ডেঙ্গুজ্বরে ডায়াবেটিস রোগীর সতর্কতা।

ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, মশা প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে সংক্রামিত করে এবং সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটায়। ডেঙ্গুর কারণে জ্বর হয় যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

যদি এটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ না করা হয় তবে এই জাতীয় রোগীদের মারাত্মক জটিলতা হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।

ডায়াবেটিস রোগী ও মারাত্মক ডেঙ্গু শব্দদুটি সমার্থক হয়ে উঠেছে। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীরা মারাত্মক শক সিনড্রোমের ঝুঁকিতে থাকে তাই প্রচুর তরল খাবার গ্রহণ এবং গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া উচিৎ যত দ্রুত সম্ভব।

ডায়াবেটিস রোগীর অতিরিক্ত গ্লুকোজের কারণে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়, ফলে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম।

যাঁদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো নয় (রক্তের গ্লুকোজ কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেশি) তাঁদের ডেঙ্গু জ্বর হলে ক্ষতির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।

রক্তের গ্লুকোজের তিন মাসের গড় বা এইচবিএওয়ান সির (HbA1c) মাত্রা বেশি থাকলে ডেঙ্গুর জটিলতার ঝুঁকি বেশি তা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।

ডেঙ্গু রোগের মৃত্যুর কারণ প্রধানত ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (ডিএসএস)। ডায়াবেটিসের রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাঁদের মৃত্যুহারও অনেক বেশি।

যদি কোনও ডায়াবেটিস রোগীর ডেঙ্গু হয় তবে সংক্রমণটি

  • দৃষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  • শরীরকে সেপটিক শক দিতে পারে এবং
  • বহু-অঙ্গ অকেজো হয়ে যেতে পারে।

ডেঙ্গুর এ মৌসুমে ডায়াবেটিসের রোগীরা যা মনে রাখবেন

ডেঙ্গুজ্বরে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার:

এখন ডেঙ্গুর সময়। আপনার এলাকার অনেকের ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে। আপনি একজন ডায়াবেটিস রোগী। তাহলে আপনাকে যে সতর্ক থাকতে হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

দিনের বেলা মশারি টানিয়ে ঘুমাবেন। ডেঙ্গু হলে যথেষ্ট পানি ও ফ্লুইড বা তরল পান করবেন, তবে ডায়াবেটিস থাকার কারণে চিনিবিহীন তরল খেতে হবে।

যেমন—চিনিবিহীন ফলের রস (তরমুজের রস, পাকা পেঁপের রস, বেদনার রস) খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, সুপ(চিকেন ও সবজির) ইত্যাদি।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জটিলতা অনেক:

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে আপনার হার্ট এবং রক্তনালীগুলি, চোখ, কিডনি, স্নায়বিক অবস্থা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট, মাড়ি এবং দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়াই শ্রেয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে জটিলতার ঝুঁকি কমে। খালি পেটে ৬ মিলিমোলের নিচে, খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮ মিলিমোলের নিচে এবং এইচবিএওয়ানসি(HbA1c) ৭–এর নিচে রাখাকে সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বলে।

শতাংশে HbA1c ফলাফল দেওয়া হয় :

সাধারন মাত্রা:

HbA1c এর মাত্রা ৫.৭% – এর কম।

Pre ডায়াবেটিস মাত্রা:

HbA1c এর মাত্রা ৫.৭% থেকে ৬.৪% এর মধ্যে।

ডায়াবেটিস রোগীর মাত্রা:

 ৬.৫% বা তারও বেশি মাত্রায় HbA1c থাকে।

আপনার যদি ডায়াবেটিস হয় তবে আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন আপনার HbA1c মাত্রা 7% এর নীচে রাখার পরামর্শ দেয়।

আপনার স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য, বয়স, ওজন এবং অন্যান্য কারণগুলির উপর নির্ভর করে আপনার জন্য অন্যান্য সুপারিশ থাকতে পারে।

ডেঙ্গুজ্বরে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়:

ডেঙ্গুজ্বরের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। এজন্য বলা হয় ডেঙ্গুজ্বরের কোনো চিকিৎসা নেই। রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা বলেছেন যে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ইনসুলিন থেরাপি ডেঙ্গুজ্বর চলাকালীন নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয় কারণ ওরাল ওষুধ, মেটফর্মিন এবং ডিপিপি -4 ইনহিবিটারগুলি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

ডেঙ্গু হলে অরুচি বেড়ে যায়, বমি হতে পারে, রোগী কিছু খেতে পারে না। তাই রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে।

ইনসুলিন বা মুখে খাওয়ার ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।

ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক হওয়া উচিত এবং যদি জ্বর কম না হয় তবে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে চিকিৎসককে সেই অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন করতে হবে।

ডাব্লুএইচও অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন নতুন কেস নিয়ে প্রায় আড়াই বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বাস করেন।

মানুষের জনসংখ্যার আকার তীব্র বৃদ্ধি পেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগের বোঝা অভূতপূর্ব অনুপাত অর্জন করেছে।