জিরা পানি হজমে সহায়ক, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে।

যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন রোগের উপশমকারী উপাদান হিসেবে মানুষ জিরা পানি খেয়ে আসছে। এর পুষ্টিগুণও অনেক। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জিরা পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন, অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক প্রপাটিজ, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল রয়েছে।

জিরা পানি হজমে সহায়তা করে, ওজন হ্রাস করে এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে রাখে। দীর্ঘকাল ধরে ঔষুধে জিরা ব্যবহার করা হচ্ছে। আয়ুর্বেদেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বলা আছে।

জিরা পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা

ইংরেজিতে Cumin water বা Jeera water. নিচে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

হজমের জন্য:

বহু দিন ধরে জিরা পানি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি হজম এনজাইমগুলির ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি করে হজমের গতি বাড়িয়ে তোলে। হজমে সমস্যা আছে ৫৭ জন রোগীর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে ঘন ঘন জিরা পানি গ্রহণের ফলে হজমে উন্নতি হয়েছে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর উৎস:

জিরা পানিতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে। এগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, যা ফ্রি র‌্যাডিকালের ক্ষতির হাত থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে:

জিরা পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত জিরা পানি পান করতে পারেন।

রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে:

জিরা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুবার ৭৫ মিলিগ্রাম জিরা গ্রহণ করায় রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস পেয়েছে। অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, দেড় মাস ধরে জিরার নির্যাস গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা প্রায় ১০% হ্রাস পেয়েছিল।

ওজন হ্রাস করে:

ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা গেছে জিরা পানি ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। ৮৮ জন স্থূলকায়ী মহিলাদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা জিরা পানি খেয়েছে তাদের ওজন হ্রাস পেয়েছে। কারণ জিরার পানিতে ক্যালোরি অত্যন্ত কম। এক চামচ জিরাতে মাত্র ৭ ক্যালোরি থাকে।

স্থূলত্ব হ্রাস করে:

এক গবেষণায় দেখা গেছে ২ মাস ধরে দিনে ৩ বার জিরা পানি খাওয়ার ফলে ওজন হ্রাস পেয়েছে। চর্বিতে একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে, পাশাপাশি উন্নত ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং পেটের আকার হ্রাস পেয়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:

জিরার অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। জিরায় উপস্থিত আয়রন শরীরে প্রবেশ করার পর লহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতিও দূর করে।

ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমায়:

জিরা পানিতে উপস্থিত কিছু যৌগ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে জিরা পানি স্থূলকায় মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমাতে কাজ করে। জিরার মধ্যে এমন কিছু যৌগ আছে যা ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

শক্তি বাড়ায়:

জিরা পানি প্রাকৃতিক শক্তি বুস্টার হিসাবে কাজ করে। এতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা সারা দিন ধরে শরীরকে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে। তাই সারাদিন ধরে নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে জিরা পানি খেতে পারেন।

রক্তসল্পতা দূর করে:

একটু অবাক হলেও সত্য জিরা আয়রন সমৃদ্ধ। প্রতি ১ চা চামচ জিরাতে ১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। বাচ্চাদের বৃদ্ধির জন্য এবং মহিলাদের মাসিক বা ঋতুস্রাবের সময় হারিয়ে যাওয়া রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই রক্তসল্পতা দূর করতে আমরা জিরা পানি খেতে পারি।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:

রোজ ডায়েটের তালিকায় এই পানীয়টি রাখলে ত্বকের ভিতরের পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ত্বকের ভেতরে উপস্থিত টক্সিক বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে ত্বকের বয়স তো কমেই, সেই সঙ্গে সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়।

যেভাবে বানাবেন জিরা পানি

একটা পাত্রে পরিমাণ মতো পানি এবং জিরা নিয়ে কম করে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর পানিটা ছেঁকে নিয়ে তাতে অল্প করে মধু মুশিয়ে ঝটপট খেয়ে ফলতে হবে।