জিরা রক্তসল্পতা দূর করে এবং ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমায়।

আমরা জিরা নিয়ে কখনও ভেবে দেখেছি? এটা আমাদের চোখের সামনে থাকার পরও কেন জানি সবসময় আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। জিরা আমরা প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহার করে থাকি কিন্তু এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা আমরা জানি না।

মশলার মধ্যে প্রধান জিরা আর এটা ছাড়া রান্না অসম্পূর্ন থেকে যাবে। ডাল থেকে শুরু করে মাংস সব রান্নাতেই জিরা ব্যবহৃত হয়। জিভে পানি আনা সকলের প্রিয় আচারে জিরা তো লাগবেই। জিরা ফোঁড়ন, জিরা বাটা দুটোই রান্নার ঘ্রান ও স্বাদ বদলে দেয়।

দীর্ঘকাল ধরে ঔষুধে জিরা ব্যবহার করা হচ্ছে। আয়ুর্বেদেও এর স্বাস্থ্য উপকারীতা সম্পর্কে বলা আছে। জিরা হজমে সহায়তা করে, ওজন হ্রাস করে এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে রাখে।

জিরার স্বাস্থ্য উপকারীতা

জিরা ইংরেজিতে Cumin এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Cuminum cyminum. জিরা দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যগত ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে, জিরা ঐতিহ্যগতভাবে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং খাদ্যজনিত সংক্রমণ কমায়। নিচে জিরার স্বাস্থ্য উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

হজমে সহায়ক:

জিরা (cumin) আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

এটি হজম এনজাইমগুলির ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি করে হজমের গতি বাড়িয়ে তোলে। জিরা লিভার থেকে পিত্তের নিঃসরণও বাড়িয়ে তোলে। পিত্ত আমাদের অন্ত্রে চর্বি এবং কিছু পুষ্টি হজম করতে সহায়তা করে।

হজমে সমস্যা আছে ৫৭ জন রোগীর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে ঘন ঘন জিরা গ্রহণের পরে হজমে উন্নতি হয়েছে।

রক্তসল্পতা দূর করে:

একটু অবাক হলেও সত্য জিরা আয়রন সমৃদ্ধ। প্রতি ১ চা চামচ জিরাতে ১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।

বাচ্চাদের বৃদ্ধির জন্য এবং মহিলাদের মাসিক বা ঋতুস্রাবের সময় হারিয়ে যাওয়া রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপকারী উদ্ভিদ যৌগিক রয়েছে:

জিরাতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে। এগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, যা ফ্রি র‌্যাডিকালের ক্ষতির হাত থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করে।

ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমায়:

জিরাতে উপস্থিত কিছু যৌগ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে জিরা স্থূলকায় মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমাতে কাজ করে। জিরার মধ্যে এমন কিছু যৌগ আছে যা ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে:

ক্লিনিকাল স্টাডিতে দেখা গেছে জিরা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুবার ৭৫ মিলিগ্রাম জিরা গ্রহণ করায় রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড (অস্বাস্থ্যকর রক্ত) হ্রাস পেয়েছে। অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, দেড় মাস ধরে জিরার নির্যাস গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে “অ্যাসিডাইজড” খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা প্রায় ১০% হ্রাস পেয়েছিল।

ওজন হ্রাস করে:

ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা গেছে জিরা ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। ৮৮ জন স্থূলকায়ী মহিলাদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা ৩ গ্রাম দইয়ের সাথে জিরা মিশিয়ে খেয়েছে তাদের ওজন হ্রাস পেয়েছে।

খাদ্যজনিত অসুস্থ্যতা দূর করে:

জিরা সাধারণত খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খাবারে ব্যবহৃত জিরা, খাবারে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাসের প্রভাব এবং বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়। খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের প্রভাব কমানোর ফলে খাদ্যজনিত অসুস্থ্যতা হ্রাস পাই।

ঠান্ডা সারাতে কার্যকর:

সর্দি-কাশি সারানোর জন্যও জিরা খুব কাজে দেয়৷ এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷ এক চামচ জিরা ও আদাকুচি এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিন৷ তার পর সেটা ছেঁকে নিয়ে দিনে তিনবার পান করতে পারেন৷

কীভাবে জিরা পানি তৈরি করবেন

পানি ৪ কাপ, তেঁতুল ১ টেবিল চামচ, ভাজা জিরা গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, পুদিনা পাতা ২ টেবিল চামচ, ধনে পাতা ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, চিনি পরিমাণমতো, বিট লবণ ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো এবং বরফ পরিমাণমতো।

প্রথমে তেঁতুল পানিতে দিয়ে গলিয়ে নিতে হবে। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন তেতুল পানির এই মিশ্রণটি। তারপর সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিন। এবার অল্প পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ভালভাবে ব্লেন্ড করে নিন। পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন।

গ্লাসে ঢেলে বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন মজার পানীয় জিরা পানি। এটি আপনি ফ্রিজে রেখেও বেশ কয়েকদিন খেতে পারবেন।

রেফারেন্স: