ব্লাকহেডস দূর করার কিছু প্রাকৃতিক উপায়।

মুখের সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল ব্ল্যাকহেডস। ব্ল্যাকহেডস ছেলে ও মেয়ে উভয়ের হয়ে থাকে। সাধারণত নাক বা নাকের আশপাশে ও ঠোঁটের নিচে বেশি দেখা যাই। কারণ মুখের অন্যান অংশের তুলনায় নাকের তেল গ্রন্থি বেশি সক্রিয়।

এছাড়াও সারা মুখে ও কপালে হয়ে থাকে। এগুলো আর কিছুই না, তেল-ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া ত্বকের ছিদ্র এবং মৃত কোষের সমষ্টি, বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে তা কালো হয়ে যায়।

আমাদের স্কিনের লোমকূপ (পোরস) গুলোতে প্রতিনিয়তই ময়লা জমে। কিন্তু এই ময়লা ঠিক মতো পরিষ্কার করা না হলে এর উপর আরও বেশি তেল ময়লা জমতে থাকে। ফলে এক সময় তা বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে ব্ল্যাকহেডস এর রূপ নেয়।

শুরু থেকে সচেতন না হলে এটি স্থায়ীই হয়ে যায়, অপরিচ্ছন্ন করে তোলে আপনার স্কিন। সাধারণত আমাদের কপাল ও নাকে তেল্গ্রন্থি গুলো মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি সক্রিয় থাকে। তেল নিঃসরণ বেশি হওয়ায় ধুলোবালি জমে ব্ল্যাকহেডস হয়ে যায়।

ব্ল্যাকহেডস হলে স্কিন তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়, হয়ে পড়ে অমসৃণ। এমনকি ঐ স্থানে মেকআপ করলেও তা ঠিকমতো বসতে চায় না। যেকোনো বয়েসে ধুলাবালির আক্রমণে ব্ল্যাক হেডস হতে পারে। মূলত হরমোন পরিবর্তন, ভালো ভাবে মুখ পরিষ্কার না রাখলে, অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যাবহার করলে ব্ল্যাকহেডস হতে পারে।

ব্ল্যাকহেডস দূর করার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় :

অনেকে নখ দিয়ে চেপে ব্ল্যাকহেডস বের করার চেষ্টা করেন, কেউ কেউ স্ট্রিপ লাগিয়ে তা তুলে ফেলেন৷ তবে তাতে ব্যথা লাগে, দাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে৷ অনেকে আবার ব্ল্যাকহেডস এর হাত থেকে বাঁচার জন্য পার্লারে যাই ফেসিয়াল করি, ঘরে নানা রকম দামী পণ্য ব্যবহার স্ক্র্যাবিং, ক্লিনিং ইত্যাদি কত কী করি।

এসব করতে গিয়ে অনেক সময় স্কিনের সমস্যা হতে পারে। আমরা খুব সহজেই প্রাকৃতিক উপায়ে ব্ল্যাকহেডস দূর করতে পারি। আসুন প্রাকৃতিক উপায় গুলো জেনেনি –

টুথপেস্ট:

টুথপেস্ট দিয়ে আমরা ব্রাশ করে থাকি কিন্তু এটা যে ব্ল্যাক হেডস দূর করতে কাজে লাগে সত্যই অবিশ্বাস্য। অনেকদিনের জমে থাকা ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার করা বেশ কঠিন ব্যাপার। আর একদিনে তা কখনও দূর হয়না। সেক্ষেত্রে সামান্য সাদা টুথপেস্ট নিয়ে ব্ল্যাকহেডস উপরে লাগিয়ে রাখুন ৫ মিনিট।

এরপর নরম একটি টুথ ব্রাশের সাহায্যে আস্তে আস্তে স্ক্রাব এর মতো করে ঘষতে থাকুন। ত্বকের মরা চামড়া উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে এটি ব্ল্যাক হেডস গুলোকে নরম করে ফেলে। ব্রাশ দিয়ে ঘষে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

তারপর ৫ মিনিট মুখে গরম পানির ভাপ দিন। এতে পোরস গুলো খুলে যাবে। এরপর আবারো ব্রাশ দিয়ে ঘষুন, দেখবেন খুব সহজেই ব্ল্যাক হেডস গুলো উঠে আসবে। প্রতি সপ্তাহে ১ বার করুন।

স্ট্রবেরি, মধু ও লেবুর রস:

একটি স্ট্রবেরি, আধা চা চামচ মধু আর আধা চা চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশান। তারপর সেটা ব্ল্যাকহেডসের উপর প্রলেপ দিন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

নারকেল তেল:

শুষ্ক ত্বকের জন্য নারকেল তেল আদর্শ। নারকেল তেল দিয়ে দুই-এক মিনিট ব্ল্যাকহেডসের উপর ম্যাসেজ করুন। মৃত কোষ ঝরে ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি মিলবে।

চালেরগুড়ো ও মধু:

ব্ল্যাকহেডস তুলতে চালের গুঁড়ো দারুণ কাজে লাগে। ২ চামচ চালের গুঁড়ো ও ১ চামচ মধু আর পরিমাণ মতো পানি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট লাগানোর পর হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বেকিং সোডা:

১ চামচ বেকিং সোডা আর ২ চামচ পানির পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ৫ মিনিট ধরে হালকা মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এটি স্কিনের ব্যাকটেরিয়া দূর করতেও সাহায্য করার পাশাপাশি ব্ল্যাকহেডস কমিয়ে আনে। অনেক সময় ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার হয়ে এলেও স্কিনের পোরস গুলো বড় থেকে যায়। এক্ষেত্রেও বেকিং সোডা চমৎকার কাজ করে।

মধু ও দারুচিনি:

বহু বছর ধরে রূপচর্চায় মধু ব্যাবহৃত আসছে। ব্ল্যাকহেডস শুষ্ক ত্বকেও হতে পারে। তাদের জন্য মধু আদর্শ। দারুচিনি গুঁড়ো আর মধু পরিমাণ মতো মিশিয়ে ব্ল্যাকহেডস এর উপর ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ২ মিনিট মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।

একই সাথে এটি ময়েশ্চারাইজার আর স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে। সপ্তাহে ২ বার ব্যবহারে ব্ল্যাকহেডস অনেকটাই কমে আসবে।

ডিম:

ডিমের ব্ল্যাকহেডস প্রাকৃতিক উপায়ে দূর করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশ খুব কার্যকরী। ডিমের সাদা অংশের সাথে কয়েকফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তারপর টিস্যু বা পাতলা কাপড় মুখে উপর আটকে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে কাপড় বা টিস্যু এক টান দিয়ে তুলে ফেলতে হবে।

এতে করে মুখ থেকে ব্ল্যাকহেডস (Blackheads) উঠে আসবে। ডিমের সাদা অংশে যে অ্যালবুমিন থাকে, তা ত্বকের ছিদ্রগুলিকে টাইট রাখে, ফলে ব্ল্যাকহেডস হয় না। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে এটি খুব উপযোগী।

অতিরিক্ত প্রসাধনী থেকে দূরে থাকুন। আলাদা গামছা বা তোয়ালে ব্যাবহার করুন। বিছানা ও বালিশের কাভার পরিষ্কার রাখুন। ব্ল্যাকহেডস, পিম্পল এসব কিছুর প্রকোপ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন। আপনার স্কিনের ধরন অনুযায়ী উপরের যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিন। নিয়মিত মুখ ধুয়ে পরিষ্কার রাখলে ব্লাকহেডস থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়।