সজনে পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।

সজনে গাছ এমন একটি উদ্ভিদ যা হাজার হাজার বছর ধরে তার স্বাস্থ্যের সুবিধার জন্য প্রশংসিত হয়ে আসছে। এই পাতায় স্বাস্থ্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং বায়োঅ্যাকটিভ প্ল্যান্ট যৌগ রয়েছে।

সজিনা গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা সজিনা পাতাকে বলে থাকেন নিউট্রিশন্স সুপার ফুড এবং সজিনা গাছকে বলা হয় মিরাক্কেল ট্রি।

প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন “সি”, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন “এ” এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে সজিনা পাতা কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন সময়ে ৬ টেবিল চামচ পাউডার একজন মায়ের প্রতিদিনের আয়রণ এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

ইংরেজিতে: Drumstick এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Moringa oleifera. সজনে সবজি হিসেবে খাওয়া হয় ও পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। নিরামিষ ভোজীরা সজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন।

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ

সজনে বিভিন্ন নাম পরিচিত যেমন ড্রামস্টিক ট্রি, horseradish tree বা ben oil। সজনে গাছের প্রায় সব অংশই ঐতিহ্যবাহী ভেষজ ওষুধে উপাদান হিসাবে খাওয়া বা ব্যবহার করা হয়। এই পাতা অনেকগুলি ভিটামিন এবং খনিজ এর উৎস। প্রতি এক কাপ তাজা পাতায়:

  • প্রোটিন: ২ গ্রাম
  • ভিটামিন বি-6: ১৯%
  • ভিটামিন “সি”: ১২%
  • আয়রন: ১১%
  • রিবোফ্লাভিন (বি 2): ১১%
  • ভিটামিন “এ” (বিটা ক্যারোটিন থেকে): ৯%
  • ম্যাগনেসিয়াম: ৮%

সজনে পাতা স্বাস্থ্য উপকারিতা

পশ্চিমা দেশগুলিতে, সজনে পাতা শুকিয়ে ক্যাপসুল আকারে পরিপূরক হিসাবে বিক্রি হয়। সজনে পাতা ভিটামিন “সি”-তে প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ। উন্নয়নশীল দেশগুলির মানুষের ডায়েটে কখনও কখনও ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিনের ঘাটতি হয়ে থাকে।

এই দেশগুলিতে, সজনে অনেক প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টির উৎস। নিচে সজনে পাতা স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে:

উচ্চ রক্তে সুগার একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। সময়ের সাথে সাথে উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা হার্টের রোগ সহ অনেকগুলি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করিয়ে দেয়। এই কারণে, শর্করার মাত্রা স্বাস্থ্যকর সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সজনে পাতা (মরিঙ্গা) রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করতে পারে। ৩০ জন মহিলার এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তিন মাস ধরে প্রতিদিন ১.৫ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া গ্রহণ করলে রক্তের শর্করার মাত্রা গড়ে ১৩.৫% হ্রাস পায়।

প্রদাহ হ্রাস করতে পারে:

সংক্রমণ বা আঘাতের জন্য দেহের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হল প্রদাহ। প্রদাহ দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। দীর্ঘ প্রদাহ হল হার্ট ডিজিজ এবং ক্যান্সার সহ অনেক দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে সজনে পাতা, সজনে ডাটা আইসোথিয়োকানেটস (isothiocyanates) সমৃদ্ধ। এটি একটি প্রদাহজনক যৌগ। টেস্ট-টিউব গবেষণার দেখা যায় যে, সজনে পাতা মানুষের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব ফেলতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

সজনে পাতা ভিটামিন “সি”-এর চমৎকার উৎস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভিটামিন “সি” এর কোন বিকল্প হয় না। তাই সুস্থ্য থাকতে, বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়তে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ সজনে পাতা রাখতেই হবে। প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন “সি” থাকে।

আর্সেনিক বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে পারে:

খাদ্য ও পানির আর্সেনিক দূষণ বিশ্বের অনেক বড় একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। উচ্চ স্তরের আর্সেনিকের দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজারের কারণে সময়ের সাথে সাথে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজার ক্যান্সার এবং হার্টের রোগের ঝুঁকির সাথে যুক্ত। সজনে পাতা এবং সজনে আর্সেনিক বিষের কিছু প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে।

আয়রনের চাহিদা পূরণ করে:

মানব শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের চাহিদা পূরণ করার জন্য সজনে পাতার কোন বিকল্প নেই। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে অর্থাৎ যারা রক্তসল্পতায় ভুগছেন তারা সহজলভ্য এই পাতা বেছে নিতে পারে। প্রতি এক কাপ তাজা সজনে পাতায় ১১% আয়রন থাকে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এমন যৌগ যা আমাদের দেহের ফ্রি র‌্যাডিকালগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে। উচ্চ মাত্রার ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণ হতে পারে যা হার্টের রোগ এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলির সাথে সম্পর্কিত। সজনে পাতায় বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে।

সজনে পাতায় ভিটামিন “সি” এবং বিটা ক্যারোটিন ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে, কোরেসেটিন এই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টটি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড: ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড খাবারের পরে রক্তে শর্করার মাত্রা মাঝারি করতে সহায়তা করতে পারে।

যাইহোক, সজনে পাতার একটি নেতিবাচকতা রয়েছে। এই পাতাতে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিন্ট্রিয়েন্ট থাকতে পারে যা খনিজ এবং প্রোটিনের শোষণকে হ্রাস করতে পারে।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স:

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: