মেথি চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে করে, কৃমি কমে ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য উপকারী।

সারাদিনের কাজের জন্য শরীরকে তৈরি করতে এককাপ চায়ের নেশা তো সবার আছেই। বিভিন্ন ধরনের চা খেয়ে থাকি আমরা। তবে শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী হচ্ছে মেথি চা। তেতো স্বাদের কিন্তু খুবই তীব্র ও মিষ্টি একটা গন্ধ। এই ছোট্ট মেথির দানা হলো আসলে আস্ত একটা পুষ্টির পাওয়ার হাউস।

আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্য উপকারী উপাদানগুলির একটি সোনার খনি। ভেষজ-সংক্রামিত জলের শক্তি সন্দেহাতীত। মেথি দানা বীজ হল ভেষজ প্রতিকারের আয়ুর্বেদিক পুস্তকে দীর্ঘদিন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে।

মেথি পাতাতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়। কি ডায়াবেটিস রোগী বা কি হার্টের রোগী, অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওজন কমাতে এবং মেটাবলিসম বা বিপাকক্রিয়া বাড়াতে মেথি ভেজানো পানি বা মেথি চা খেয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তাই প্রতিদিন সকালের নাস্তায় খেতে পারেন মেথি চা।

মেথি চা খাওয়ার উপকারিতা

আসুন জেনে নিই মেথি চা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী-

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য:

গবেষণায় দেখা যায় যে, বুকের দুধ বৃদ্ধিতে মেথি একটি নিরাপদ প্রাকৃতিক বিকল্প। নতুন ৭৭ জন মায়েদের উপর ১৪ দিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেথি বীজের চা পান করায় বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা বাচ্চাদের ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। তাই বুকের দুধ বৃদ্ধিতে মেথি চা খেতে পারেন।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে:

সকালে নাস্তায় খেতে পারেন মেথি চা। ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে আগাম সাবধানতার জন্য এখন থেকেই শুরু করতে পারেন মেথি চা পান করা। কারণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে মেথি।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, টাইপ-1 ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিরা দুপুরের এবং রাতের খাবারে ৫০ গ্রাম মেথি বীজ গুঁড়ো করে খাওয়ার ১০ দিন পরে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য।

মাসিকের ব্যথা কমায়:

মাসিকের ব্যথা, এটা মেয়েদের একটি কমন সমস্যা। ঋতুস্রাবের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে মেথি চা। ঋতুস্রাবের বা মাসিকের সময় মেথি চা খেলে মাসিকের ব্যথা কমে যায়।

বাতের ব্যথা কমে:

ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর প্রতিবেদন অনুসারে মেথির ইস্ট্রোজেনের ওপরে প্রভাব এতটাই বেশি যে বর্তমানে ডাক্তারেরা মেথির ব্যবহারকে ইস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির সাথে তুলনা করছেন। মেথি বাতের তীব্র ব্যথা কমাতে ভীষণভাবে কার্যকর। তাই বাতের ব্যথা কমাতে মেথি চা খেতে পারেন।

কৃমি কমে:

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকাল বেলা পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে। তবে যারা মেথি চিবিয়ে খেতে পারে না বা মেথি ভেজান পানি পান করতে পারে না তারা মেথি চা খেতে পারেন।

যেভাবে বানাবেন মেথি চা

এক চা চামচ মেথি গুঁড়া করে নিন। তারপর এক কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে গুঁড়া করা মেথি মিশিয়ে দিন। স্বাদের জন্য এক চা চামচ মধু অথবা তুলসি পাতাও মেশাতে পারেন। তারপর ছেঁকে পান করুন স্বাস্থ্যকর মেথি চা।

সতর্কতাঃ

  • এটি তেঁতো ফলে অনেকের বমি বমি ভাব লাগতে পারে।
  • মেথি খেলে ব্লাড সুগারের পরিমাণ হঠাৎ কমে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে।
  • গর্ভবতী মহিলাদেরশিশুদের জন্য মেথি নিরাপদ না।

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।