স্নায়ু শিথিল করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিকলকে নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভূত হলে ১০ থেকে ১২টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিন উপকার পাবেন। সুস্থ মানুষ যদি দিনে ১০-১২ টি তুলসী পাতা চিবিলে স্ট্রেস মুক্ত থাকবে।

প্রসাব জনিত জ্বালাপোড়ায় :

তুলসী বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছল হয়। তুলসী বীজ ২-৩ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর একটু চিনি মিশিয়ে খেয়ে নিন। উপকার পাবেন।

এছাড়া মুখের ঘা, দাঁতের যত্নে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে তুলসি পাতা। সাধারণত শারীরিক যে কোনো অসুস্থ্যতার জন্য দামি দামি ঔষুধ খেয়ে থাকি। এই দামি দামি ঔষুধে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই প্রাকৃতিক উপায়ও আছে। আমাদের প্রাকৃতিক উপায় গুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করা উচিৎ।